ঢাকা, বুধবার, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২, ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৭

শিক্ষা

নানা আয়োজনে বিজয় দিবস উদযাপনে প্রস্তুত ঢাবি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩:৪৮, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯
নানা আয়োজনে বিজয় দিবস উদযাপনে প্রস্তুত ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা):  দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নেওয়া দেশ বাংলাদেশ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে সংগঠিত হয় এ মুক্তিযুদ্ধ। আর মুক্তিযুদ্ধ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) যেনো অনেকটাই সমার্থক।

দেশসেরা এ বিদ্যাপীঠের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রক্ত দিয়ে ভূমিকা রেখেছেন নয় মাসের এ সংগ্রামে। এছাড়া বিজয়ের আগমুহূর্তে ১৪ ডিসেম্বর তালিকা করে নৃশংসভাবে খুন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষকদের।

যারা জীবিত থাকলে স্বাধীন বাংলাদেশ পৌঁছে যেত অনন্য উচ্চতায়।  

বরাবরের মতো বিজয় দিবস উদযাপনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, ডাকসু, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও টিএসসিভিত্তিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

বিজয়ের প্রথম প্রহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ফানুস উড়িয়ে কর্মসূচীর শুরু  হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের পরিচালক মাহমুদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।  কর্মসূচির মধ্যে  ১৬ ডিসেম্বর (সোমবার) সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে উপাচার্য ভবনসহ প্রধান প্রধান ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। পরে সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জমায়েত হয়ে সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণের জন্য যাত্রা করবেন।

এছাড়া বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ছায়ানটের যৌথ উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মিলনায়তনে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে বিজয় দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসহ বিভিন্ন হল মসজিদে জোহরের পর শহীদদের আত্মার মাগফেরাত এবং দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নতি কামনা করে বিশেষ দোয়ার আয়োজন হবে। বিজয় দিবসে অন্য উপাসনালয়েও শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা ও দেশের সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ প্রার্থনা করা হবে।

বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) আয়োজন করছে বিশেষ বইমেলার। এছাড়া ডাকসুর সহযোগিতায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল মাঠে অনুষ্ঠিত হবে কনসার্ট। জেমস, চিরকুট, মমতাজসহ অন্য শিল্পীদের পরিবেশনায় কনসার্টটি দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে।

এদিকে বিজয় দিবসের প্রথম প্রহর উদযাপনে রোববার (১৫ ডিসেম্বর) রাত ১০টায় ‘রক্তে রাঙা বিজয় আমার’ অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করবে ‘আভাস’।

সার্বিক বিষয়ে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর বাংলানিউজকে বলেন, যে লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল স্বাধীনতার ৫০ বছরেও তা পূরণ হয়নি। যারাই ক্ষমতায় থেকেছেন, তারাই মানুষের বাক-স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সুস্থ ধারার রাজনৈতিক চর্চা এখনো গড়ে ওঠেনি। এজন্য আমাদের রাজনীতিবিদদেরও দায় রয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা তরুণরা আশা দেখতে চাই। তরুণদের নিয়ে আমরা সোনার বাংলাদেশ গড়তে চাই।

ডাকসুর এজিএস ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা চাই প্রতিটি তরুণ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে নিজেদের শাণিত করবে। সংবিধানের চার মূলনীতিকে ধারণ করবে। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে কোনো ধরনের আপোষ করবে না। দেশের সব রাজনৈতিক দল মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী হবে এবং সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশ বিনিমার্ণে ভূমিকা রাখবে।

প্রতি বছরের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি সংবাদপত্রে মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করছে। সমিতির সভাপতি রায়হানুল ইসলাম আবির বাংলানিউজকে বলেন, এবারের আলোকচিত্র প্রদর্শনীর শিরোনাম হচ্ছে ‘সাহসের জয়’। আমরা মুক্তিযুদ্ধকালীন পত্রিকাগুলোর দুর্লভ ছবি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করি। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম একাত্তরে সংবাদপত্রের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে পারবে।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন বলে জানান রায়হানুল ইসলাম আবির।  

বিজয় দিবসের আয়োজনে রোববার (১৫ই ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬ টায় ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি (ডিইউডিএস) বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পায়রা চত্ত্বরে আয়োজন করছে বিজয় দিবস প্ল্যানচ্যাট বিতর্ক। সেখানে প্রতীকীভাবে হাজির করা হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, থাকবে রাজাকারের নৃশংসতার গল্প, অভয় শোনাবেন ইন্দিরা গান্ধী, শহীদ রুমি শোনাবেন দেশপ্রেমের কথা, বীরাঙ্গনা বলবেন তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া পাশবিকতার কথা। সর্বশেষ ওঝার ডাকে নেমে আসবেন অসম্ভব আত্মপ্রত্যয়ী ও স্বাধীনতার নেপথ্য কান্ডারী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ। যেসব চরিত্রগুলো থাকবে সেগুলো হল- বঙ্গবন্ধু, ইন্দিরা গান্ধী, রাজাকার, বীরাঙ্গনা, তাজউদ্দীন আহমদ, মুক্তিযোদ্ধা, জহির রায়হান ও ওঝাঁ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে আলোকসজ্জ্বা।  ছবি: বাংলানিউজ

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্রই এখন বিরাজ করছে বিজয় দিবসের আমেজ। কার্জন হল, কলা ভবন, স্মৃতি চিরন্তন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ভবন, সামাজিক বিজ্ঞান ভবনসহ সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন এবং হলগুলোতে বিজয়ের রঙে রাঙাতে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। লাল, সবুজ, নীল রঙের আলোয় ছেয়ে গেছে গোটা ক্যাম্পাস। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান স্মৃতি চিরন্তন, স্বাধীনতা সংগ্রামসহ স্থাপনাগুলোতে নেওয়া বিশেষ সাজসজ্জা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র টিএসসিতে শোভা পাচ্ছে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত বিশালাকার জাতীয় পতাকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, সাম্য, মানবিক, ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে ওঠুক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার অতীত গৌরব ঐতিহ্য ধারণ করে আগামীতে আরও উচ্চ অবস্থানে যাক, বিজয় দিবসে এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৭  ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯
এসকেবি/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

শিক্ষা এর সর্বশেষ