ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

'পেশা হিসেবে শিক্ষকতা আজ হুমকির মুখে'

রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৭ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২২
'পেশা হিসেবে শিক্ষকতা আজ হুমকির মুখে' মানববন্ধন।

রাবি: শিক্ষক উৎপল কুমারকে হত্যা, স্বপন কুমারকে লাঞ্ছনা এবং ইমেরিটাস অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাকের জমি দখলের প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।  

বুধবার (২৯ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে এ দাবি জানান তারা।

 

মানববন্ধনে ফলিত রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী নয়ন চন্দ্র দাস বলেন, নড়াইলের মির্জাপুরে শিক্ষককে যে জুতার মালা পরানো হয়েছে এটা উনাকে জুতা দেওয়া হয় নাই, পুরো শিক্ষক সমাজকে জুতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় ৫১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজের কেউ প্রতিবাদ জানায়নি। সমাজে ধর্মান্ধতা জেঁকে বসেছে। আমাদের নৈতিকতায় পচন ধরেছে, পচন ধীরে ধীরে বড় আকার ধারণ করবে।  

পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাকের ঘটনাটি সমাজের সমন্বিত ব্যর্থতার উপসর্গ। আমাদের বস্তুগত উন্নয়ন হয়েছে, মানবিক উন্নয়ন হয়নি। মানবিক উন্নয়ন ছাড়া সব উন্নয়ন ব্যর্থ। অরুণ স্যারের সমস্যাটি দুই যুগ ধরে চলছে। তার সমস্যার সমাধান হয়নি কারণ তিনি শিক্ষাবিদ, তার পেশি শক্তি নেই।  

শিক্ষক স্বপন কুমারের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, মহানবীর যেকোনো অবমাননা আমাকে কষ্ট দেয়। কিন্তু আমার ছাত্র সে যেকোনো ধরনের কথাই বলুক না কেন আমি তাকে আশ্রয় দেব। আমি কখনো তাকে উন্মাদের হাতে তুলে দেব না।

মাইক্রোবায়োলজির সহযোগী অধ্যাপক অমিত কুমার দত্ত বলেন, আমরা তিনটি ঘটনা নিয়ে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু তিনটি ঘটনা হলেও বিষয়টি এক জায়গায় সেটা হলো নির্যাতিত ব্যক্তি শিক্ষক এবং সংখ্যালঘু। পার্শ্ববর্তী ক্ষমতাসীন লোকেরা এদের ওপর অত্যাচার নিপীড়ন করে। পেশা হিসেবে শিক্ষকতা আজ হুমকির মুখে। তাদের জীবন নিরাপদ নয়। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সংগঠনের মধ্যে তাদের শক্ত ভিত্তি রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, প্রতি বছরই আমরা কোনো না কোনো ঘটনা নিয়ে মানববন্ধন করি। কিছু দিন আগে এক শিক্ষার্থী আমাকে বলেন- আমার অপরাধ কোথায়। আমি তো ইচ্ছে করে এই ধর্ম বেছে নিইনি, আমার হাতে তো কোনো অপশন দেওয়া ছিল না। আমি যে পরিবারেরই হই না কেন, আমি আমাকে মানুষ হিসেবেই ভাবি। বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে মানসিকতায় উন্নয়ন ঘটেনি।

তিনি আরও বলেন, আজ আমরা স্বপন কুমার সরকারকে জুতার মালা পরালাম কিন্তু হয়তোবা বেশি দিন নেই যে, আমাদেরও এই অপমান ভোগ করতে হবে। এর আগে বিজ্ঞান শিক্ষা দেওয়ার কারণে শিক্ষক হৃদয় কুণ্ডুকে অপমান ও জেল জরিমানা হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাই, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক যাতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।

মানববন্ধনে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী মনু মোহন বাপ্পার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক শুভ্রা রাণী চন্দ্র, বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী, ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষার্থী রনজু হাসান। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী মানববন্ধনে অংশ নেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।