ঢাকা: বাংলাদেশের জাতীয় পাঠ্যক্রম ডিজিটালাইজ করে অনলাইন শিক্ষা সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করার মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করছে বাংলাদেশভিত্তিক শিক্ষাপ্রযুক্তি (অ্যাডটেক) স্টার্টআপ ‘শিখো’। শিক্ষাপ্রযুক্তির উন্নয়নে ১৩ লাখ মার্কিন ডলার ফাইন্যান্সিংয়ের সিড রাউন্ড শেষ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এই রাউন্ডে বিনিয়োগ করেছে সিলিকন ভ্যালি-ভিত্তিক অ্যাডটেক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ লার্ন ক্যাপিটালের সিড ফান্ড লার্নস্টার্ট এবং প্রাথমিক পর্যায়ের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম অ্যাঙ্করলেস বাংলাদেশ।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কেন্দ্রিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম ওয়েভমেকার পার্টনার্সের দেশে এটি প্রথম বিনিয়োগ। শীর্ষস্থানীয় আমেরিকান অ্যাডটেক টিচেবল’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আঙ্কুর নাগপালও এ রাউন্ডের ফাইনান্সিং এ অংশগ্রহণ করেন। এখন বৈশ্বিক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সহায়তার মাধ্যমে শিখো পণ্য ও সেবার মান উন্নয়নের পাশাপাশি উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন টিম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে।
শিক্ষার্থীদের জাতীয় বোর্ড পরীক্ষায় ভালো ফলাফলে সহায়তা করে, এমন সাশ্রয়ী ডিজিটাল রিসোর্স ও টুলসহ অ্যাকাডেমিক কোর্স প্রদান করছে শিখো। বাংলাদেশে বেড়ে ওঠা শিখো’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা শাহীর চৌধুরী (সিইও) এবং জিশান জাকারিয়া (সিওও) তাদের এক দশকের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় পাঠ্যক্রমকে একবিংশ শতকের উপযোগী করে তুলতে কাজ করছেন।
শাহীর চৌধুরী বলেন, দেশের ১৬ কেটি ৫০ লাখ মানুষের অর্ধেকই ২৫ বছরের নিচে হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষার্থী ও তরুণদের জন্য দেশে মানসম্পন্ন শিক্ষার অভাব রয়েছে। বিশ্বমানের আধুনিক শিক্ষার অভিজ্ঞতায় শিক্ষার্থীদের সুযোগ গ্রহণ নিশ্চিত করতে ডিজিটাল লার্নিং ইকোসিস্টেম গড়ে তুলছে শিখো। আমাদের এই নিরলস চেষ্টা আগামী প্রজন্মের ওপর দীর্ঘস্থায়ী ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আমরা মনে করি।
শিখোর মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী খুবই সহজে তার বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাযাত্রা সম্পন্ন করতে পারে। অ্যাপের মধ্যে অ্যানিমেটেড ভিডিওর মাধ্যমে বিষয়গুলোকে সহজভাবে ব্যাখা করা হয়েছে। সহজে বোধগম্য সমাধানসহ বিশাল প্রশ্নব্যাংকের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে অনুশীলনী। আরও রয়েছে সংজ্ঞা, সূত্র, প্রমাণ এবং বিভিন্ন ‘হ্যাক’ সম্বলিত স্মার্ট নোটস’ এবং অফলাইন কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষকদের সাথে লাইভ ক্লাসে অংশগ্রহণের সুযোগ। রিয়েল টাইম ডেটা অ্যানালিটিক্সের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পারফর্মেন্স ও অগ্রগতি ট্র্যাক করে অ্যাপটি প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিগতভিত্তিতে বিষয়ভিত্তিক দূর্বলতার ব্যাপারে পরামর্শ দেয়।
শিক্ষাপদ্ধতি অংশগ্রহণমূলক হলে এবং শিক্ষার্থীরা পরিষ্কারভাবে সকল বিষয় বুঝতে পারলে তারা ভালো ফলাফল অর্জন করে; এটি অনলাইন বা স্কুল ও টিউটরিং সেন্টার, সকল শিক্ষা পদ্ধতির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
শিখো’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিওও এবং যুক্তরাজ্য থেকে মাধ্যমিক শিক্ষাবিষয়ে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত জিশান জাকারিয়া বলেন, শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত একটি কার্যকর কৌশল হলো ‘মাস্টারি লার্নিং’। আমরাও উক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে টপিক ও সাব-টপিকে ভাগ করে কোর্সগুলো সাজিয়েছি। আমরা জানি, অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের শিক্ষার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে আমাদের ওপর আস্থা রেখেছেন।
শেখার অভিজ্ঞতাকে ‘গেমিফাই’ করে তোলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য আরও ফলপ্রসূ শিক্ষা প্রদানে আগ্রহী শিখো। শিখোর প্ল্যাটফর্মে অর্জিত পয়েন্ট এবং বিভিন্ন ডিজিটাল ব্যাজ অর্জনের সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করে- অনেকটা তাদের প্রিয় মোবাইল গেমের মতোই। এছাড়াও, এখানে লিডারবোর্ড রয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের স্কুলের বন্ধু ও প্ল্যাটফর্মের অন্যান্যদের সাথে বন্ধুশুলভ প্রতিযোগিতার পরিবেশে শিক্ষা অর্জনের এই প্রক্রিয়ায় উৎসাহিত বোধ করতে পারে।
এই নতুন বিনিয়োগের সাহায্যে শিখো নতুন ওয়েব প্ল্যাটফর্ম এবং অ্যাপ তৈরির কাজ করছে, যাতে ব্যবহারকারীরা মোবাইল ফোনের পাশাপাশি ডেস্কটপ ল্যাপটপের মতো বড় স্ক্রিনেও স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহারের অভিজ্ঞতা পাবেন। শিখোর প্রতিষ্ঠাতাদের একটি টিচার্স অ্যাকাডেমি’ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে, যার মাধ্যমে অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ এবং তাদের আরও প্রশিক্ষিত করে তোলা হবে যাতে করে তারা শিখো প্ল্যাটফর্মে শিক্ষার্থীদের দিক নির্দেশনা ও ফিডব্যাক প্রদান করতে পারেন। এছাড়াও ভবিষ্যতে দেশের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক, প্রফেশনাল লার্নিংসহ সম্পূর্ণ শিক্ষাযাত্রায় অবদান রাখতে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
শিখো’র প্রাথমিক পর্যায়ের বিনিয়োগদাতা সিলিকন ভ্যালি-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘লার্নস্টার্ট এবং এর ম্যানেজিং পার্টনার ডন বার্টন বলেন, আমরা সারা বিশ্বে প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিবর্তনের সম্ভাবনা প্রত্যক্ষ করেছি এবং বাংলাদেশের জন্য শিখো’কে একইভাবে কাজ করতে দেখে আমরা আনন্দিত। শিখো’র অত্যন্ত সুদক্ষ টিমকে সার্বিক সহায়তা প্রদানে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি বজায় রাখবো।
অ্যাঙ্করলেস বাংলাদেশ, দেশের অন্যতম সক্রিয় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী রাহাত আহমেদ বলেন, আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার তুলনায় বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রযুক্তির উন্নয়নের অনেক সুযোগ রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, শিখো টিম এই খাতে নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে উন্নতিসাধনে সক্ষম হবে।
এই রাউন্ডের বিনিয়োগ পাওয়ার পূর্বে, শিখো লার্নস্টার্ট ও অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টরদের কাছ থেকে প্রি-সিড ফান্ড হিসেবে ২ লাখ ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার বিনিয়োগ পায়। গুগল প্লে স্টোর থেকে শিখো অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে। এ সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে (shikho.tech) জানা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২১
এমআইএইচ/এমজেএফ