মঙ্গলবার (০১ অক্টোবর) পূর্ব ঘোষিত আল্টিমেটামের শেষ দিনে ভিসি ফারজানা ইসলামকে লাল কার্ড প্রদর্শন করেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এদিন দুপুরে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার পাদদেশে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
কর্মসূচিতে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’র অন্যতম মুখপাত্র ও জাবি দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘কমিশন কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত উপাচার্য ও তার পরিবারকে আমরা লাল কার্ড দেখিয়েছি। এই উপাচার্য নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে যতগুলো যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে তার কোনোটার-ই বিচার না করে উল্টো ভুক্তভোগীকে হয়রানি করেছেন। এসব ঘটনার সবগুলোর সঙ্গে উপাচার্য জড়িত। ’
তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলনকে নানাভাবে দমানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থী নিপীড়নকারী, দুর্নীতিবাজ উপাচার্যকে আমরা লাল কার্ড দেখাচ্ছি।
এ সময় মঙ্গলবারের মধ্যে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন রায়হান রাইন। তিনি বলেন, আজকের (মঙ্গলবার) মধ্যে পদত্যাগ না করলে বুধবার ও বৃহস্পতিবার সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রশাসনিক কার্যক্রম, ক্লাস বন্ধ থাকবে। তবে পরীক্ষা এ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।
এ সময় জাবি দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) আল্টিমেটামের শেষদিন ছিলো, আমরা আপনাকে (ভিসি) যে সময় দিয়েছি তার মধ্যে পদত্যাগ করেননি। বিগত ছয় বছরে দুর্নীতি আর বিশৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে আপনি বিশ্ববিদ্যালয়কে শেষ করে দিয়েছেন। আপনার দুর্নীতির, অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে আজকে আমরা লালকার্ড দেখাচ্ছি। পাশাপাশি সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য যে টাকা দিয়েছে সে টাকা নিয়ে আপনি যা শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসম্মান বিক্রি করেছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। ’
‘আপনি বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিচালনা করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা এই ব্যর্থ, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাস ও নিপীড়নকারীদের মদদদাতাকে আর উপাচার্য হিসেবে দেখতে চাই না। আজকের মধ্যে আপনি পদত্যাগ না করলে যে কোনোভাবে আপনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে। ’
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আদীব আরিফ বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের সাথে তিনি অর্থ কেলেঙ্কারিতে লিপ্ত হয়েছেন এবং তার পরিবার সেসব কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।
‘আমরা বারবার বলেছি, বিচার বিভাগীয় তদন্ত করুন কিন্তু তিনি ভ্রুক্ষেপ করলেন না। আমরা আপনার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ আমলে নিয়ে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়েছি আপনি সেটাতেও কর্ণপাত করলেন না। ঘোষিত সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে আপনাকে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারণ করা হবে। ’
কর্মসূচিতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস ও অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সোহেল রানা, সম্মিলিত শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক আব্দুল জব্বার হাওলাদার, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, অধ্যাপক খবির উদ্দিনসহ জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট, ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জাবি শাখার নেতারা কর্মসূচিতে অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১৯
এমএ/