রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সব ধরনের নিয়োগের উপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই গণনিয়োগ দিলেন বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান।
বৃহস্পতিবার (৬ মে) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিষদ শাখার দফতর প্রধান সহকারী রেজিস্ট্রার মামুন অর রশীদ এ তথ্য জানান। তবে নিয়োগপত্রে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম স্বাক্ষর করেননি। রেজিস্ট্রার হিসেবে স্বাক্ষরের নির্বাহী আদেশ দেওয়া হয়েছে সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীকে। নতুন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরেই ১৪১ জন অ্যাডহকে নিয়োগ পেলেন। বৃহস্পতিবার নিয়োগ দেওয়া হলেও নিয়োগ আদেশের তালিকায় ও নিয়োগ পত্রে তারিখ রয়েছে বুধবার (৫ মে)।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অফিস আদেশে দেখা যায়, অ্যাডহকের মাধ্যমে ৯ জন শিক্ষক, ২৩ জন কর্মকর্তা, ৮৫ জন নিম্নমান সহকারী এবং ২৪ জন সহায়ক কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। উপাচার্যের নির্বাহী আদেশে সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।
নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকায় রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তান, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীও সাংবাদিক।
>>>রাবির বিদায়ী ভিসির ‘অবৈধ নিয়োগ’ তদন্তে কমিটি
নিয়োগের তালিকায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট, ১৯৭৩ এর ১২ (৫) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নিম্নলিখিত প্রার্থীদের তাদের নামের পাশে বর্ণিত পদ ও স্থানে অস্থায়ী ভিত্তিতে (অ্যাডহক) অনধিক ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেওয়া হলো। এ নিয়োগ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হোক। এছাড়া নিয়োগপত্রে বলা আছে, প্রার্থীদের নিয়োগ যোগদানের দিন থেকে কার্যকর হবে।
জানা যায়, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে উপাচার্যকে দেওয়া চিঠিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল নিয়োগ স্থগিত রাখতে বলা হয়। তবে উপাচার্য আব্দুস সোবহান দায়িত্বের শেষ দিনে হলেও নিয়োগ দিয়েই ছাড়বেন, এমন আশঙ্কায় গত কয়েকদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি প্রত্যাশীদের সঙ্গে বিরোধী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাধিকবার মুখোমুখি অবস্থান হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশি নিরাপত্তায় উপাচার্য এম. আব্দুস সোবহান ক্যাম্পাস থেকে ত্যাগ করেন। এসময় সাংবাদিকরা নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়োগ হয়েছে কিনা আপনারা পরে জানতে পারবেন। পরে বিকেলে উপাচার্যের ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
অব্যাহতির বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য সাবেক রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। আমাকে নানাভাবে অনৈতিক চাপ দেওয়া হয়েছিল। তাই আমি গত দুইদিন ধরে আত্মগোপনে ছিলাম।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি বিরোধী শিক্ষকদের মুখপাত্র অধ্যাপক সুলতানউল ইসলাম টিপু বলেন, এ নিয়োগের ফলে পরবর্তীতে যে প্রশাসন আসবে তাকে এর মাশুল দিতে হবে। ইউজিসি যদি এডহকের বেতন দিতে অস্বীকৃতি জানায় তখন ক্যাম্পাসে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হবে।
এদিকে, নিয়োগকে কেন্দ্র করে এদিন দুপুরে চাকরি প্রত্যাশী মহানগর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে অন্তত ৩ জন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিয়োগের গুঞ্জনে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান নেয় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও চাকরি প্রত্যাশীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহানগর ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী এসে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। পরে বেলা সোয়া ১২টার দিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাও কর্মচারীদের ওপর চড়াও হয়। এসময় পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ করে। পরে হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে যায়।
দুপুরে পুলিশি নিরাপত্তায় উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান বাসভবন ত্যাগ করেন এবং ক্যাম্পাস ছেড়ে বেরিয়ে যান। এর আগে, বাসভবনের সামনে থেকে উপস্থিত কর্মকর্তা, কর্মচারী, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। পরে উপাচার্য ভবনে চাকরি প্রত্যাশীরা প্রবেশ করে নিয়োগপত্র সংগ্রহ এবং যোগদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২১
এনটি