ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিক্ষা

মেসে স্থানীয়দের হামলা, আহত ইবির পাঁচ শিক্ষার্থী

ইবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০২১
মেসে স্থানীয়দের হামলা, আহত ইবির পাঁচ শিক্ষার্থী আহত শিক্ষার্থী

ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) পার্শ্ববর্তী শেখপাড়া এলাকার এক মেসে স্থানীয়দের দ্বারা হামলার শিকার হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৫ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।

 

মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ত্রিবেনী রোডের সাকসেস কোচিং সংলগ্ন রবিউল ইসলাম মেসে এ হামলার ঘটনা ঘটে।  

আল-কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ২০ থেকে ৩০ জন নিয়ে এ হামলা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।  

এ ঘটনা শুনে অন্যন্য শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয়রা তাদের ওপর চড়াও হয়। এসময় স্থানীয়রা জড়ো হয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করার জন্য এগিয়ে আসে। এমনকি মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে হামলা করার প্রস্তুতি নেয়। পরে শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।  

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষার্থীরা। মারধরের ঘটনা শুরু থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর পুনরায় হামলার প্রস্তুতি ও স্থানীয়দের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও প্রক্টরিয়াল বডির কোনো সদস্য সেখানে উপস্থিত হননি।

শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থল থেকে ক্যাম্পাসে আসার পর শৈলকুপা থানার পুলিশ উপস্থিত হয়ে স্থানীয়দের ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেন। পাশাপাশি পুলিশ বুধবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বিষয়টি সুরাহা করার আশ্বাস দেন। আহত শিক্ষার্থীদের বিশ্বদ্যিালয়ের কেন্দ্রীয় চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।  

আহত শিক্ষার্থীরা হলেন, আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের কামাল উদ্দিন আরবি সাহিত্য, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সুলতান মাহমুদ, ভুগোল বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের জুয়েল রানা, সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মাজহারুল ইসলাম নাঈম সমাজ, দাওয়াহ বিভাগের ২০১৭-১৭ শিক্ষাবর্ষের আব্দুর রহমান।

এ ঘটনায় ওই মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন। ঘটনাস্থলে আওয়ামী লীগ নেতা ও ত্রিবেণী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রেজাউল করিম খান শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভূক্তভোগীরা জানান, ত্রিবেনী রোডের সাকসেস কোচিং সংলগ্ন রবিউল ইসলাম মেসে ১২ জন শিক্ষার্থী অবস্থান করেন। গুরুতর আহত হওয়া আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের কামাল উদ্দীনের মাস্টার্স শেষ হয়েছে। এজন্য গতকাল সোমবার রাতে তারা মেসে সবাই মিলে ট্যুরের পরিকল্পনা করছিলেন।  

মেসের পাশেই বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার জাহিদুল ইসলামের। পরে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জাহিদ তাদের মেসে আসেন এবং কামালকে ডাকেন। এরপর শিক্ষার্থীদের চিল্লাচিল্লির কারণে তার ঘুম ভেঙে যায় বলে জানান। এর আগেও শিক্ষার্থীরা মেসে চিল্লাচিল্লি করেন বলে অভিযোগ করেন।

পরে মেসে থাকা অন্য শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করলে জাহিদ চটে যান এবং শিক্ষার্থীদের শাসান। একপর্যায়ে জাহিদ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এরপর জাহিদ শিক্ষার্থীদের দেখে নেওয়ার এবং হাড়গোড় ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যান।

পরে রাত সোয়া ৯টার দিকে জাহিদ অন্তত ২০ থেকে ৩০ জনকে নিয়ে মেসে ঢোকেন। এসময় মেসের সাটার বন্ধ করে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন শিক্ষার্থীদের হামলাকারীদের হাতে লাঠি, বাঁশ, কাঠ, রড লাইট ছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এতে একজন গুরুতরসহ অন্তত পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এসময় হামলাকারীরা মেসের সাটার নামিয়ে শিক্ষার্থীদের অবরূদ্ধ করে রাখেন। অবরুদ্ধ থাকাবস্থায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে জানান। এসময় প্রক্টর পুলিশ পাঠাবেন বলে তাদের আশ্বাস দেন বলে জানায় শিক্ষার্থীরা।

পরে তারা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের জানালে সাটার খুলে সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করেন। একজন শিক্ষার্থীর অবস্থা গুরুতর হলে তাকে তাৎক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের ঘটনাস্থলে উপস্থিতি দেখে স্থানীয়রাও আস্তে আস্তে জড়ো হতে থাকে। এসময় পর্যন্তও বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি কিংবা পুলিশ প্রশাসন কেউ উপস্থিত হননি।  

শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখে স্থানীয়রা তাদের লোকজন আরও বাড়াতে থাকে। এসময় শিক্ষার্থীরা কর্মকর্তা জাহিদের খোঁজ করতে চাইলে স্থানীয়রা তদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়। আনন্দনগর জামে মসজিদ এলাকাসহ তিন দিক থেকে থেকে প্রায় দুই শতাধিক স্থানীয় লোজ দা, রড, শাবলসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জন্য এগোতে থাকে।

শিক্ষার্থীরা অবস্থা বেগতিক দেখে আবারো প্রক্টরিয়াল বডির কাছে ফোন দিয়ে সাহায্যে চান। এসময়ও প্রক্টরিয়াল বডি কিংবা পুলিশ কেউই ঘটনাস্থলে যাননি। বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে পড়ে। তবে কিছু ছাত্রদের মধ্যে কয়েকজন প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে থেকে যায়। পরে ত্রিবেণী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী রেজাউল করিম খানসহ এলাকায় কয়েকজন প্রতিনিধি স্থানীয়দের আটকান।  

পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয়দের ঘটনাস্থল সরিয়ে দিয়ে স্থানীয় প্রতিনিধি ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসেন। এসময় আগামীকাল বিষয়টি সুরাহা করার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মেসে অবস্থানের বিষয়ে নিরাপত্তার আশ্বাস দেন। তবে এরমধ্যেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির কেউই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হননি।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের ভাইয়েরা মার খেয়েছে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে স্থানীয়রা আমাদের ওপর চড়াও হয়। তিনদিক থেকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলার জন্য এগিয়ে আসে। অনেকবার আমরা প্রক্টরিয়াল বডিকে জানিয়েছি কিন্তু একটি বারের জন্য কেউই আমাদের রক্ষার জন্য ঘটনাস্থলে আসলেন না। আমাদের ভাইয়ের বিচার চাইবো দূরের কথা আমরা কোনোমতে আমাদের জীবন নিয়ে ফিরে এসেছি।  

অভিযুক্ত জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। মারামারির ঘটনার সঙ্গে আমার সংশিষ্টতা নেই। উল্টো শিক্ষার্থীরা বিনা কারণে অভিযুক্ত করে আমার বাড়ির গেটে ইট পাটকেল মেরেছে। আমি বিষয়টি প্রক্টরকে জানিয়েছি। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ’

মেস মালিক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আমি বিচার চাইবো। ’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'ঘটনা শুনার পরপরই আমি পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলি এবং তাদের ঘটনাস্থলে যাওয়ার অনুরোধ জানাই। পাশাপাশি সহকারী প্রক্টর ড. শফিকুল ইসলামকে ঘটনাস্থলে যেতে বলি।  

তবে সহকারী বলেন ড. শফিকুল ইসলাম যাওয়ার নির্দেশনা পাননি বলেন জানান। তিবি বলেন, ‘ঘটনা শোনার পর নির্দেশনার অপেক্ষায় ছিলাম। তাই ঘটনাস্থলে যেতে দেরি হয়েছিল। ’ 

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।