ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

পরীক্ষার হলে ৬ ফুট দূরত্ব, মেসে এক বিছানায় ২ জন!

তারিকুল ইসলাম, ইবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১
পরীক্ষার হলে ৬ ফুট দূরত্ব, মেসে এক বিছানায় ২ জন!

ইবি: প্রায় সাত মাস পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে আবাসিক হল বন্ধ রেখে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) সশরীরে অনার্স ও মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পূর্বের শিডিউল অনুযায়ী ওইদিন সাতটি বিভাগ পরীক্ষা নেয়।

এরপর থেকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে প্রতিদিনই বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষা নিচ্ছে বিভাগগুলো। পরীক্ষা শুরুর আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করে তারপর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাকক্ষে প্রবেশ করানো হচ্ছে। কক্ষে বজায় রাখা হচ্ছে শারীরিক দূরত্বও।

বেশ কয়েকটি বিভাগ জানিয়েছে, পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে পরীক্ষা নিচ্ছেন। তবে, বাইরের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর, ব্যাংক এবং পার্শ্ববর্তী মেসে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। বিভাগগুলো একের পর এক পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করায় মেসে তীব্র আবাসন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, পরীক্ষার হলে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় থাকলেও আবাসন সঙ্কটের কারণে সিঙ্গেল বেড দুইজনকে শেয়ার করতে হচ্ছে।


শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, পরীক্ষা কেন্দ্রে বর্তমান স্বাস্থ্যবিধি কার্যত শো-আপ ছাড়া কিছুই না। মেসে সিট সঙ্কটের কারণে দুইজনের রুমে চারজন, তিনজনের রুমে পাঁচজন অবস্থান করতে হচ্ছে। এক বাথরুম ১৫-১৬ জন ব্যবহার করছে। এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি থাকলো কই? আর পরীক্ষার হলে ৬ ফুট দূরত্বে বসিয়েই বা কী লাভ হলো। স্বাস্থ্যবিধি তখনই মানা সম্ভব হতো যদি, নিয়ম করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে পরীক্ষার্থীদের অবস্থান করার সুযোগ দেয়া হতো।
 
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর ৭টি বিভাগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে প্রতিদিন ১৪-১৫টি বিভাগের পরীক্ষা হচ্ছে। শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিলো ১৮টি। নতুন করে আরও পরীক্ষার শিডিউল করেছে বিভিন্ন বিভাগ। ফলে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী মেসে উঠছেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় স্মৃতি সৌধ, কুষ্টিয়া

বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর এক-তৃতীয়াংশ আগে থেকেই পার্শ্ববর্তী মেসে অবস্থান করতেন। এক-তৃতীয়াংশ থাকতেন ৮টি আবাসিক হলে। বাকি এক-তৃতীয়াংশ কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহরের মেসে অবস্থান করেন। হল বন্ধ থাকায় সেই এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর নতুন করে আবাসন সুবিধার প্রয়োজন হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের তুলনায় মেসের সংখ্যা কম হওয়ায় বাধ্য হচ্ছে গাদাগাদি করে থাকতে। আবার মেসে সিট না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী জেলার শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে ২/৩ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।

আবাসিক সুবিধায় থাকা এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীর মেসে মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেও সেটা চড়া মূল্যে। রান্নার সুযোগ, সরঞ্জাম ও কাজের বুয়া নিয়ে পড়তে হচ্ছে মহা ঝামেলায়। মেসে আগে থেকে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের মিল চালাতে পারলেও রান্না ও খাওয়ার পর্যাপ্ত সরঞ্জাম না থাকায় অতিরিক্ত শিক্ষার্থীদের খাবারের ব্যবস্থা করতে অপারগতা প্রকাশ করছেন বোর্ডাররা। দূর-দুরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়েই আশপাশের হোটেল থেকে অস্বাস্থ্যকর খাবার চড়া মূল্যে কিনতে হচ্ছে।

গাদাগাদি করে রাত্রিযাপন, অনিয়মিত ও অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং প্রয়োজনের তাগিদে অনিয়ন্ত্রিত ঘোরাফেরা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলেছে শিক্ষার্থীদের। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষার হলে বসলেও কেন্দ্রের বাইরে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। ফলে কর্তৃপক্ষের গৃহীত ব্যবস্থা খুব বেশি ফলপ্রসূ না হওয়ার আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।

তাছাড়া পরীক্ষার আগে ফরম ফিলাপের টাকা ও মেসের জন্য অতিরিক্ত টাকা ব্যয়ের কারণে অর্থিক বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। ২০২০-২১ অর্থবছরে আবাসিক হল ও পরিবহণ ফি মওকুফ করলেও তা পর্যাপ্ত নয় শিক্ষার্থীদের জন্য।

এদিকে ২০২০ সালের আটকে থাকা পরীক্ষাগুলো শুরু হওয়ায় মওকুফকৃত ফির আওতায় পড়ছে না অনেক সেশন। অর্থনৈতিক সমস্যাটি তাদের ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় অডিটরিয়াম, কুষ্টিয়া

অপরদিকে মেসে নিরাপত্তার দিকটিও ভাবাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। মেস সঙ্কটে অনেক শিক্ষার্থী ২/৩ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে কম জনবহুল এলাকার মেস/বাসায় অবস্থান করছেন। সেসব মেসের জানালা ভাঙা, গেট নেই, স্থানীয় বখাটেদের উৎপাত, চুরি-ছিনতাইয়ের আশঙ্কাসহ নানাবিধ অনিরাপত্তায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা। আবার অনেক মেসে হয়রানির শিকার হচ্ছেন ছাত্রীরা। সম্প্রতি একটি মেসে মালিকের ছেলের দ্বারা ছাত্রীরা মানসিক হেনস্থার শিকার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষর্থী আখতার হোসেন আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রশাসন চাইলে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই প্রতিটি বিভাগের ৪র্থ এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে রেখেই পরীক্ষা নিতে পারতেন। তাদের পরীক্ষা শেষ হয়ে ক্রমান্বয়ে অন্য সেশনগুলোর একই উপায়ে পরীক্ষা নেওয়া যেতো। হল বন্ধ রেখে এভাবে পরীক্ষা নেওয়ায় আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি, আর্থিক ক্ষতি এবং নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে। পরীক্ষার কক্ষে যতোই স্বাস্থ্যবিধিই মানা হোক না কেনো তা কোনো কাজে আসবে না। আমরা বরাবরই বলে আসছি দ্রুত হল খুলে দেওয়ার জন্য। হল খুলে নিয়মানুযায়ী পরীক্ষা নিলেই আমরা ঝুঁকিমুক্ত থাকতে পারবো। ’  

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘পরীক্ষার্থীরা মেসে গাদাগাদি করে থাকছে এটা শুনে খারাপ লাগছে। কিন্তু ক্যাম্পাসের বাইরের বিষয়ে আমরা তেমন কিছু করতে পারছি না। শিক্ষার্থীদের নিজেদেরই সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। কারণ পরীক্ষার বিষয়টি আমরা বিভাগ এবং শিক্ষার্থীদের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। শিক্ষার্থীরা যদি পরীক্ষা দিতে ইচ্ছা পোষণ করে তাহলে বিভাগকে বলবে। বিভাগ সে অনুযায়ী পরীক্ষা নেবে।

হল খোলার প্রসঙ্গে উপ-উপাচার্য বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং ইউজিসি থেকে নির্দেশনা আছে ২৭ তারিখের পর শতভাগ টিকা নিশ্চিতের মাধ্যমে  হল খোলা। তাই ২৭ তারিখের পর আমরা এ ব্যপারে সিদ্ধান্ত নেবো। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।