বরিশাল: সড়ক অবরোধ তুলে নিলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়।
এর ফলে টানা সাড়ে ৮ ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়েছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী অমিত হাসান রক্তিম জানান, প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে আমরা আমাদের তিন দফা দাবি পুনরায় তুলে ধরেছি। সেখানে দু’টি বিষয়ে আশ্বস্ত হলেও একটি বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি।
গত মঙ্গলবার রাতের হামলার ঘটনায় আমরা রূপাতলী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন শিপনসহ কয়েকজনের নাম বলেছি। যাদের নাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসেনর দায়ের করা মামলায় এখনো অন্তর্ভুক্ত হয়নি। কিন্তু তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত ও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি মামলায় হত্যার উদ্দেশে হামলা ও শিক্ষার্থীদের মালামাল ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো আনতে হবে। শিক্ষার্থীদের এ দাবির কথা বৈঠকে তুলে ধরা হলেও সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট সুরাহা দেয়নি কেউ। আমরা আশ্বাস নয়, মূল হামলাকারীদের গ্রেফতার চাই।
হামলায় আহত শিক্ষার্থী আলিম সালেহী বলেন, আমরা আজ সড়ক অবরোধ তুলে (স্থগিত) নিলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি চলবে। এছাড়া আগামীকাল ২১ শে ফেব্রুয়ারি হওয়ায় সড়ক অবরোধ কর্মসুচি থাকছে না। তবে ২১ শে ফেব্রুয়ারির পরে সড়ক অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি থাকবে কিনা তা পরবর্তীতে জানানো হবে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অন্যতম নেতা মাহামুদুল হাসান তমাল জানান, প্রশাসন অনেকটাই গা ছাড়া ভাব দেখিয়েছে সেজন্য আমাদের মৌলিক অধিকারের জায়গা থেকে আন্দোলন করতে হচ্ছে। আর সড়ক অবরোধের কারণে জনগণের যে ভোগান্তি হচ্ছে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। এছাড়া আমাদের কিছু করার নেই।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা বরিশাল মেট্রোপলিটনের উপ-পুলিশ কমিশনার মোকতার হোসেন জানান, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে যে মামলা করেছে তা তদন্ত করে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তে হামলার সঙ্গে জড়িত যাদের নামই আসবে তাদের গ্রেফতার করা হবে।
এ বিষয়ে উপাচার্য ড. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, শিক্ষার্থীরা যে দাবিগুলো করেছে তা মানা হয়েছে এবং হচ্ছে। আমি শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। তারা বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছে বলে মনে করছি। আশাকরি তারা ধৈর্য ধারণ করবে এবং প্রশাসনকে সহযোগিতা করবে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে রূপাতলী বিআরটিসি বাস কাউন্টারে মারধর ও লাঞ্ছিত করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে। এরপর রাতে রূপাতলী হাউজিং এলাকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মেসে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে পরিবহন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। এতে ১১ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলার প্রতিবাদ ও এ ঘটনায় মামলা দায়েরসহ হলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে গত বুধবার সকাল থেকে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। টানা সাড়ে ৮ ঘণ্টা পর প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা দায়েরের পর সে মামলা প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় গত শুক্রবার সড়ক অবরোধ ও মশাল মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। এরপর গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে পুনরায় ১৩ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় তারা।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২১
এমএস/আরবি