বরিশাল: বরিশাল নদী বন্দরে প্রবেশের টিকিট দেওয়া-নেওয়াকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীদের মারধর, কান ধরে উঠবস করানো, ক্ষমা চাওয়ানোসহ নানাভাবে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে বিআইডব্লিউটিএ এর চেকারদের বিরুদ্ধে।
এ খবর জানতে পেরে শুক্রবার (২৫ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বরিশাল নদী বন্দরে এসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন।
এর আগে রাত সাড়ে ৮টার দিকে বরিশাল নদী বন্দরের দুই নম্বর গেটে টিকিট চেকারদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ঝগড়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফুর রহমান বলেন, আমি ও ইমরান নামে ঢাকার তিতুমীর কলেজের সহপাঠী রাকিবকে লঞ্চে উঠিয়ে দিতে ঘাটে যাই। লঞ্চের যাত্রী একজন হওয়ায় তারা ঘাটে প্রবেশের জন্য মাত্র একটি টিকিট করেন। কিন্তু কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা টিকিট চেকার জাকির ও মাইনুলসহ কয়েকজন বাকিদের টিকিট না থাকায় ভেতরে যেতে দিচ্ছিলেন না। তখন তাদের যাত্রী একজন বলে জানাই। সেই সঙ্গে আমরা বরিশাল বিশ্বাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলেও জানাই। তবে তা মানতে নারাজ। এরপর হঠাৎ করেই দেখতে পাই যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া ১০ টাকার টিকিটগুলো নিয়ে তা না ছিড়েই পকেটের ভেতরে ঢোকাচ্ছেন চেকাররা। এর প্রতিবাদ জানালেই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এসময় তারা আমাদের চারজনকে গালাগাল করতে থাকেন এবং সাত-আটজন এসে মারধর শুরু করেন।
তিনি আরও বলেন, এসময় আমাকেসহ দু‘জনকে মারধর করে বন্দরের দোতলায় একটি রুমে নিয়ে যান তারা। সেখানে নিয়ে পুনরায় মারধর করেন এবং পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন।
আহত রাকিব জানান,টিকিট চেকারসহ কয়েকজন তাদের মারধর করেন এবং কান ধরে উঠবস করান। সেই সঙ্গে মানিব্যাগ, টাকাসহ বেশ কিছু জিনিস লুটে নেওয়া হয়।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, বিষয়টি জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ‘ শিক্ষার্থী রাত ১০টার দিকে বরিশাল নদী বন্দরে এসে বিক্ষোভ করেন। তারা যখন নদী বন্দরের বিভিন্ন গেট থেকে দৌড়ে ভেতরে যান, তখন বিআইডব্লিউটিএ‘র লোকজনসহ ঘাট শ্রমিকরা পালিয়ে যান। এসময় শিক্ষার্থীরা নিচতলায় থাকা কয়েকটি চেয়ার-টেবিলও ভাঙচুর করেন। পরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে নদী বন্দরের কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিত ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সমাধান করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী অমিত হাসান রক্তিম জানান,তাদের সহপাঠীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করার খবর ছড়ানো পরপরই তারা ঘটনাস্থলে আসেন এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। আর দোষীদের বিরুদ্ধে তিন কার্যদিবসের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার আল্টিমেটামও দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে কঠোর আন্দোলন করা হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কয়েকটি দাবির কথাও বন্দর কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। সেগুলো তারা মেনে নিতে চেয়েছে।
এদিকে নদী বন্দরের টিসি মাইনুল ইসলাম বলেন,কাউন্টারের স্টাফ জাকিরের সঙ্গে ঝামেলার খবর পেয়ে সেখানে যাই। এসময় ঘাটের স্টাফরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে আমি তাদের বুঝিয়ে নিরাপত্তার খাতিরে ওপরে নিয়ে আসি। এখানে কোনো অপ্রিতীকর ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,খবর পেয়ে আমি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে আসি এবং পুলিশ প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলি। তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঘটা অপ্রীতিকর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে নিয়মানুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের স্টাফরা অল্প শিক্ষিত, তারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মর্যাদা বুঝতে পারেননি। এর আগেও আমি তাদের যাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছি। আজকের ঘটনার পর আশা করি এমনটা আর তারা ঘটাবেন না। আর কাটা টিকিট না ছিঁড়ে বিক্রির ঘটনার সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে।
এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. খোরশেদ আলম বলেন, আমরা কথা বলেছি নদী বন্দর কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নদী বন্দরে প্রবেশ করার সময় আইডি কার্ড দেখালে টিকিট লাগবে না। এছাড়া যে ঘটনা ঘটেছে তাতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নদী বন্দর কর্মকর্তার পক্ষ থেকে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নদী বন্দরের স্টাফরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কেও কটূক্তি করেছেন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার ফজলুল করিম বলেন, একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। বিষয়টি সমাধান হয়েছে, বর্তমানে নদী বন্দরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২২
এমএস/এসআই