ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

মাদরাসার দানের জমি বিক্রি, দেন জাল সনদও!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩২ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২২
মাদরাসার দানের জমি বিক্রি, দেন জাল সনদও!

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: মাদরাসায় দান করা জমি বিক্রি, টাকার বিনিময়ে জাল সনদ দেওয়া, শিক্ষক র্নিযাতনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার নামোটিকরি আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে।  

এ নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রসাশক, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, দুদকসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেছেন এক ব্যক্তি।

 

এলাকাবাসীর পক্ষে মো. আব্দুস সালাম নামে এক ব্যক্তি অভিযোগটি করেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মাদরাসা সংলগ্ন গঙ্গারামপুর গ্রামের ভোগরুদ্দিনের বিধবা স্ত্রী মেরাতুন ২০১৪ সালের ২০ মে মাদরাসাটিকে গঙ্গারামপুর মৌজার আরএস খাতিয়ান নং ৩২৫ দাগ নং ১২৩ তে .০০৪০ শতাংশ জমি দান করেন। জমিটি ছিল একটি আম বাগান। আর মাদরাসার পক্ষে গ্রহীতা হিসেবে অধ্যক্ষ মোহা. আব্দুস সামাদ রেজিস্ট্রি গ্রহণ করেন। মাদরাসা অধিদপ্তরের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানের জমি বিক্রির নিয়ম থাকলেও সে নিয়ম ভেঙে পরে ২০২০ সালে সেই দানের জমি মেরাতনের ছেলে মোকার কাছে এক লাখ ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন অধ্যক্ষ মোহা. আব্দুস সালাম। জমি কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মেরাতনের ছেলে মোকা।

অপরদিকে একইভাবে নিয়ম ভেঙে কালিচক মৌজার ১৭৮ ও ১৮০ নং দাগে ১৪শতাংশ এবং ৩১২ দাগে ২২ শতাংশ জমি মাদরাসার উন্নয়নের কথা বলে স্থানীয় গোরস্থানের কাছে বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।

জমি বিক্রির টাকা মাদরাসার উন্নয়ন কাজে ব্যয় না করে অধ্যক্ষ আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগে আছে।

শুধু তাই নয়, জাল সনদ বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে এ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। উপজেলার কান্তিনগর গ্রামের মো. আবোল হোসেনের ছেলে মো. টমাস আলী মাদরাসা চত্বরে পা না দিয়েই পেয়েছেন দু’দুটো অষ্টম শ্রেণি পাসের সনদপত্র। একটি ২০০৮ সালের সনদে মাদরাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়নরত থেকে ৩.০০ জিপিএ বি পেয়ে পরীক্ষায় পাস দেখানো হয়েছে। আর অপর সনদে উল্লেখ করা হয় তিনি মাদরাসায় এবতেদায়ী ১ম শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে বার্ষিক পরীক্ষায় পাস করেছেন ২০০৭ সালে।

দু’বছরে দু’টি জাল সনদ নিয়ে মো. টমাস আলীর সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, নামোটিকরি মাদরাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। তার আগে লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি।  

টমাস আলীর দাবি, ১ম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয় থেকে পাস করেছেন।  ১ম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত কোনো মাদরাসা থেকে পাস করেননি।

টমাস আলীকে দু’টি সনদ দেওয়ার বিষয়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ মোহা. আব্দুস সালাম বলেন, ২০০৭ সালের সনদ আমি দিয়েছি।  

উল্টো দু’টি সনদের মধ্যে একটি অন্য কোনোভাবে জাল করা হয়েছে বলেও দাবি করেন অধ্যক্ষ।

এদিকে মাদরাসার নামে দান করা জমি বিক্রির ব্যাপারে তিনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাদরাসার উন্নয়নের জন্য জমি বিক্রির করা হয়েছে।  

মাদরাসার জমি বিক্রি করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হয়, সে অনুমোদন ছাড়াই কীভাবে জমি বিক্রি করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই সময় এ নিয়ম ছিল না।  

মাদরাসার জমি বিক্রি করে কী কী উন্নয়ন করা হয়েছে  তাও তিনি জানাতে পারেননি।

এসব ব্যাপারে মাদরাসার সভাপতি মো. রবিউল ইসলাম বলেন, জমি বিক্রির ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। অল্প কিছুদিন হলো সভাপতি হয়েছি।

অন্যদিকে শিবগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গত ২৯ মে নামোটিকরি মাদরাসার ব্যাপারে একটি অভিযোগ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২২
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।