তার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ করেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক ফাতেমা তুজ জিনিয়া। এরপর শিক্ষার্থীদের টানা ১২ দিন আন্দোলনের পর সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) উপাচার্য ড. নাসির উদ্দিন পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ফেসবুকে বিরূপ মন্তব্য করার অভিযোগে ভিসির নির্দেশে ১১ সেপ্টেম্বর জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার মুখে ১৮ সেপ্টেম্বর প্রশাসন তার বহিষ্কারাদেশ তুলে নিতে বাধ্য হয়।
এরপরের দিন ১৯ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীরা ভিসির বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগে আন্দোলন শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের টানা ১২ দিন অহিংস আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে ভিসি নাসিরউদ্দিন অধ্যায় শেষ হয়। এই ১২ দিনে শিক্ষার্থীরা ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অনশন, অবস্থান ধর্মঘট, ঝাড়ু মিছিল, মশাল মিছিল, মোমবাতি মিছিল মিছিল, প্রেস ব্রিফিং, ভিসির দুর্নীতি পোস্টার প্রদর্শনী, ভিসির ব্যাঙ্গাত্মক চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন।
জানা যায়, নিজ বাংলোতে বিউটি পার্লার করে প্রথম আলোচনায় আসেন ভিসি নাসিরউদ্দিন। এরপর তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। তার বাসায় থাকা এক নারী মাস্টার রোল কর্মচারী তার সন্তানকে ভিসির সন্তান বলে দাবি করেন। তখন ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে ভিসির বিরুদ্ধে। পরে ভিসির ক্যাডার বাহিনীর চাপে ওই নারী কর্মচারী সংবাদ সম্মেলন করে ভিসির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তুলে নেন। ভিসি পরবর্তীকালে ওই নারী কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী চাকরি দেন।
পাহাড়সম দুর্নীতির অভিযোগ থাকার পর অদৃশ্য ক্ষমতাবলে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পান ড. নাসির উদ্দিন। এরপর আরও বেপরোয়া ও স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন ভিসি নাসিরউদ্দিন। প্রথম মেয়াদেও তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছিল। আন্দোলন-সংগ্রাম ও হয়েছে। কিন্তু শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে একটি বলয় সৃষ্টি করায় কোনো আন্দোলন সংগ্রামেই তার কিছুই হয়নি।
দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পাওয়ার পর আরও বেপোয়ারা হয়ে ওঠেন তিনি। পান থেকে চুন খসলেই তিনি শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করেছেন। সিনিয়র শিক্ষকদের তার রুমে নিয়ে যা ইচ্ছে তাই বলেছেন। বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ডেকে এনে অপমান করতেও দ্বিধা করতেন না তিনি। যোগ্যতা না থাকার পরও তার মনোভাবাপন্ন শিক্ষকদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন। আর যোগ্য সিনিয়র শিক্ষকরা ছিলেন কোণঠাসা।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫২, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৯
আরএ/এনটি