ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

‘সীমিত পরিসরে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত আসছে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২০
‘সীমিত পরিসরে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত আসছে’

ঢাকা: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান ছুটি আরও বাড়বে কিনা বা কোনো কোনো ক্লাসের জন্য সীমিত আকারে চালু হবে তা নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, কাল-পরশুই তা জানিয়ে দেওয়া হবে।
 
করোনাকালীন অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বিষয়ক জরিপের উপর বুধবার (১১ নভেম্বর) অনলাইনে এক আলোচনায় একথা জানান শিক্ষামন্ত্রী।


 
চলতি বছরে মার্চে দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দফায় দফায় ছুটি আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
 
গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছিলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে সিদ্ধান্ত দু’এক দিনের মধ্যেই জানাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
 
এ বিষয়টি নিয়ে অনলাইন আলোচনায় দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, উনি কেন দু’একদিন বলেছেন আমি অবশ্য জানি না।
 
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা এ মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ রেখেছি। ১৫ তারিখ থেকে খুলবে কিনা, নাকি এই ছুটিটি আরও বাড়বে নাকি কোনো কোনো ক্লাসের জন্য আমরা সীমিত আকারে শুরু করতে পারবো- এসব বিষয়গুলো নিয়ে এখনও কাজ করছি। ১৪ তারিখের আগে চেষ্টা করবো আপনাদের জানিয়ে দিতে। কারণ ১৪ তারিখের আগে তো আমাদের একটা সিদ্ধান্ত দিতেই হবে। কাল বা পরশুর মধ্যে আমাদের একটা সিদ্ধান্ত জানাতেই হবে। আজ জানাতে পারছি না।
 
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সংকটের মধ্যেও আমরা পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পেরেছি, চালিয়ে যাচ্ছি, অবশ্যই এটি আমাদের কোনো আদর্শ পরিস্থিতি নয়। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তার মধ্যে আমরা চেষ্টা করছি। এই চেষ্টাটি চালিয়ে যেতে হবে, এটিকে আরও কত ভালো করা যায়, কারণ করোনা কতদিনে যাবে, কতদিনে সত্যিকার অর্থে আমরা আসলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি খুলে দিতে পারবো, সে বিষয়গুলো কিন্তু এখনও বেশি অনিশ্চিত।
 
‘সামনেই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আছে, সেগুলো নিয়েও আমরা বিভিন্নভাবে ভাবছি যে কী করে তাদের পরীক্ষার আগে সিলেবাস পুরোপুরি শেষ করতে পারে, এসব নানান জিনিস আমরা ভাবছি। ’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়র একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নানা দিক থেকে ক্ষতি হচ্ছে। নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিতে অ্যাসাইনমেন্ট দিতে শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের স্কুলে নিয়ে আসা হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় এবার সীমিত পরিসরে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা হতে পারে।

বাংলাদেশ এডুকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের আয়োজনে অনলাইন আলোচনায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী এবং আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মোস্তফা মল্লিক ও সাধারণ সম্পাদক এসএম আব্বাস বক্তব্য রাখেন।
 
অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে জরিপ
ঢাকা, চট্টগ্রাম ও অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছে সরাসরি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। নগরভিত্তিক এই জরিপ কাজে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মেগা সিটি ঢাকা ও চট্টগ্রামকে। শিক্ষার্থীদের কাছে নির্ধারিত প্রশ্নের ফরম দেওয়া হয়, শিক্ষার্থীরা সেটি পূরণ করেছে। শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের তথ্য সমন্বয় করে উপস্থাপনের জন্য প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।     
 
চট্টগ্রামে ৪৯৬ ও ঢাকায় ৩৯৫ জন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নির্ধারিত প্রশ্ন করে উত্তর সংগ্রহ করা হয়েছে। অন্য বিভাগের ২৩৫ জন শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে বরিশাল ২০, খুলনা ২৬, ময়মনসিংহ ২৯, রাজশাহী ৮৫, রংপুর ৬৭ এবং সিলেট বিভাগের ৮ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
 
শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যে দেখা যায়, মাধ্যমিকে ৪২ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিকে ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রমে নিয়মিত অংশ নিচ্ছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে নিয়মিত অংশ নিচ্ছে মোট ৬৩ শতাংশ। আর অংশ নিতে পরেনি ৩৭ শতাংশ। ভিডিওর মাধ্যমে শিক্ষা নিয়েছে ৬১ শতাংশ, অংশ নেয়নি ৩৯ শতাংশ। ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে শিক্ষা নিচ্ছে ৩৫ শতাংশ, নেয়নি ৬৫ শতাংশ। অন্য মাধ্যমে (ইমেইল, হোয়াটসআ্যাপ, ভাইবার ইত্যাদি) শিক্ষা নিচ্ছে ২১ শতাংশ আর নেয়নি ৭৯ শতাংশ।
 
ইন্টারনেট ব্যয় ৫০১ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর। ইন্টারনেট ব্যয় ৭০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীর। স্মার্টফোন আছে ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর। স্মার্টফোন নেই ৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর।
 
অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে মন্তব্য করেনি ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। আর ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সহযোগিতা পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।  
 
শিক্ষকগণ যোগাযোগ করেছেন ৬৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর সঙ্গে। আর যোগোযোগ করেনি ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর সঙ্গে।
 
টেলিভিশন আছে ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর বাড়িতে, নেই ২ শতাংশ শিক্ষার্থীর। শহরে টেলিভিশনের চিত্র এমন হলেও গ্রামপর্যায়ে অসমাপ্ত জরিপ অনুযায়ী গ্রামে টেলিভিশনের সংখ্যা কম হবে বলে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে জানা যায়।  
 
সংসদ চ্যানেলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়, এটি জানে ৯৪ শতাংশ, আর জানে না ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। সংসদ চ্যানেলের অনুষ্ঠান দেখে ১১ শতাংশ, দেখে না ৮৯ শতাংশ। যারা দেখে তাদের মধ্যে উপকৃত হচ্ছে ৬৭ শতাংশ, উপকৃত হচ্ছে না ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী।
 
শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহায়ক, অনুশীলন বই বা সহায়ক পড়ে ৯৯ শতাংশ, পড়ে না ১ শতাংশ। করোনার সময়ে সহায়ক, অনুশীলন বই নিয়ে শিক্ষায় সহায়তা নিয়েছে ৯৮ শতাংশ, নেয়নি ২ শিক্ষার্থী।
 
করোনার কারণে পরিবারের ব্যয় কমেছে ৯৭ শতাংশ, কমেনি ৩ শতাংশ অভিভাবকের। শ্রেণি কার্যক্রম হয়নি তারপরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শতাভাগ ফি নিয়েছে ৯৩ শতাংশ, কিছুটা কম নিয়েছে ৭ শতাংশ। ৫০ শতাশং টিউশন ফি নিয়েছে ২ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
 
করেনার সময় ৯৯ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোচিং করায়নি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২০
এমআইএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।