খুলনা: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েটে) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে শিক্ষক সমিতি।
বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) শিক্ষকরা প্রতিবাদ র্যালি বের করেন।
এতে সভাপতিত্ব করেন কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস। বক্তব্য রাখেন ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মো সাইফুর রহমান খান, প্রফেসর ড. শিবেন্দ্র শেখর শিকদার, প্রফেসর ড. মোস্তফা সরোয়ার, পল্লব কুমার চৌধুরী, প্রফেসর ড. রাফিজুল ইসলাম. কম্পিউটার সায়েন্সের প্রফেসর ড. পিন্টু চন্দ্র শীল, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রফেসর ড. সোবহন মিয়া, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. সজল কুমার অধিকারী, ইলেক্টিক্যাল বিভাগের ড. মোহাম্মদ আলমগীর প্রমুখ।
সমাবেশে শিক্ষক নেতারা বলেন, উচ্ছৃঙ্খল কিছু ছাত্রের অপমান, অবরুদ্ধ ও মানসিক নির্যাতনে প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যু হয়েছে। অনতিবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার না করা পর্যন্ত শিক্ষকরা সব একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন। প্রচলিত বিধি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রফেসর ড. সেলিমের পরিবারকে ন্যায্য অর্থনৈতিক সুবিধাসহ অতিরিক্ত ১ কোটি টাকা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ দিতে হবে। শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ন্যায় বিচার দাবি করে ভিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি বরাবর স্বারক লিপি দেওয়া হবে। আইনি প্রক্রিয়া অতিদ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালকে ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে হবে।
গত ৩০ নভেম্বর বিকেল ৩টায় মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেন (৩৮)। সম্প্রতি কুয়েটের লালনশাহ হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য-ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে ফজলুল হক হলের বর্ডার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান তার অনুগতদের ডাইনিং ম্যানেজার নির্বাচিত করার প্রচেষ্টার জন্য ঘটনার দিন ড. মো. সেলিমের দাপ্তরিক কক্ষে অশালীন আচরণ ও মানুষিক নির্যাতন করে। সাধারণ সম্পাদকসহ উপস্থিত ছেলেরা হলের প্রভোষ্ট ড. সেলিম হোসেনকে বেশ কয়েকদিন ধরে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিলেন তাদের মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচন করার জন্য। তারই ধারাবাহিকতায় ৩০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্ররা ক্যাম্পাসের সড়ক থেকে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা করা শুরু করে। পরবর্তীতে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করে।
সিসি টিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধা ঘণ্টা ওই শিক্ষকের সঙ্গে রুদ্ধদার বৈঠক করে। পরবর্তীতে শিক্ষক ড. সেলিম হোসেন দুপুরে খাবারের উদ্দেশে ক্যাম্পাস নিকটস্থ বাসায় যাওয়ার পর দুপুর ২টার দিকে তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। পরে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বে কিছু সাধারণ ছাত্র কর্তৃক জেরা, অপমান, অবরুদ্ধ করে রাখা ও মানসিক নির্যাতনে তার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে শিক্ষকের মৃত্যুর পর দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে কুয়েটের ক্লাস ও পরীক্ষা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২১
এমআরএম/আরবি