ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

এ কেমন শত্রুতা, স্কুল মাঠ ভরে লাগানো হয়েছে গাছ!

একরামুল কবীর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১
এ কেমন শত্রুতা, স্কুল মাঠ ভরে লাগানো হয়েছে গাছ!

গোপালগঞ্জ: এ যেন কমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শত্রুতা। কারণ স্কুলের খেলার মাঠে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে সারি সারি গাছ।

আবার সেই গাছ রক্ষায় বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে মাঠটি। ঘটনাটি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গোপালপুর পঞ্চপল্লী উচ্চ বিদ্যালয়ের।  

বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে মাঠ দখলের প্রতিবাদ ও দখলমুক্ত করার দাবিতে বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে স্কুলের সামনে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মাঠ উদ্ধারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। যাতে আগের মতো কমলমতি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা করতে পারে।

জানা যায়, ১৯৫৮ সালে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে পঞ্চপল্লী উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই থেকে স্কুলটি লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায় খ্যাতি ধরে রেখেছে। বর্তমানে স্কুলে প্রায় সাড়ে ৮০০ শিক্ষার্থী রয়েছে।  

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার বাড়ৈ বাংলানিউজকে বলেন, তৃতীয় দফা স্কুলের মাঠ বালু দিয়ে ভরাট করে উঁচু করার সময় স্থানীয় গোপালপুর গ্রামের উপেন্দ্রনাথ টিকাদার মাঠের জমি তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি দাবি তুলে বাধা দেন। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় বালু ভরাট কাজ শেষ করা হয়। কিন্তু ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলার দিন দেখা যায়, কে বা কারা স্কুলের মাঠে অস্থায়ীভাবে বেড়া দিয়ে মেহগনি ও কলাগাছসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগিয়ে দিয়েছে। পরে আমি খবর নিয়ে জানতে পারি উপেন্দ্রনাথ রাতের আধারে লোকজন নিয়ে স্কুলের মাঠ ভরে গাছ লাগিয়ে দিয়েছেন। এতে স্কুলের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারছে না।  

তিনি আরও বলেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি এ স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। এই স্কুলের মাঠটি টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সবচেয়ে বড় মাঠ। এখানে বিভিন্ন সময় উপজেলা পর্যায়ের ফুটবলসহ গ্রীষ্মকালীন খেলা হয়। আমার দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে কেউ এই জমি নিজেদের বলে দাবি করেননি। এর আগেও এই মাঠে বালু ভরাট করে উঁচু করা হয়েছে। তখন কেউ বাধা দেননি। আর এই মাঠের জমি স্কুলের নামে। স্কুল থেকে নিয়মিত এই জমির খাজনা পরিশোধ করা হয়।  
আমি বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছি। কিন্তু এখনও মাঠটি উদ্ধার হয়নি। তাই মাঠ উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

স্কুলের সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) দেশবন্ধু বিশ্বাস বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে আমি এই স্কুলে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি। সেই থেকে মাঠটি স্কুল কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করছে। এতো বছরে কেউ দাবি করেনি মাঠটি তাদের। এখন হঠাৎ করে জনৈক উপেন্দ্রনাথ টিকাদার মাঠ তাদের পৈতৃক সম্পত্তি বলে দাবি করেছেন। তিনি রাতে আঁধারে মাঠটি বেড়া দিয়ে ঘিরে গাছ লাগিয়ে দিয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের চিত্তবিনোদন ও খেলাধুলায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। তাই বিষয়টি আশু সমাধান হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।  

স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী মিষ্টি বাইন বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস ঘরবন্দি ছিলাম। প্রথম দিন স্কুলে এসে দেখলাম মাঠ দখল হয়ে গেছে। মাঠ শোভা পাচ্ছে সারি সারি গাছ। ভেবেছিলাম অনেকদিন পর স্কুলে এসে বন্ধবীদের সঙ্গে মাঠে ঘুরবো আর খেলাধুলা করবো। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি আমাদের মাঠটি যেন দখল মুক্ত করে দেওয়া হয়। যাতে আগের ন্যায় আমরা পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা করতে পারি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত উপেন্দ্রনাথ টিকাদার বলেন, মাঠটি আমার বাবা-দাদার পৈতৃক সম্পত্তি। স্কুলের নামে কিভাবে রেকর্ড হলো তা আমার জানা নাই। আমি মামলা করেছি কিন্ত আমার পক্ষে রায় আসেনি। আগে যখন বালু ভরাট করেছে তখন আমার পক্ষে লোকজন ছিলো না তাই বাধা দিতে পারিনি। এখনও আমার পিছনে লোকজন আছে তাই আমি বাধা দিয়েছি। স্কুল কর্তৃপক্ষ বলেছিল বিষয়টি সমাধান করে দিবে কিন্তু বালু ভরাট করা হলেও কোনো সমাধান না দেওয়ায় আমি বেড়া দিয়ে গাছ লাগিয়ে দিয়েছি।

স্থানীয় গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুষেন সেন বলেন, দীর্ঘ ৩০-৩৫ বছর ধরে এই মাঠটি স্কুল ব্যবহার করছে। এতোদিন কেউ বলেনি এটি তাদের। এখন বালু ভরাট করতে গিয়ে দেখলাম উপেন্দ্রনাথ টিকাদার মাঠটি তার দাবি করে বালু ভরাটে বাধা দেয়। আমি বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেছি। বিষয়টি বসে সমাধানের চেষ্টা করবো।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ জালাল বলেন, বিষয়টি প্রধান শিক্ষক আমাদের জানিয়েছেন। আমি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানাতে বলেছি। আশাকরি বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম জানান, প্রধান শিক্ষক মোবাইল ফোনে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ পায়নি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিষয়টি তদন্তে জন্য সরেজমিনে সহকারী কমিশনার ভূমি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও জমির দাবিদারের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে পরবর্তীকালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।