ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

সবার আগে শিক্ষাখাতের দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯
সবার আগে শিক্ষাখাতের দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে

ঢাকা: অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। একাধারে শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ ও বিশ্লেষক। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এ অধ্যাপক ২০০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুই মেয়াদে আট বছর দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন।

সম্প্রতি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনৈতিক  কার্যকলাপের অভিযোগ উঠেছে। এসব আলোচনা এবং দেশের বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের গতি-প্রকৃতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে।

তার এ একান্ত সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রেজাউল করিম রাজা

বাংলানিউজ: সম্প্রতি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
 
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো কোথায় আমি জানি। তবে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলোর বিষয়ে পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে যতটুকু জানতে পেরেছি, তাতে বলা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে যারা আছেন,  তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই দূরত্বের ফলেই নানাবিধ সমস্যা দেখা দিচ্ছে। একজন শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যে সম্পর্ক সেটা বজায় থাকলে এমন সমস্যা হতো না। তবে এখন দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে যারা আছেন তাদের বিশ্বাস করছেন না, তেমনি প্রশাসনের লোকও শিক্ষার্থীদের বিশ্বাস করছেন না। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত করতে গেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। আলোচনার মাধ্যমে এসবের সমাধানও সম্ভব। বর্তমানে সমস্যা এতটাই গভীর হয়ে পড়েছে যে তৃতীয়পক্ষের মধ্যস্থতার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।  
 
বাংলানিউজ: বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এগুলো রোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
 
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে যদি কোনো ধরনের অভিযোগ দেখা দেয়, সেখানে মধ্যস্থতার কোনো সুযোগ নাই। সঙ্গে সঙ্গেই সুষ্ঠু তদন্ত করা দরকার। সেই তদন্ত হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকেও। তদন্তের মাধ্যমে দোষী যেই হোক না কেন, দোষীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান আরও কঠোর হতে হবে।
 
বাংলানিউজ: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগকে চাঁদা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একজন সাবেক উপাচার্য হিসেবে বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
 
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: কোনো শিক্ষার্থী তার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে কিংবা তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছে চাঁদা চাইবে এটা কল্পনাও করা যায় না। তারপরও বাস্তবতার নিরিখে এমন কোনো ঘটনা যদি ঘটেও থাকে, তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসেবে দেশের সরকারপ্রধান (সম্প্রতি) কঠিন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এভাবেই আমাদের দুর্নীতি প্রতিরোধে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।  
 
বাংলানিউজ: বর্তমান সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুরবস্থার জন্য ছাত্ররাজনীতির সঙ্কটকে দায়ী মনে করেন কি-না?
 
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: আমরা যারা প্রশাসনে আছি তারা অনেক সময় নিজেদের স্বার্থে ছাত্র-নেতৃত্বকে ব্যবহার করি। সে কারণে শিক্ষার্থীরা এবং ছাত্রনেতারা প্রশাসনকে পরোয়া করেন না। আবার প্রশাসন অনেক শিক্ষার্থীকে অপব্যবহার করে থাকে। যেমন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা ছাড়াই যখন কোনো ছাত্রকে ভর্তি করা হয়, শিক্ষার্থীরা তো আর নিজেরাই ভর্তি হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কোনো না কোনো জায়গা থেকে এই অনৈতিক সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। অনৈতিকভাবে ভর্তি হওয়া এই ছাত্রদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে অপব্যবহারও করা হবে- এটাই স্বাভাবিক। আর যেসব শিক্ষার্থী এ সুযোগ নিয়েছে, তাদের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদও করা সম্ভব না।
 
ছাত্র সংগঠনগুলো যদি অসৎ উদ্দেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালিত করে, তাহলে সেই ছাত্র রাজনীতি দিয়ে কোনো উপকার হবে না। বরং দেশের ক্ষতিই হবে বেশি। আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোর ইতিবাচক রাজনীতি করার প্রয়োজন আছে। ইতিবাচক ছাত্র রাজনীতি হোক দেশের ছাত্রদের শিক্ষার স্বার্থে, দেশের স্বার্থে। তাহলে শিক্ষাঙ্গনের অবস্থার অনেকটা উন্নতি হবে, দেশের উপকারও হবে।
 
বাংলানিউজ: শিক্ষাঙ্গন এবং সমাজের দুর্নীতি রোধে আপনার পরামর্শ কী?
 
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের শিক্ষিত সৎ এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার কাজ করে। সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই যদি অনৈতিক কাজ, দুর্নীতি এবং নিয়ম-নীতির বাইরে গিয়ে কাজ করা হয়, তাহলে যারা ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশকে, তারা কীভাবে সৎ এবং নীতিবান নাগরিক হয়ে উঠবেন? সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রেও দুর্নীতি এবং অনৈতিক কাজ হয়, তবে শিক্ষাক্ষেত্রের দুর্নীতি অগ্রাধিকারভিত্তিতে নির্মূল করতে হবে। দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বকে আমরা যদি সৎ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, তারাই ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করে গড়ে তুলবে।  
 
বাংলানিউজ: আপনাকে ধন্যবাদ।
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: বাংলানিউজকেও আমার পক্ষ থেকে অনেক ধন্যবাদ এবং শুভকামনা।
 
বাংলাদেশের সময়: ০৮৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯
আরকেআর/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।