ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

একই ব্যক্তি পাচ্ছেন দুই পদের বেতন!

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২০
একই ব্যক্তি পাচ্ছেন দুই পদের বেতন!

লালমনিরহাট: ঘুষ না পেয়ে সহকারী শিক্ষকের বেতন বন্ধ করা লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সেই প্রধান শিক্ষকের 'অদৃশ্য সৃষ্টি' শিক্ষক ওয়াহেদ আলীর বিরুদ্ধে দুই প্রতিষ্ঠানে বেতন ভাতা ভোগ করার অভিযোগ উঠেছে। তবে একটির টাকা উত্তোলন করলেও অপরটি ব্যাংকে জমা রয়েছে।

সহকারী শিক্ষক ওয়াহেদ আলী লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নের দুলালী গ্রামের আব্দুস সোবহানের ছেলে। তিনি আদিতমারী উপজেলার কুমড়ীরহাট এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (বিজ্ঞান) এবং কালীগঞ্জ উপজেলার আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের মাঠ সহকারী পদে কর্মরত।

এলাকাবাসী ও তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলার কুমড়ীরহাট এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম কাজলের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে গত ১৬ জানুয়ারি 'ঘুষ না দেওয়ায় শিক্ষকের বেতন বন্ধ করলেন প্রধান শিক্ষক' শিরোনামে বাংলানিউজে সংবাদ প্রকাশের পর এলাকায় বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়। একে একে বেরিয়ে আসছে প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের চিত্র।  

২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে 'আমার বাড়ি আমার খামারে' মাঠ সহকারী হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলায় যোগদান করে নিয়মিত বেতন ভাতা পাচ্ছেন ওই উপজেলার দুলালী গ্রামের আব্দুস সোবহানের ছেলে ওয়াহেদ আলী। সেখানেই নিয়মিত অফিস করছেন তিনি। হঠাৎ গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর কুমড়ীরহাট এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের এমপিও তালিকায় সহকারী শিক্ষক পদে বেতন চলে আসে ওয়াহেদ আলীর। সব শিক্ষক যথারীতি অবাক হলেও প্রধান শিক্ষক বেশ উৎফুল্লই ছিলেন। তার ইনডেক্স নম্বর ১১৫৫১০০। যার সোনালী ব্যাংক আদিতমারী শাখার হিসাব নং ১০১৫৪৩৭। তবে এ শিক্ষকের ব্যাপারে মুখ খুলতে সবাইকে কঠোরভাবে নিষেধ করেন প্রধান শিক্ষক।

প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বেতন তালিকায় তিনি উল্লেখ করেছেন সহকারী শিক্ষক ওয়াহেদ আলী সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর মাসে ২৪ দিন করে বিদ্যালয়ে পাঠদান করেছেন। আবার একই ব্যক্তি কালীগঞ্জ উপজেলার আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পেও শতভাগ উপস্থিত থেকে বেতন ভাতা ভোগ করেছেন।  

তবে বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক ওয়াহেদ আলীর দাবি তিনি ওই বিদ্যালয়ে কখনোই পাঠদান করেননি। এমনকি তিনি যোগদানও করেননি। প্রধান শিক্ষক তার কাগজপত্র নিয়ে এমনটা করতে পারে বলে ধারণা করেন এ শিক্ষক। তিনি বলেন, আমি আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পে ৬ বছর ধরে চাকরি করছি। কোনো বিদ্যালয়ে যোগদান করিনি। সাম্প্রতিক সময় রাজশাহী বিভাগের একটি কলেজে জীব বিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে মনোনীত হয়েছি। তবে এমপিওভুক্ত হয়নি। কুমড়ীরহাট এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ে কিভাবে আমার নামে এমপিও এসেছে বা ব্যাংক হিসাব নম্বর তৈরি হয়েছে তার কোনো তথ্যই আমার জানা নেই। যারা এমপিওতে বেতন অনুমোদন দিয়েছেন তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক দাবি করেছেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর ভাই পরিচয় দিয়ে প্রধান শিক্ষক মনগড়া কমিটি তৈরি করে নিজের ইচ্ছামতো বিদ্যালয় পরিচালনা করছেন। নিজেই কাগজপত্র তৈরি করে ওয়াহেদ আলীর নামে এমপিও'র জন্য আবেদন করেছেন। এখন বেতন চলে আসছে সময় মত তিনি উত্তোলন করে আত্মসাৎ করবেন। আর জানাজানি হলে ভুয়া কাগজ তৈরি করে অদৃশ্য শিক্ষক ওয়াহেদ আলীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেখাবেন। সব কিছু প্রধান শিক্ষকের হাতের কারিশমা। তিনি টাকা হলে সবই করতে পারেন বলেও দাবি করেন তারা।  

কুমড়ীরহাট এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম কাজল বাংলানিউজকে বলেন, ওয়াহেদ আলী এ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন। তাই বেতনও তার নামে পৌঁছেছে। তবে এ প্রতিবেদক ওই শিক্ষককে ডাকতে বললে তিনি বলেন, ওই শিক্ষক আজ বিদ্যালয়ে আসেন নি। হাজিরা খাতা দেখতে চাইলেও তা দেখাননি প্রধান শিক্ষক।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, একই ব্যক্তি দুই প্রতিষ্ঠানে বেতন ভাতা গ্রহণের কোনো খবর তার জানা নেই। তবে বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ওয়াহেদ আলী মাঠকর্মী হিসেবে এ উপজেলার আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পে কর্মরত রয়েছেন। সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদানের বিষয়টি জানা নেই। একই ব্যক্তি দুই পদে পৃথক বেতন ভাতা গ্রহণের সুযোগ নেই এবং তা বিধি বহির্ভূত। খোঁজখবর নিয়ে একটি পদে অব্যাহতি পত্র না দেয়া পর্যন্ত বেতন স্থগিত করার আশ্বাস দেন তিনি।

নিউজ লিংক

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২০
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।