বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) চাঁদপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম মিয়াজী।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালের ১০ জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত ১৩টি মাসিক সভা না করে প্রধান শিক্ষিকা নিজেই সভাপতিসহ কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে মাসিক রেজুলেশন তৈরি করেন।
তিনি চলতি বছরের শুরুতে বিদ্যালয়ের নতুন বই বিতরণের সময় ছাড়া অন্য কোনো আনুষ্ঠানিকতায় কমিটির কোনো সদস্যকে আমন্ত্রণ জানাননি।
কমিটির সহ-সভাপতি মনির শেখ বলেন, আমি বছরের প্রথম দিন বই বিতরণ ছাড়া আর কোনো সভায় যাইনি। আমাদের সভা কিংবা বিদ্যালয়ের কোনো কাজেই ডাকা হয়নি।
আরেক সদস্য ও বালিয়া মহিলা ইউপি সদস্য নুর জাহান বেগম বলেন, আমাদের রাজনৈতিক কোনো অনুষ্ঠান হলে ওই বিদ্যালয়ে যাওয়া হয়। কোনো সভার রেজুলেশন খাতায় আমি আজ পর্যন্ত স্বাক্ষর করিনি। আমার স্বাক্ষর কে দিয়েছে আমি বলতে পারব না।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি আহসান তালুকদার বলেন, আমার কাছ থেকে প্রধান শিক্ষিকা কোনো সভার বইতে স্বাক্ষর নেননি। তিনি আমাদের কোনো কাজে ডাকলে কখনও না করিনি। আমরা স্বাক্ষর না দেওয়া সত্ত্বেও কীভাবে তিনি আমাদের স্বাক্ষর জাল করলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
এ বিষয়ে জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। আমাদের সভাপতি এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, ফিরোজা খানম দীর্ঘদিন এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে থাকলেও বিদ্যালয়ের ফলাফল খুবই খারাপ। তিনি বিদ্যালয়ে সঠিক সময়ে আসেন না। আবার কোনো কোনো সময় ছুটির আগেই চলে যান। কমিটির লোকজন জিজ্ঞাসা করলে বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসে কাজ ছিল সেই জন্য আসতে দেরি হয়েছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম মিয়াজী বাংলানিউজকে বলেন, আমি সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধান শিক্ষিকা ফিরোজা খানম জাহান যখন যে কাজের কথা বলেছেন আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি সে কাজটি আন্তরিকভাবে করার। তিনি প্রতি মাসে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন উত্তোলনের জন্য স্বাক্ষর নিলেও রেজুলেশন বইতে স্বাক্ষর নেননি এবং প্রতি মাসে সভাও আহবান করেননি। তিনি এই বিদ্যালয়ে প্রায় ১৫ বছর প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সর্বশেষ সভার বইতে স্বাক্ষর করতে এসে আমি দেখি আমারসহ কমিটির সব সদস্যের স্বাক্ষর জাল করে তিনি ১৩টি রেজুলেশন তৈরি করেছেন।
তিনি আরো বলেন, সকল সরকারি বিদ্যালয় সরকারি নির্দেশনা মানলেও তিনি চলতি বছর জাতীয় শোক দিবস এবং বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন ও শোক দিবস উদযাপন সম্পর্কে আমাদের কোনো কিছুই জানাননি। এসব বিষয়ে যথাযথভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফিরোজা খানম জাহানের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সভাপতিকে না পাওয়ার কারণে আমি স্বাক্ষর জাল করে রেজুলেশন তৈরি করেছি। সভার জন্য আমি উনাকে ফোনে বলেছি। কিন্তু উনি ব্যস্ত থাকেন বলে সভা করতে পারিনি। বিদ্যালয় পরিদর্শনে সভার কার্যক্রম না থাকলে আমাকে জবাবদিহি করতে হবে, সেই জন্য আমি স্বাক্ষর জাল করে রেজুলেশন তৈরি করেছি। সভাপতি সভা আহবান করলে আসেন না, এ বিষয়ে আমি কয়েকবার উপজেলা শিক্ষা অফিসে জানিয়েছি।
এছাড়া অন্য বিদ্যালয় কারচুপি ও ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে ভাল ফলাফল করে বলে অভিযোগ করেন ফিরোজা খানম।
চাঁদপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাজমা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ৮৩ নম্বর পূর্ব সাপদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফিরোজা খানম জাহান কমিটির সভাপতিসহ সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে রেজুলেশন তৈরি করেছেন এমন একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম মিয়াজী। অভিযোগের আলোকে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, প্রধান শিক্ষিকা ফিরোজা খানম জাহান আমাকে মৌখিকভাবে বলেছেন সভাপতি তাকে বিদ্যালয় পরিচালনা কাজে তেমন সহযোগিতা করেন না। কিন্তু মাসিক সভায় হাজির হন না এমন কথা বলেননি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৯
আরএ