ঢাকা: এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছরই শিক্ষার্থীদের আনন্দ ও উৎসবমুখোর পরিবেশ বিরাজ করতো। অন্যান্য বছরের মতো এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণাকে নিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে নেই কোনো উৎসব, নেই কোনো শিক্ষার্থীদের হৈ-হুল্লোড়।
করেনা মহামারির কারণে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। সরকারের সিন্ধান্ত অনুযায়ী এবছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় কোনো শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন নি। অটো পাস করে এবার শিক্ষার্থীরা পা রাখবেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে শিক্ষার্থীদের মনে পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে আনন্দ থাকলেও নেই কোনো উল্লাসের বর্হিঃপ্রকাশ। কারণ পরিশ্রমের তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে নিজেদের মেধা যোগ্যতা যাচাই করতে পারেনি। তাই শিক্ষার্থীদের আনন্দ ঘরে ঘরে থাকলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই কোনো উল্লাস ও হৈ-হুল্লোড়।
শনিবার (৩০ জানুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল-২০২০ এর জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষার্থীকে দেখা যায় নি।
উত্তরা রাজউক স্কুল অ্যান্ড কলেজে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রাঙ্গণটি নিরব ও সুনসান। অন্যান্য বছরগুলোতে এই প্রতিষ্ঠানটিতে ফলাফল ঘোষণার দিনটি হতো শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মিলন মেলা। পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে থাকতো শিক্ষার্থীদের হৈ-হুল্লোড়। অভিভাবকদের মুখেও দেখা যেতো আনন্দের হাসি। কিন্তু এবার এর কিছুই নেই। কোনো শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কেউই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসেননি। পুরো কলেজ ক্যাম্পাস শূণ্য। তবে ফলপ্রকাশের বিষয় নিয়ে শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন।
শনিবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সামনে ৭-৮ জন শিক্ষার্থী এসে জড়ো হয়েছিল। তারা উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখছেন এতে শিক্ষার্থীরা আনন্দিত। কিন্তু মেধা যাচাইয়ের সুযোগ পায়নি তার জন্য তাদের মনে কিছুটা কষ্টও কাজ করছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলেছেন, করোনার কারণে আমরা ঘরেই বসে ছিলাম। পরীক্ষা হবে কি হবে না সেই টেনশনে পড়াশোনা ঠিক মত হয়নি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতিও ঠিকমত নেওয়া হয়নি। আমরা এইচএসসিতে নিজেদের মেধা যাচাই করতে পারিনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা নেওয়া হোক এটা আমরা চাই। এতে যারা মেধাবী তারা নিজেদের যোগ্যতায় ভর্তি হতে পারবে।
শিক্ষার্থী তাহমিনা ইসলাম অথৈ বাংলানিউজকে বলেন, করোনার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো। আমরা পুরো সময়টা ঘরে বসে ছিলাম। এবার অটো পাস দেওয়া হয়েছে। পাসের হারও শতভাগ। তাই আমাদের মেধা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এই অটো পাস সম্পূর্ণ আন-ফেয়ার হয়েছে। যা হবার তা হয়েছে, এখন আমার ভাবনা-চিন্তা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে। আমরা চাই ভর্তির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাতে পরীক্ষা নেয়।
শিক্ষার্থী নাইমুল সাজাত রাতুল বাংলানিউজকে বলেন, করোনার মধ্যে পরীক্ষা হলে অনেক শিক্ষার্থী আক্রান্ত হতে পারতো। এতেও দেশের অনেক ক্ষতি হয়ে যেতো। সেক্ষেত্রে পরীক্ষা ছাড়া এবছর অটো পাস দেওয়া হয়েছে সেটা ঠিক আছে। এদিকে শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই হয়নি। তবে সব দিক পারফেক্ট হবে না। যা হয়েছে তাই মেনে নেওয়া ঠিক হবে বলে আমি মনে করি।
অটো পাশ করেছেন রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের শিক্ষার্থী আলভী আল শাহরিয়ার। তার মা শাহিনা জান্নাতুল ফেরদৌস লাভলী একজন শিক্ষিকা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সন্তানরা পরীক্ষায় পাস করেছে, এটা খুশির সংবাদ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা যদি সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয় তবে যারা মেধাবী তারাই যোগ্যতা অনুযায়ী চান্স পাবে।
মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে এবছর পরীক্ষা ছাড়া এইচএসসি ও সমমানের মূল্যায়নের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে।
শনিবার (৩০ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট থেকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ফলাফল ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে অনলাইনে ফলাফল ঘোষণা অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছেন। বেলা ১১টা থেকে ফলাফল অনলাইনে জানতে পারছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এমএ খায়ের জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এইচএসসি ও সমমানের ফলাফল ঘোষণা উপলক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমাবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফলাফল পাওয়া যাবে না। এবার ফলাফল অনলাইনে প্রকাশিত হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রে অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো ফল পাঠানো হবে না। কাজেই কোনো অবস্থাতেই ফলাফল প্রকাশের দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জমায়েত হওয়া যাবে না। অনলাইনের পাশাপাশি মোবাইল ফোনেও ফল পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২১
এসজেএ/এমআরএ