জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
এর আগে, সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুনশি সাহাবউদ্দিন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গোলাম ফারুক, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হকসহ বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।
এবছর অষ্টম শ্রেণির জেএসসি-জেডিসিতে মোট পাসের হার ৮৭ দশমিক ৯০ শতাংশ, মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৮ হাজার ৪২৯ জন। গত বছরের থেকে জিপিএ-৫ বেড়েছে ১০ হাজার ৩৩৪ জন।
জেএসসিতে ঢাকা বোর্ডের পাসের হার কম হলেও পাসের হার বেশি নিয়ে এক প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা এমন শব্দ ব্যবহার না করি যেটা শুনে আমাদের এ শিক্ষার্থীরা কষ্ট পায়। আমরা নিজেরা যখন পড়াশুনা করেছি এখন কিন্তু বাচ্চাদের ওপর পড়ার চাপটা অনেক বেশি। আমরা সেটাকে আবার কমিয়ে অনেক বেশি আনন্দময় করার একটা প্রয়াস নিচ্ছি। এখন বাচ্চা, বাবা-মা, শিক্ষকরা অনেক কষ্ট করেন। সবার কষ্টের সমন্বিত ফল এটা, যেখানে ৮০ শতাংশের বেশি সেখানে এমন কোনো নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার না করি যাতে তারা মনে কষ্ট পায়।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, চতুর্থ বিষয়ের নম্বর গতবছর থেকে যুক্ত হচ্ছে না। আমার মনে হয় যত কম জিপিএ-৫ নিয়ে কথা বলি তত আমাদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য ভালো।
‘এই যে জিপিএ-৫ এর উন্মাদনা, এটি দিয়ে আমাদের শিশুদের, আমাদের শিক্ষার্থীদের পুরো শিক্ষা জীবনটাকে একেবারে নিরানন্দময় তো করছি, তার সঙ্গে বিষিয়ে দিচ্ছি প্রায়। তাদের ওপরে যে অবিশ্বাস্য রকমের চাপ পরিবারের দিক থেকে, বন্ধু-বান্ধবের দিক থেকে। জিপিএ-৫ জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হতে পারে না। ’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একটি বিভাগের পাসের হার অনেক, কিন্তু জিপিএ-৫ এর সংখ্যা হয়তো কম, এ পরীক্ষাটি অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা। সেই পরীক্ষাতে তারা পাস করছে এবং ভালো নম্বর পাচ্ছে। আমাদের দেখার বিষয় তো সেটাই হওয়া উচিত। জিপিএ-৫ এর জিনিষটা আসলে আমাদের মাথা থেকে বের করে দেওয়া উচিত। আমাদের শিক্ষার্থী শিখছে কিনা, আনন্দের সঙ্গে শিখছে কিনা, তারা নিজেদের যে সুপ্ত প্রতিভা আছে সেটি বিকশিত করা ক্ষেত্রে আমরা তাদের সহযোগিতা করতে পারছি কিনা- এ বিষয়গুলোই এখন মুখ্য হওয়া উচিত।
দীপু মনি বলেন, আমরা যে বিষয়গুলো এখন ধারাবাহিক মূল্যায়নে নিয়ে এসেছি, আগে এক সময় বাচ্চারা সেই কাজগুলো না করেই হয়তো নম্বর অনেক সময় যুক্ত হয়ে যেতো। এখন সেই সুযোগ থাকছে না। দিন দিন পদ্ধতিগত উন্নয়নগুলো করবো। সেখানে ভুল হওয়ার সুযোগ নেই।
আগামী বছরের অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষা থেকে গ্রেডিং সিস্টেম জিপিএ-৫ এর পরিবর্তে জিপিএ-৪ কার্যকর করার ইঙ্গিত দেন শিক্ষামন্ত্রী।
‘আমরা জিপিএ নিয়ে কাজ করছি, সারা দুনিয়াতে জিপিএ-৪ এর একটা ব্যাপার আছে, আর আমরা ধারাবাহিক মূল্যায়নের দিকে যাচ্ছি। হয়তো যে সমাপনী পরীক্ষাগুলো আছে বড় পাবলিক পরীক্ষাগুলো ছাড়া, সমাপনী পরীক্ষাগুলোতে আমরা পুরো গ্রেডিং সিস্টেম তুলে দিয়ে আর কীভাবে মূল্যায়ন করতে পারি, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কিছু দিক নির্দেশনা আছে। আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। ’
চলতি বছরের জেএসসি-জেডিসি থেকে জিপিএ-৪ কার্যকর করার কথা থাকলেও জিপিএ-৫ এর ভিত্তিতে ফল দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছিলাম এ বছর করতে পারি কিনা। কিন্তু মনে হলো যে এবছর করতে গেলে অনেক বেশি তাড়াহুড়ো হবে। তাড়াহুড়ো করে একটা বিষয় পরিবর্তন করা বোধ হয় সমীচীন হবে না। আমরা পুরোটা বিশ্লেষণ করে দেখি, আমরা হয়তো আগামী বছর (২০২০) থেকে শুরু করবো, আশা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯
এমআইএইচ/আরআইএস/