বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষকদের হলে থাকার জন্য কক্ষ বরাদ্দ থাকলেও কেউই হলে থাকেন না। হাতেগোনা দু-একজন ছাড়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই আবাসিক শিক্ষকদের চেনেন না! ঠিকমতো হলের অফিসে না আসা, খোঁজ না রাখাসহ দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ রয়েছে হলের বেশিরভাগ আবাসিক শিক্ষকের বিরুদ্ধেই।
রাবির বিভিন্ন হলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনবছর মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের আবাসিক শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হলে বর্তমানে ৪৫ জন আবাসিক শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে ছাত্রদের ১১টি হলে ২৭ জন ও ছাত্রীদের ৬টি হলে ১৮জন আবাসিক শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন।
এছাড়া ৬টি ছাত্রী হলে একজন করে সহকারী আবাসিক শিক্ষিকা আছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও শিক্ষক নন, বরং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের আবাসিকতা প্রদান, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, পত্রিকা কক্ষ, হল লাইব্রেরির দেখাশোনা, খেলাধুলা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন, হলের সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, হলের ডাইনিং-এ খাবারের মান পর্যবেক্ষণ এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার দায়িত্ব থাকে আবাসিক শিক্ষকদের।
তবে বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আবাসিক শিক্ষকরা ঠিকমতো হলে আসেন না। রাতে হলে থাকার জন্য কক্ষ বরাদ্দ থাকলেও তারা দিন-রাত কোনো সময়ই হলে থাকছেন না। হলগুলোতে কয়জন আবাসিক শিক্ষক থাকেন, সে বিষয়ে শিক্ষার্থীরাও অবগত নয়। একইভাবে শিক্ষার্থীদেরও চেনেন না আবাসিক শিক্ষকেরা।
হলের ডাইনিংয়ের খাবার মান পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব থাকলেও সেদিকেও যেন কোনো নজর নেই তাদের। শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়ার কথা থাকলেও তারা হলের বিষয়ে কোনো তথ্যই রাখছেন না। এই সুযোগে অবৈধ সিট দখল, সিট বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও চুরির মতো ঘটনা আবাসিক হলগুলোতে ঘটে চলেছে নিত্যদিন। আর হল প্রশাসনের দায়িত্বে গাফিলতির মোক্ষম সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাবির আবাসিক হলগুলোতে বর্তমানে প্রশাসনের সমান্তরাল হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, হলে আবাসন, স্বাস্থ্যকর খাবারসহ অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিভিন্ন সময়ে হলে মারামারিসহ নিরাপত্তা সংকটের সৃষ্টি হয়। আবাসিক শিক্ষকরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করলে এসব সমস্যা এড়ানো যেত। এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রের অভিযোগ ছাত্রদের হলে আবাসিক শিক্ষকদের থাকার জন্য কক্ষ বরাদ্দ থাকলেও কেউই হলে থাকেন না। কেবল শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলেই নয় বর্তমানে রাবির প্রায় প্রতিটি হলেরই একই অবস্থা। রাতে আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের কোন সমস্যা হলে তা দেখার কেউ থাকে না।
আবার কোন কোন হলে আবাসিক শিক্ষকদের কক্ষে ছাত্ররা থাকছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ করা ১৫ নম্বর কক্ষে দু’বছরের অধিক সময় ধরে ছাত্ররা থাকছেন। অথচ রাবি প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
আবাসিক শিক্ষকেরা বলছেন, হলের অফিসগুলোর কোনো নীতিমালা নেই। হলে কয়েকজন আবাসিক শিক্ষক থাকেন তাই তারা রুটিন ভাগ করে যান। এছাড়া কোনো সমস্যার সৃষ্টি হলে সার্বিক বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেন। তাদের অভিযোগ, হলে শিক্ষকদের থাকার পরিবেশ নেই। শহীদ জিয়াউর রহমান হলে আবাসিক শিক্ষক ড. মো. ফারুক হোসেন বলেন, আবাসিক শিক্ষকদের হলে থাকার নিয়ম আছে কিনা আমার জানা নেই। তবে, যারা আবাসিক শিক্ষকের দায়িত্বে থাকেন তাদের অধিকাংশই বিবাহিত। পরিবার নিয়ে হলে থাকা সম্ভব না। নিয়ম থাকলে যারা অবিবাহিত তারা হলে থাকতে পারেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক রেজাউল করীম বকসি বলেন, হল প্রাধ্যক্ষ-আবাসিক শিক্ষক এসব খণ্ডকালীন দায়িত্ব। আবাসিক শিক্ষকদের হলে বিভিন্ন কাজের জন্য দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া আছে। রুটিন অনুযায়ী তারা দায়িত্ব পালন করেন। সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে একেকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে, সার্বক্ষণিক হলে কোনও আবাসিক শিক্ষক থাকেন না।
আবাসিক শিক্ষকদের হলে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, আবাসিক শিক্ষকদের জন্য কক্ষ বরাদ্দ থাকলেও হলে থাকার বাধ্যবাধকতা নেই। সব হলে তাদের থাকার জন্য কক্ষও নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব দিকে আবাসিক শিক্ষকদের জন্য একটি বাসভবন রয়েছে। সেখানে মাত্র ৮ জনের থাকার জায়গা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহ বলেন, আবাসিক শিক্ষকরা আগে হলে থাকতেন। তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটা উন্নত ছিল না। এখন হলে কোন সমস্যা হলেই তাৎক্ষণিকভাবে হল প্রশাসনকে জানালে তারা হলে গিয়ে ব্যবস্থা নিতে পারেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে হলের প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে মিটিং আছে। সেখানে আমি তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৯
এসএস/এএটি