ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার স্থাপন আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক 

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৫ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২১
বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার স্থাপন আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক 

ঢাকা: বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার স্থাপন বেসরকারিকরণ বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করেছে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি (এপিইউবি)।

মঙ্গলবার (১১ মে) সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়।

এতে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে মোনাস কলেজ (অস্ট্রেলিয়া) স্টাডি সেন্টার, বাংলাদেশ স্থাপন ও পরিচালনার সাময়িক অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-১ এর উপসচিব মিসেস শামীমা বেগম স্বাক্ষরিত অনুমোদনকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস/স্টাডি সেন্টার পরিচালনার অনুমোদন দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ক্রমবিকাশমান উচ্চশিক্ষা খাতে ব্যাপক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে।   

বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস/স্টাডি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনার অনুমোদন প্রসঙ্গে একক নীতি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধি প্রণয়নের অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি (এপিইউবি) কর্তৃক ২০১৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) বরাবর পত্র দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস/ স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা-২০১৪ পুনঃমূল্যায়ন তথা সংশোধন ব্যতিরেকে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাভজনক শাখা ক্যাম্পাস/ স্টাডি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হবে না মর্মে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতিকে আশ্বস্ত করা হয়। অতঃপর ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস/ স্টাডি সেন্টার পরিচালনার আকর্ষিক অনুমোদন দেওয়া হয়। যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এবং বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস/স্টাডি সেন্টার পরিচালনা প্রজ্ঞাপন-২০১৪ এর বৈসাদৃশ্য এবং এর ফলে উচ্চশিক্ষা খাতে সৃষ্ট বৈষম্যগুলো হলো- বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ট্রাস্ট আইন-১৮৮২ অধীন অলাভজনক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস/ স্টাডি সেন্টারকে কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ এর অধীন লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন দেওয়ায় কথা উল্লেখ করা হয়েছে।  যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ৪৪ (৭) ধারা অনুযায়ী ‘কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিলের অর্থ উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় ব্যয় ব্যতিত অন্য কোনো উদ্দেশে ব্যয় করা যাইবে না’, অথচ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস/স্টাডি সেন্টার প্রজ্ঞাপন ২০১৪ এর বিধি ৭ (ঝ) অনুযায়ী উদ্বৃত্ত অর্থ-সম্পদ উদ্যোক্তা, স্থানীয় প্রতিনিধি ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আনুপাতিক হারে বণ্টন হবে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে।
 
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন, কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল গঠন, শিক্ষাথীদের জন্য কোটা ও বৃত্তি দেওয়া বাধ্যবাধকতাসহ নানা বিধি থাকলেও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস/ স্টাডি সেন্টার পরিচালনার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো বিধিমালা রাখা হয়নি।

বৈষম্যমূলক বিধির আওতায় সহজ শর্তে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লাভজনক শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনার অনুমোদন কার্যকর হলে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে। সম্ভাবনাময় অনেক বিশ্ববিদ্যালয় স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থীর বিপরীতে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিশাল অংকের ব্যয় মেটাতে গিয়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। এছাড়া উচ্চশিক্ষা খাতে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার রোধের বিপরীতে নিন্মমানের বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সর্বস্ব ক্যাম্পাস পরিচালনার মাধ্যমে সনদ বাণিজ্যের আশঙ্কা রয়েছে।  

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা খাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গত তিন দশক ধরে স্বল্প খরচে মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা দিয়ে আসছে। বর্তমানে বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সক্ষমতা ও মানের বিচারে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশি শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এসব ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য সরকারি সহযোগিতা বাড়ানো হলে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হবে।

বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস/ স্টাডি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনার বিভিন্ন বিধিমালা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং অলাভজনক উচ্চশিক্ষার নীতির পরিপন্থী। সার্বিক বিবেচনায় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস/ স্টাডি সেন্টার পরিচালনার অনুমোদন স্থগিত করতঃ দেশের উচ্চশিক্ষা খাতে বৈষম্যহীন একক নীতি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধি প্রণয়নের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২১
এমআইএইচ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

শিক্ষা এর সর্বশেষ