ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

সংবাদ সম্মেলনে তোপের মুখে বেরোবি শিক্ষকরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২১
সংবাদ সম্মেলনে তোপের মুখে বেরোবি শিক্ষকরা সংবাদ সম্মেলন। ছবি: বাংলানিউজ

রংপুর: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর অনিয়ম দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সদুত্তর দিতে না পারায় সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েন শিক্ষকরা।  

শনিবার (১৩ মার্চ) লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে সাংবাদিকদের সদুত্তর না দিয়েই সংবাদ সম্মেলন শেষ হয়।

এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাংবাদিক নেতারা।  

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। বক্তব্যের শেষে সাংবাদিকরা বিভিন্ন প্রশ্ন করলে তার সদুত্তর দিতে পারেননি আয়োজক শিক্ষকরা।

লিখিত বক্তব্যে ভিসির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের কথা উঠে আসলেও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা, সেশনজট, শিক্ষক সংকট, ক্লাসরুম সংকটসহ শিক্ষার্থীদের দুর্দশার কথা তারা কেন বলছেন না প্রশ্ন করা হলে তার সদুত্তর দিতে পারেননি। ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের পাঁয়তারার জন্য এত সব অভিযোগ কিনা জানতে চান সাংবাদিকরা।

এ সময় সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েন অধিকার সুরক্ষা পরিষদের নেতারা। প্রশ্নবানে জর্জরিত করেন রংপুরের সাংবাদিকরা। উত্তরাঞ্চলের এই স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নোংরামি বন্ধ না করলে রংপুরবাসী কাউকে ছাড় দেবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন সাংবাদিক নেতারা।  

রংপুরের এক সাংবাদিকের হাতেগোনা কিছু শিক্ষক বিভিন্ন ভিসির আমলে দুই ভাগ হয়ে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করেন। হাসিল না হলে ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন।
আপনারাও সেই দলের অংশ বলে অভিযোগ করে প্রশ্ন করেন, শুধু ভিসির বিরুদ্ধে এত অভিযোগ কেন? যারা সবসময় অনিয়ম করে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা হয় না কেন? প্রভৃতি প্রশ্ন করলেও তার সদুত্তর দিতে পারেননি শিক্ষকরা। এসময় হইচই শুরু হলে অনানুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন শেষ হয়ে যায়।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লিখিত বক্তব্যে অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক মতিউর রহমান বলেন, আমরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর অনিয়ম দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার শ্বেতপত্র প্রথম খণ্ড প্রকাশ করছি। এতে জনগণের টাকায় পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়টির নানান অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।  

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালযয়ের উপাচার্য বিভিন্ন সঙ্ঘবদ্ধ দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। ঢাকার লিয়াজোঁ অফিসে বসে একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আর্থিক অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, জালিয়াতি, ভর্তি বাণিজ্য, হয়রানি, নির্যাতন ও নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছেন।  

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তার মদদে তিনি এসব দুর্নীতি করে যাচ্ছেন।

মতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের উপ-উপাচার্য ডক্টর আবুল কাশেম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাবের হোসেন চৌধুরী, সুচিত্রা সেন এবং উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ তানভীর আবির প্রশিক্ষণ ও মিটিংয়ের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. হাসিবুর রশীদও এসব অনিয়মে যুক্ত রয়েছেন। আইন অমান্য করে তিনি ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ নিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের উপাচার্য এবং মা দুইজনে মিলে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের  বিভাগীয় প্রধান উপাচার্য নিজেই। উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি, অনুষদের ডিন হিসেবে তিনি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য আর বিভাগের প্রধান হিসেবে তিনি সদস্য, অপরদিকে তার মা বিশেষজ্ঞ সদস্য।

এছাড়াও আবুল কাশেম মজুমদারকে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগ বোর্ডের অন্তত ১০টি বোর্ডে সদস্য করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টতা দেখানো হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. শুচিতা শারমিনকে চারটি বিভাগে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য করা হয়েছে। উপাচার্যের পিএস আমিনুর রহমানের ভায়রা ভাই মাহমুদুল হককে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এক বছর না যেতেই সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাকে।

উপাচার্য তার ব্যক্তিগত সহকারী ভর্তি জালিয়াতির অপরাধে সিন্ডিকেটে সাজাপ্রাপ্ত আবুল কালামের স্ত্রী নুরনাহার বেগমকে সেমিনার সহকারী, মামাতো ভাই গোলাপ মিয়া, বন্ধুর ছোট ভাই হযরত আলীকে এমএলএসএস পদে এবং ফুফাতো ভাই কাওসার হোসেনকে সেমিনার সহকারী পদে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন।

আর্থিক দুর্নীতির বিষয়ে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকারি নীতি অনুসরণ না করে অনিয়ম-দুর্নীতি করা হয়েছে। পরিবহন পুলের সঙ্গে সংযোগ সড়ক নামে ইট বিছানো রাস্তা নির্মাণ দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকার দুর্নীতি করা হয়েছে। ইউজিসির বরাদ্দকৃত ৩৫ লাখ টাকার কাজকে ৮৫ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। যেখানে রাস্তা নির্মাণ করেছে মেসার্স ফল ভাণ্ডার নামে একটি প্রতিষ্ঠান।  

লিখিত বক্তব্যে উপাচার্যের আদালত অবমাননা, ঢাকাস্থ লিয়াজোঁ অফিসে অনিয়ম,  বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণে অনিয়ম, ধারাবাহিক অনুপস্থিতিসহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির কথা তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২১
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।