হবিগঞ্জ: অর্থ প্রদানে নিয়োজিত মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বদলের জন্য শিক্ষার্থীদের তথ্য হালনাগাদের কাজ চলমান থাকায় হবিগঞ্জ জেলায় ৯ মাস ধরে উপবৃত্তির টাকা পাচ্ছে না প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। আগামী ২৫ জানুয়ারি হালনাগাদের কাজ শেষ হওয়ার কথা।
বছরজুড়ে উপবৃত্তি পেয়ে অভ্যস্ত অভিভাবকরা ৯ মাস ধরে টাকা না পেয়ে অস্বস্তিতে আছেন। অনেকেই ধরে নিয়েছেন নয় মাসের টাকা এককালীন পেতে পারেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলছে, তথ্য হালনাগাদ সম্পন্ন হলে এক কিস্তিতে ৩ মাসের টাকা দেওয়া হবে। তবে বাকি ৬ মাসের টাকা কবে দেওয়া হবে সেটা বলা যাচ্ছে না। তা নির্ভর করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর।
হবিগঞ্জ জেলার ১ হাজার ৫৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫৩৬ জন। এর মাঝে বালক ১ লাখ ৭১ হাজার ৬২৮ ও বালিকা ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯০৮ জন। এদের সবাই মাসে ১৫০ টাকা হিসেবে ৩ মাস পরপর ৪৫০ টাকা করে উপবৃত্তি পায়। তবে এক পরিবারে একাধিক শিক্ষার্থী হলে তারা কিছু কম পেয়ে থাকে।
আগে উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হতো অর্থ প্রদানে নিয়োজিত মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান শিওর ক্যাশের মাধ্যমে। কিন্তু সরকার প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করে ‘নগদ’ এর মাধ্যমে উপবৃত্তি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ায় তথ্য হালনাগাদের কাজ চলমান। এজন্য গত বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ মাস ধরে অভিভাবকদের মোবাইল ফোনে টাকা পাঠানো হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর আগামী ২৫ জানুয়ারি তথ্য হালনাগাদের শেষ তারিখ। কিন্তু মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নগদের মাধ্যমে টাকা পেতে উপকারভোগী শিক্ষার্থীর তথ্য ফরমে দেওয়া অভিভাবকের মোবাইল নম্বরটি তার জাতীয় পরিচয়পত্রের আওতায় নিবন্ধিত হতে হয়। যে কারণে নির্দিষ্ট সময়ে পরিপূর্ণ তালিকা প্রণয়ন করতে প্রধান শিক্ষকরা দিনরাত কাজ করছেন। তবে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনও কাজ শেষ করতে পারেনি। বিদ্যালয় থেকে তালিকা সম্পন্ন করে দিলে এগুলো পুনরায় শিক্ষা অফিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাচাই-বাছাইয়ের পর সার্ভারে হালনাগাদ করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রধান শিক্ষক বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তার বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা পৌনে তিনশ’। অনেকেরই জন্ম নিবন্ধন নেই। উপকারভোগী শিক্ষার্থীর অভিভাবকের নামে সিম কার্ডও নেই। তাদের নামে সিম কার্ড কিনিয়ে সহকারী শিক্ষকদের সহযোগিতা নিয়ে তিনি দিন রাত পরিশ্রমের মাধ্যমে তালিকা প্রণয়ন করেছেন। তবে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে এখনও পর্যন্ত অর্ধেক কাজও করা সম্ভব হয়নি। ২৫ জানুয়ারির মধ্যে তা শেষ হবে কি না এনিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি।
তবে হবিগঞ্জের সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু জাফর মো. ছালেহ বাংলানিউজকে বলেন, জেলার ১ হাজার ৫৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরই তালিকা সম্পন্ন হয়েছে। এগুলো তার কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে দুই দফায় যাচাই-বাছাই হবে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের গত অর্থ বছরের তিন মাস ও চলতি অর্থ বছরের ছয় মাসের উপবৃত্তির টাকা বকেয়া পড়েছে। তালিকা হালনাগাদের পর তারা নগদের মাধ্যমে গত অর্থ বছরের তিন মাসের টাকা পাবে। তবে চলতি অর্থ বছরের বকেয়া পড়া ছয় মাসের টাকা কবে পাওয়া যাবে তা বলা যাচ্ছে না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর টাকা প্রাপ্তির বিষয়টি নির্ভর করছে।
বাংলাদেশ সময়: ০২০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২১
আরএ