ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ, ভিসি বলছেন আন্দোলনে সরবেন না

জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৯
পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ, ভিসি বলছেন আন্দোলনে সরবেন না আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা, ছবি: বাংলানিউজ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ-মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে আন্দোলনের মুখে কোনোভাবেই পদ থেকে সরবেন না বলে জানিয়েছেন উপাচার্য।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টায় সমাজবিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গন থেকে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে মিছিল বের করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদিক্ষণ করে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আগামী ১ অক্টোবরের মধ্যে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেন আন্দোলনকারীরা। এছাড়া আসন্ন ভর্তি পরীক্ষায় সব ভবনে উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তারা।

শিক্ষক শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চের মুখপাত্র দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘আমরা উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়েছি, কারণ উপাচার্য উন্নয়ন প্রকল্পকে ব্যবসাক্ষেত্রে পরিণত করেছেন। উপাচার্যের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তার বিচার রাষ্ট্রীয় আইনে হতে হবে। আমরা আসন্ন ভর্তি পরীক্ষার সময় উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি। কারণ এ অভিযোগ ওঠার পরে আমাদের কর্মস্থলে আর উপাচার্যকে দেখতে চাই না। উপাচার্যকে ১ অক্টোবরের মধ্যে পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে তার পদত্যাগ নিশ্চিত করতে বাধ্য হবো। ’

দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘উপাচার্য একবার বলছেন ছাত্রলীগ তার কাছে চাঁদাবাজি করেছে। আরেকবার বলছেন চাঁদাবাজি করেননি। একজন উপাচার্য কোনোভাবেই এভাবে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিতে পারেন না। আমরা বারবার বলেছি উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কখনও বলিনি, আপনি দুর্নীতিবাজ। তবে আপনার কার্যক্রমের মাধ্যমে আপনি সেটা প্রমাণ করছেন। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। আপনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা ফৌজদারি আইনে বিচার হওয়ার যোগ্য। যার সঙ্গে আপনার সম্পৃক্ততা থাকলে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। ’

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উপাচার্যের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকে বলেছি, ছাত্রলীগকে প্রকল্পের টাকা দেওয়া হয়েছে তারা মানলেন না। যখন ছাত্রলীগ টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করলো তখন সেটাও মানলেন না উপাচার্য। একজন শ্রমিকের ট্যাক্সের টাকা ছাত্রনেতাদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারার করা হয়েছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। আমরা উপাচার্যকে জানাতে চাই সসম্মানে পদ ছেড়ে দেন। না হলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আপনার পদ ছাড়তে বাধ্য করবে। ’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দিদার বলেন, ‘সমগ্র রাষ্ট্রের জনগণ জেনে গেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এ অবস্থায় দেশের কেউ চায় না আপনি উপাচার্য পদে থাকুক।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন শিশির বলেন, ‘আমরা হুঁশিয়ারি জানিয়ে উপাচার্যকে বলতে চাই আমাদের আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই ক্ষমতা ছেড়ে নেবেন। না হলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে আপনার পদত্যাগ নিশ্চিত করা হবে। জাহাঙ্গীরনগর কখনও কোনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করে নি আর করবেও না। ’

তবে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম আন্দোলন কিংবা আল্টিমেটামে পদত্যাগ করবেন না বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করবো না। আমাকে যারা এ পদে বসিয়েছেন তারা চাইলে পদ ছেড়ে দেবো। তাছাড়া এ বিশ্ববিদ্যালয় তো শুধু আন্দোলনকারীদের নয়, আরও অনেকে আছে। তারা তো আর পদত্যাগ চাইছেন না। ’

তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি যদি নির্দেশ দেন তবে পদ থেকে সরে যাবো। যদি আমাকে নির্দেশ না দেন তবে আন্দোলনকারীদের ‘গালমন্দ’ খেয়েও থেকে যাবো। হয়তো তাদের আন্দোলন আরও দীর্ঘায়িত হবে, কিন্তু নির্দেশ আসা না পর্যন্ত আমি দায়িত্ব পালন করবো। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৯
ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।