চা-শ্রমিক জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকার তৃণমূল মানুষের মাঝে শিক্ষা বিকাশের ক্ষেত্রে চা-বাগানের বিদ্যালয়গুলো সরকারিকরণ করা হয়। কিন্তু প্রায়ই এসব স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনুপস্থিতি দেখা যায়।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে শ্রীমঙ্গল উপজেলার কাকিয়াছড়া চা-বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, উপস্থিত রয়েছেন মাত্র একজন শিক্ষিকা। বাকি তিনজন নানা কারণে অনুপস্থিত। বিদ্যালয়টির পশ্চিম পাশে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ চলছে।
তিন কক্ষবিশিষ্ট এ বিদ্যালয়ে উপস্থিত রয়েছে ২০ জন শিক্ষার্থী। এদের কেউ কেউ গল্প করছে, কেউ কেউ আবার এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছে। শিক্ষক নেই, তাই পড়াশোনাতে আগ্রহও নেই তাদের।
স্কুল সূত্রে জানা গেছে, কাকিয়াছড়া চা-বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষিকার সংখ্যা ৪। এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা যুথিকা দেবী। যিনি ১৮ মাসের ট্রেনিংয়ে আছেন। স্কুলে যোগদান করবেন ২০২০ সালের জানুয়ারিতে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্বে আছেন সালমা আক্তার। তিনি অসুস্থ। মাঝেমধ্যে স্কুলে আসেন। এর পরের শিক্ষিকার নাম পূরবী মুন্ডা। তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার পক্ষে উপজেলা শিক্ষা অফিসের বোর্ড মিটিংয়ে গেছেন আজ (মঙ্গলবার)।
সর্বশেষ শিক্ষিকার নাম শাওন বসাক শর্মী। তিনিই এখন সামলাচ্ছেন এই বিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম।
সূত্র আরও জানায়, এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা- শিশু শ্রেণিতে ১৮ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৩৪ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩২ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১৭ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ২৩ জন এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ১২ জন। অর্থাৎ মোট শিক্ষার্থী ১৩৬ জন।
বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকা একমাত্র শিক্ষিকা শাওন বসাক শর্মী বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের নতুন পাকা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। তাই আমরা অস্থায়ীভাবে এই ঘরে আশ্রয় নিয়েছি। অন্য শিক্ষিকাদের মধ্যে একজন ট্রেনিংয়ে, একজন অসুস্থ এবং আরেকজন মিটিংয়ে আছেন। সকালের দিকে অনেক শিক্ষার্থী ছিল। এখন কেউ কেউ বাড়ি চলে গেছে।
‘তোমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নিয়মিত স্কুলে আসে কি-না?’, পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রত্মা বিন এবং মিতু নায়েকের কাছে এমন প্রশ্ন রাখে বাংলানিউজ। এসময় তারা দু’জনেই হতভম্ভ হয়ে উপস্থিত থাকা ওই শিক্ষিকার দিকে তাকায়।
‘ম্যাডামের দিকে তাকাচ্ছো কেন? যা সত্যি তাই বলো,’ এমন অভয় দিলে তারা জানায়- প্রধান শিক্ষিকা মাঝেমধ্যে স্কুলে আসেন।
‘মাত্র একজন শিক্ষিকা দিয়েই চা-শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকায় শিক্ষা কার্যক্রম চালানো কীভাবে সম্ভব?’, এ প্রশ্ন করা হলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার এসএম জাকিরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, আসলে বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৯
বিবিবি/এসএ