বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে শনিবার (০৫ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনা: অর্জন ও মানোন্নয়নে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর কল্যাণ সুবিধার অর্থ দ্রুত ছাড় করতে উপমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তব্য দেন শিক্ষকেরা।
অবসর কল্যাণ সুবিধা তহবিল নিয়ে উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী সেই ফান্ডের মধ্যে আরো টপ-আপ করেছেন যাতে দীর্ঘসূত্রিতা না থাকে। অবসর ও কল্যাণ ফান্ডের অর্থ পেতে দীর্ঘসূত্রিতা কমেছে।
‘আমি অবাক হয়ে গেলাম, তিনি সচিব মহোদয় এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন, এখন আর কতটুকু গ্যাপ আছে, অ্যাভারেজে কতটুকু দীর্ঘসূত্রিতা হয়? এভাবে একজন প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষকদের কল্যাণ-অবসরের পয়সা পেতে কত সময় লাগে- এতো চিন্তা, সাড়ে ষোল কোটি মানুষের মধ্যেও চিন্তা করছেন। আমরা এভাবে কখনও চিন্তা করতে পারিনি এভাবে তিনি কোনো শিক্ষকের কথা চিন্তা করেন। ’
তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন বোর্ডের যে পরিমাণ অর্থ আছে, সরকার একটা আইন পাস করেছে- সেখানে বলা হয়েছে এই সমস্ত ফান্ড নিয়ে যারা বসে আছেন, রাষ্ট্রের অর্থ রাষ্ট্রের কাছে যাবে।
অশিক্ষিত ব্যক্তির দাপট
অনুষ্ঠানে বরিশালের একজন অধ্যক্ষ তার কলেজ পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে বরখাস্ত করার বিষয়টি তুলে ধরলে উপমন্ত্রী তার জের টেনে বক্তব্য দেন।
ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, শিক্ষকদের যদি আমরা সঠিকভাবে মূল্য দিতে না পারি, তারা যদি সঠিকভাবে জ্ঞান চর্চা করতে না পারেন এবং অর্ধ শিক্ষিত বা অশিক্ষিত ব্যক্তির দাপট বা নির্দেশনা বেশি থাকলে সেখানে শিক্ষাদান এবং জ্ঞান চর্চার পরিবেশ কোনোভাবেই থাকবে না। অশিক্ষাই সেখানে বিস্তৃত হবে এবং নৈতিকতা ধংস হয়ে যাচ্ছে। তিনি কীভাবে নৈতিকতা শিখাবে, এটা বাস্তবতা।
শিক্ষকেরাই সফটওয়্যর
তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে শিক্ষকদের আরো কীভাবে দক্ষ করা যায় তা তুলে ধরে শিক্ষকদের সফটওয়্যারের সঙ্গে তুলনা করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী।
তিনি বলেন, অবকাঠামোগুলো সব হার্ডওয়্যার। চাইলে আমরা হার্ডওয়্যার তৈরি করে দিতে পারি। কিন্তু এই হার্ডওয়্যার চালাবে কে? হার্ডওয়্যার চালানোর সফটওয়্যার আমাদের শিক্ষকেরা। সফটওয়্যার ঠিকভাবে না চললে হার্ডওয়্যার সঠিকভাবে কাজ করবে না। সফটওয়্যার ভালো না হলে হার্ডওয়্যার চলবে কীভাবে? এটাই বাস্তবতা। এজন্য শিক্ষকদের উন্নতমানের সফটওয়্যার হতে হবে।
শিক্ষকদের অবসরে যাওয়ার বিষয়ে উপমন্ত্রী বলেন, ৬০ বছরে তারা অনেক বিজ্ঞ হন। কিন্তু ওয়াইজ ব্রেনে যখন বিদায় নিতে হয়, এটা কোনোভাবে কাম্য নয়।
শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, কল্যাণ তহবিল এবং অবসর সুবিধা এবং পরিচালনা পর্ষদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে প্রস্তাব আহ্বান করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু দূরদর্শী ছিলেন বলে সাহস করে যুদ্ধ পীড়িত দেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হারানোর পর মাঝের কিছু সময় আমরা বিপথে গিয়েছিলাম, আমাদের দরিদ্রতাকে দেখিয়ে বিদেশে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে নিজের পকেট ভারি করার রাজনীতি হয়েছে।
‘এখন সেই রাজনীতি চলবে না। এখন আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই রাজনীতিকে বিদায় দিয়েছি। এ অবস্থায় আমাদের নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষকদের বড় ভূমিকার প্রয়োজন আছে। ’
প্রধানমন্ত্রীর কথা তুলে ধরে উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেছেন, যে সমাজে অনেক বড় বৈষম্য হয়েছে, অনেকে অনেকভাবে ধন সম্পদ অর্জন করেছে, যারা অনৈতিকভাবে করেছে এবং সম্পদের ব্যাপক বর্হিপ্রকাশ ঘটিয়ে এই বৈষম্যকে আরো বেশি প্রকাশ করবার যে ধৃষ্টতা দেখায়, রাজস্বে কোনো অবদান রাখে না কিন্তু বিলাসিতা করছে- এই সার্বিক অবস্থার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য (এমপি) তাহমিনা বেগম।
বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস) আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি এবং রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবদুর রশীদ।
বাকবিশিসে’র নির্বাহী সভাপতি সিরাজুল হক আলো, সহ-সভাপতি এবং অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি বক্তব্য রাখেন। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাকবিশিসে’র সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম ফারক।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৯
এমআইএইচ/এমএ