ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

পতাকা বিকৃতি: অভিযুক্তরাই করলেন তদন্ত কমিটি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২০
পতাকা বিকৃতি: অভিযুক্তরাই করলেন তদন্ত কমিটি বিকৃত ‘পতাকা’ হাতে শিক্ষকরা, ইনসেটে সিন্ডিকেটের ৭৩তম বিশেষ সভায় তদন্ত কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন

রংপুর: মহান বিজয় দিবসে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) জাতীয় পতাকা বিকৃতভাবে প্রদর্শন ও অবমাননার অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ঘটনায় অভিযুক্তরাই তদন্ত কমিটি গঠন করায় উঠেছে সমালোচনার ঝড়।

এ তদন্ত কমিটিকে বয়কট করেছেন এ ঘটনায় থানায় অভিযোগকারী দুই শিক্ষক।

সোমবার (২১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকাস্থ লিয়াজু অফিসে সিন্ডিকেটের ৭৩তম বিশেষ সভায় তিন সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়। তবে কবে নাগাদ প্রতিবেদন জমা দিতে হবে তার সুনির্দিষ্ট কোনো সময় বেধে দেয়নি প্রশাসন।

কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল হক, সদস্য সচিব হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আতিউর রহমান এবং একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শারমিনকে সদস্য করা হয়েছে।

পতাকা বিকৃতি ও অবমাননায় প্রধান অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর সভাপতিত্বে ও আরেক অভিযুক্ত শিক্ষক যাকে ছবিতে বিকৃত পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে- আর এম হাফিজুর রহমান সেলিমের উপস্থিতিতে হওয়া সিন্ডিকেট সভায় তদন্ত কমিটি গঠন করায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অভিযুক্তদের মতামতের ভিত্তিতে গঠিত এ তদন্ত কমিটি মূলত তাদের দায়মুক্তি দিতে পারে বলে অভিযোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।  

বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবসে সবুজের মধ্যে লাল বৃত্তের পরিবর্তে চারকোণা লাল আকৃতির ‘পতাকা’ হাতে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কয়েকটি ছবি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। ছবিতে দেখা যায়, জাতীয় পতাকার নকশা পরিবর্তন করে সবুজের ভেতর লাল বৃত্তের পরিবর্তে চারকোণা আকৃতির লাল ‘পতাকা’ হাতে নিয়ে স্বাধীনতা স্মারক চত্বরে পোজ দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ তুলে পোস্ট দেওয়া হলে তা ভাইরাল হয়।

ছবিতে দেখা যায়- বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান, বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. পরিমল চন্দ্র বর্মন, অর্থ ও হিসাব দফতরের পরিচালক, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শামীম হোসাইন, ইতিহাসের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক সোহাগ আলী, মার্কেটিং বিভাগের সহকারি অধ্যাপক, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মাসুদুল হাসান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক রাম প্রসাদ, সহকারী অধ্যাপক কাইয়ুম এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রহমতউল্লাহ একটি বিকৃত পতাকা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন।

এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রংপুর জেলা প্রশাসন তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। ২২ ডিসেম্বর এ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন হলেও রাত ৯টা পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। এ ঘটনায় উপাচার্যসহ নয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে রংপুর মহানগর পুলিশের তাজহাট থানায় দু’টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

পতাকা অবমাননার মামলার প্রধান অভিযোগকারী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহামুদুল হক বলেন, পতাকা অবমাননার ঘটনায় এতো পরে তদন্ত কমিটি গঠন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বহীনতারই বহিঃপ্রকাশ। উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বেশ কয়েকজন পতাকা অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত। এমন অবস্থায় তদন্ত কমিটি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। বিচার প্রক্রিয়ার পুলিশি তদন্তসহ সব তদন্ত প্রভাবহীনভাবে করার জন্য পতাকা অবমাননার ঘটনায় অভিযুক্ত উপাচার্যসহ সব অভিযুক্ত শিক্ষককে প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানাচ্ছি।  

এ প্রসঙ্গে আরেকজন অভিযোগকারী বেরোবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বলেন, একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজেই তদন্ত কমিটি করে তার ধৃষ্টতার পরিচয় দেখালেন রাষ্ট্রকে। এটির মাধ্যমে অভিযুক্ত নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থাকে চরমভাবে অবমাননা করলেন। রাষ্ট্রের কাছে এর বিচার দাবি করছি। সেই সঙ্গে আমরা এ তদন্ত কমিটিকে পুরোপুরিভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।

সংশিষ্ট বিষয়ে জানতে উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।  

বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২০
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।