খুলনা: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. সেলিমের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের নতুন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনায় দ্বিতীয় দফায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো।
শুক্রবার (০৩ ডিসেম্বর) রাতে এই কমিটি গঠন করা হয় বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন।
কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আলহাজ উদ্দিনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এ ছাড়া সদস্য করা হয়েছে কুয়েটের অধ্যাপক ড. খন্দকার মাহবুব, খুলনা জেলা প্রশাসকের একজন প্রতিনিধি ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের একজন প্রতিনিধিকে। তদন্ত কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রদের মানসিক নির্যাতনে গত মঙ্গলবার ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেন হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান। এ ঘটনা তদন্তে ওই দিন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার ওই তদন্ত কমিটির দুইজন সদস্য তদন্তে অপারগতা প্রকাশ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার রাতে নতুন এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জানা যায়, প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ কমিটির সভাপতি ছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম। এছাড়া দুইজন সদস্য হলেন, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান ও ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. কল্যাণ কুমার হালদার। তবে এদের মধ্যে থেকে অধ্যাপক ড. কল্যাণ কুমার হালদার লিখিত ভাবে ও ড. মো. আরিফুল ইসলাম অলিখিত ভাবে তদন্ত করতে অপারগতা জানিয়েছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত কমটিরি এই দুই সদস্য ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কাজ চালাতে বিব্রত বোধ করছেন।
মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বেলা ৩টায় মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেন (৩৮)। সম্প্রতি কুয়েটের লালনশাহ হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য-ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে ফজলুল হক হলের বর্ডার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান তার অনুগতদের ডাইনিং ম্যানেজার নির্বাচিত করার জন্য ড. সেলিমকে চাপ দেন। ঘটনার দিন দাপ্তরিক কক্ষে অশালীন আচরণ ও মানসিক নির্যাতনেরও শিকার হন তিনি। ৩০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্ররা ক্যাম্পাসের রাস্তা থেকে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা শুরু করেন। পরে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধা ঘণ্টা ওই শিক্ষকের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। পরে শিক্ষক ড. সেলিম হোসেন দুপুরে খাবারের জন্য ক্যাম্পাসের কাছে বাসায় যাওয়ার পর ২টায় তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। পরে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বে কিছু সাধারণ ছাত্রের জেরা, অপমান, অবরুদ্ধ করে রাখা ও মানসিক নির্যাতনে তার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
মৃত্যুর ঘটনায় সাধারণ ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়ে অপমৃত্যুর অভিযোগ এনে ড. মো. সেলিমের কফিনসহ অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ভাইস-চ্যান্সেলরের কাছে বিচার চান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলার জোর দাবি জানান।
শিক্ষক সেলিমের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে দোষীদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবিসহ ৫ দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান শিক্ষকরা।
শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে সিন্ডিকেট সভায় ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধসহ বিকেল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে হল ছাড়তে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ ৭টি আবাসিক হলে থাকা প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী হল ছেড়েছেন।
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কুয়েটের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেনসহ সিন্ডিকেট সদস্যরা অংশ নেন।
ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তাল হওয়ায় এ জরুরি সিন্ডিকেট সভার ডাক দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০২১
এমআরএম/এমআরএ