জানা যায়, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থীদের অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় গত ১৫ সেপ্টেম্বর। সেখানে নাজমা আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী কম নম্বর পাওয়ার অভিযোগ করে ২৯ সেপ্টেম্বর বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর ফলাফল পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন।
ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, তৃতীয় বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষা পর্যন্ত প্রথম থাকা ওই ছাত্রী ৫০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায় পেয়েছেন ২.৫০ যা ‘সি’ গ্রেড হিসেবে বিবেচিত হয়। যদিও প্রথম বর্ষে মৌখিক পরীক্ষায় তার নম্বর ছিল ৪ (এ+), দ্বিতীয় বর্ষে ৩.২৫ (বি) ও তৃতীয় বর্ষে ছিল ৩.৫০ (এ-)।
ছাত্রীর দাবি, মৌখিক পরীক্ষায় ছয়টি প্রশ্নের মধ্যে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ও লিখিত পরীক্ষাও ভালো হয়েছে। এছাড়া, ৪০৫ ও ৪০৭ নম্বর কোর্স দু’টির ইনকোর্স পরীক্ষায় ৪০-এর মধ্যে যথাক্রমে ৩৫ ও ৩৩ পেলেও ফাইনাল পরীক্ষায় এ ও এ- গ্রেড পেয়েছেন।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মনোবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্সে ‘মাস্টার্স ইন সাইকোলজি’, ‘মাস্টার্স ইন স্কুল সাইকোলজি’ ও ‘মাস্টার্স ইন ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাইকোলজি’ নামে তিনটি গ্রুপ রয়েছে। এসব গ্রুপের শিক্ষকেরা চান, নিজের গ্রুপে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করতে। কিন্তু, শিক্ষার্থীদের বড় অংশই মাস্টার্স ইন সাইকোলজিতে পড়তে আগ্রহী থাকে। ২০১৩-১৪ সেশনের ৮১ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬১ জন এই গ্রুপে পড়ার জন্য ‘চয়েস ফরম’ জমা দেয়। কিন্তু, বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাসরীন ওয়াদুদ অ্যাকাডেমিক কমিটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের তিন ভাগে ভাগ করে ফেলেন। ২০১৪-১৫ সেশনেও তৃতীয় বর্ষের ফলাফলের ভিত্তিতে মাস্টার্সের ভর্তি সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত অ্যাকাডেমিক কমিটিতে অনুমোদন হয়। তখন, শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের পছন্দের গ্রুপ না নিলে অনার্স পরীক্ষায় নম্বরে হেরফের করার আশঙ্কা করেছিলেন, যা গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, ‘মাস্টার্স ইন স্কুল সাইকোলজি’ ও ‘মাস্টার্স ইন ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাইকোলজি’ বাদ দিয়ে ‘মাস্টার্স ইন সাইকোলজি’তে ভর্তি হন নাজমা। পরীক্ষা কমিটি ও কোর্স সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা এই দুই গ্রুপের হওয়ায় তাদের বিরাগভাজন হন ওই ছাত্রী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, মৌখিক পরীক্ষায় বিভাগের তিন শিক্ষক ছাড়াও একজন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকেন। সেখানে শিক্ষকদের আলাদা করে দেওয়া নম্বর গড় করে ফলাফল তৈরি করা হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, এবারের মৌখিক পরীক্ষায় মাস্টার্সের তিন গ্রুপ থেকে তিনজন শিক্ষক ছিলেন। এরমধ্যে নাজমার গ্রুপ ছাড়া অন্য দুই শিক্ষক কত নম্বর দিয়েছেন, সেটা বের করলে পুরো বিষয়টি বের হয়ে আসবে।
অন্যদিকে, তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত ৩.৫৮ পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আমিনুল ইসলাম ফাইনাল পরীক্ষায় জিপিএ সর্বোচ্চ ৩.৮৯ পেয়েছেন। মাস্টার্সে স্কুল সাইকোলজি নেওয়া এ শিক্ষার্থী সিজিপিএ ৩.৬৭ পেয়ে প্রথম হয়েছেন। সেক্ষেত্রে, নাজমা ৩.৬৪ পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে যান।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক অধ্যাপক ড. মাহফুজা খানম বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। মেয়েটা ভাইভাতে খারাপ করেছে সে নিজেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে। সেটা অন্য শিক্ষকেরাও বলেছেন। আর মাস্টার্সের গ্রুপ নির্ধারণ করেছি সব পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর, শুধু ফলাফলটা বাকি ছিল। এসব অভিযোগ মিথ্যা।
ফেসবুক পোস্ট সম্পর্কে জানতে চাইলে নাজমা বলেন, আমি প্রতিবারই ভালো ভাইভা দিই। কিন্তু, এবার একটা প্রশ্ন পারিনি। এজন্য খারাপ লেগেছে। তাই ফেসবুকে এমনিতে পোস্ট দিয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৯
এসকেবি/একে