বরিশাল: গভীর রাতে হামলার সঠিক তথ্য তুলে ধরে মামলা এবং মামলায় নামধারীদের অন্তর্ভুক্ত ও তাদের গ্রেফতারের দাবির সঙ্গে এবারে হল খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অন্যতম নেতা অমিত হাসান রক্তিম ও মাহমুদুল হাসান তমাল।
মাহমুদুল হাসান তমাল জানান, মামলায় চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নাম অন্তর্ভুক্তি এবং রূপাতলী এলাকায় বসবাসরত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। তাই আমাদের আগের দাবিগুলো ঠিকই রয়েছে। ওই দাবি মানা না পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তবে রোববার রাতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবি করা হয়েছে।
অমিত হাসান রক্তিম জানান, গভীর রাতে হামলার সঠিক তথ্য তুলে ধরে মামলা এবং মামলায় নামধারীদের অন্তর্ভুক্ত ও তাদের গ্রেফতারের দাবিসহ সকল দাবি আদায়ে পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী সড়ক অবরোধ ব্যতীত আজ নানান ধরণের কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। সোমবারও এভাবেই আন্দোলনের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে, তবে মঙ্গলবার থেকে পুনরায় সড়ক অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে।
তিনি জানান, শিক্ষার্থীরা নিজেদের অনিরাপদ মনে করায় পূর্বের দাবিগুলোর পাশাপাশি নতুন করে হল খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। বিষয়টি এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। আর আজ শিক্ষার্থীদের একটা অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচে রাত্রিযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই কিছু শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান করছেন।
মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী সিয়াম জামান বলেন, অপরাধীরা এখনো গ্রেফতার হয়নি। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এখন আমাদের ভার্সিটির সামনে ছাড়া অন্য কোথাও নিরাপত্তা নেই। অন্য দিকে প্রশাসনও আমাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে হল খুলে দিচ্ছে না। বারবার অনুরোধ করার পরেও না। তাই আমরা গ্রাউন্ড ফ্লোরে অবস্থান করছি। এখানে রাত কাটানো ছাড়া উপায় নাই।
এদিকে গভীর রাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উপর হামলার বিচারের দাবিতে টানা ৫ম দিনের মতো নানা কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।
তবে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত রাখে তারা। কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার সকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
অবস্থান কর্মসূচির পর শিক্ষার্থীরা মুখে কালো কাপড় বেধে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে মৌন মিছিল বের করে সন্ধ্যা ৬টা এক প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
গত মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বরিশাল নগরের রূপাতলী এলাকার বিআরটিসি বাস কাউন্টারে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে মারধর ও ছাত্রী লাঞ্ছনার অভিযোগ ওঠে। এরপর ওইদিনই হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে কাউন্টার ভাঙচুর ও সামনের সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীকে পুলিশ গ্রেফতার করলে সড়ক অবরোধ তুলে নেয় তারা।
এরপর ওইদিন রাতেই রূপাতলী হাউজিং এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের মেসে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে পরিবহন শ্রমিক ও স্থানীয় ক্ষমতাসীন নেতাদের বিরুদ্ধে। এতে ১৩ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। পরদিন বুধবার ভোর থেকে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। ১০ ঘণ্টা পর প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করেন তারা।
হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা দায়েরের পর সেই মামলা প্রত্যাখান করলে পুনরায় শনিবার সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কারণে রোববার ও সোমবার সড়ক অবরোধ স্থগিত রেখে অবস্থান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩১ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১
এমএস/এমএইচএম