ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

গাইবান্ধা ভোট: এডিসিসহ ১৩৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল ইসি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২২
গাইবান্ধা ভোট: এডিসিসহ ১৩৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল ইসি নির্বাচন কমিশনে বসে সিসিটিলি মাধ্যমে অনিয়ম দেখছেন সিইসিসহ অন্যরা। ফাইল ছবি

ঢাকা: বন্ধ ঘোষিত গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনের ব্যাপক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় রিটার্নিং কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট,  পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তকাসহ ১৩৩ জনের বিরুদ্ধে বরখাস্তসহ নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ আইন অনুসারে বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তির সিদ্ধান্ত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
 
বৃহস্পতিবার (০১ ডিসেম্বর) নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এ তথ্য জানান।

 

তিনি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা ছাড়া অন্য সংস্থা বা বিভাগ থেকে নির্বাচনে দায়িত্বে আসা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্ব স্ব নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে একমাসের মধ্যে ইসিকে জানাতে হবে।
 
কাজী হাবিবুল আউয়াল তার কমিশনের লিখিত সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
 
সিদ্ধান্তগুলো হলো- ১. তদন্তে প্রমাণিত যে ১২৫টি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন, সে সব কর্মকর্তার নামের তালিকা সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ অনুযায়ী তাদের স্ব-স্ব নিয়ন্ত্রণকারী/নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবে। নিয়ন্ত্রণকারী/নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ দায়িত্বপালনে অবহেলা তথা অসদাচারণের কারণে তাদের বিরুদ্ধে চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে এক মাসের মধ্যে জানাবে।
 
২. কেন্দ্র নম্বর ৯৪ এর প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম, প্রভাষক উদয়ন ডিগ্রী কলেজকে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫(৩) অনুযায়ী চাকরি থেকে ২ মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্থ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে। সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে তার বিরুদ্ধে অসাদাচরণের জন্য বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে এক মাসের মধ্যে কমিশনকে জানাবে মর্মে পত্র দেবে।
 
৩. একইভাবে সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কেন্দ্র নম্বর ২ (তরুণ কুমার, এসআই. গোবিন্দগঞ্জ থানা), কেন্দ্র নম্বর ৫৪ (মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, এসআই গোবিন্দগঞ্জ থানা), কেন্দ্র নম্বর ৫৯ (মো. আনিছুর রহমান, এসআই গোবিন্দগঞ্জ থানা), কেন্দ্র নম্বর ৬২ (কনক রঞ্জন বর্মন, এসআই সাদুল্যাপুর থানা) ও কেন্দ্র নম্বর ১০৫ (মো. দুলাল হোসেন, এএসআই, আটোয়ারী থানা, পঞ্চগড়) এর পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে -দায়িত্বপালনে অবহেলা তথা অসদাচারণের কারণে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে পত্র দেবে। কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে এক মাসের মধ্যে জানাবে।
 
৪. অতিরিক্ত জেলা প্রশাশক (সার্বিক) সুশান্ত কুমার সাহার বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ অনুসারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অসাদাচরণের জন্য ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে এক মাসের মধ্যে জানানোর জন্য সচিব নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কর্তৃক পত্র দিতে হবে।
 
৫. নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সহকারী কমিশনারের নাম জেনে (এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইল নম্বর ০১........৭৭ । তদন্ত প্রতিবেদনে নাম উল্লেখ করা হয়নি) তাকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অবৈধ আদেশ পালনের জন্য ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে দেবে।  
 
৬. রিটানিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের (আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, রাজশাহী) বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ অনুযায়ী দায়িত্বপালনে অবহেলার জন্য তার বিরুদ্ধে সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবেন।  
 
৭. এক মাসের মধ্যে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে না জানালে কমিশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৬(২) অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।  
 
৮. সব কেন্দ্রের দায়িত্বপালনকারী নির্বাচনী এজেন্টদের তালিকা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কর্তৃক সীলকৃত ব্যাগে রয়েছে, যেহেতু নির্বাচন বন্ধ করা হয়েছে এবং এ বিষয়ের ওপর আদালতের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই তাই যে সব কেন্দ্রের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে সে সব কেন্দ্রের ব্যাগ খুলে দায়ী এজেন্টদের একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, গাইবান্ধা এই তালিকা করবেন। দোষী নির্বাচনী এজেন্টদেরকে পরবর্তী নির্বাচনে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না।
 
৯. ভবিষ্যতে নির্বাচনে কোনো ধরনের অনিয়ম করা হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোরতম ধারায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
সিইসি বলেন, যারা বিভিন্ন প্রার্থীদের এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাদের শনাক্ত করে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন-১৯৯১-এ যা উল্লেখ আছে-

৫। (১) কোনো নির্বাচন কর্মকর্তা নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো ব্যাপারে প্রদত্ত কমিশন বা ক্ষেত্রমত রিটার্নিং অফিসারের কোনো আদেশ বা নির্দেশ পালনে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যর্থ হইলে বা অস্বীকৃতি প্রকাশ করলে বা নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো আইনের বিধান ইচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন করিলে বা উহার অধীন কোনো অপরাধ করিলে তিনি অসদাচরণ করেছেন বলিয়া গণ্য হবেন এবং ওই অসদাচরণ তার চাকরি বিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে৷

(২) কোনো নির্বাচন-কর্মকর্তা উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অসদাচরণ করলে তার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরি থেকে অপসারণ বা বরখাস্ত করতে পারবে বা বাধ্যতামূলক অবসর দিতে পারবে বা তাহার পদাবনতি করতে পারবে বা তাহার পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি অনধিক দুই বছরের জন্য স্থগিত রাখতে পারবে:
তবে শর্ত থাকে যে, ওই রকম কোনো শাস্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লেখিত ব্যর্থতা, অস্বীকৃতি, লঙ্ঘন বা অপরাধের জন্য অন্য কোনো আইনে নির্ধারিত কোনো দণ্ড প্রদান বা উহার জন্য কোনো আইনগত কার্যধারা গ্রহণ ব্যাহত বা বারিত করবে না৷

(৩) কোনো নির্বাচন-কর্মকর্তা উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অসদাচরণ করলে কমিশন বা ক্ষেত্রমত কমিশনের সম্মতিক্রমে
রিটার্নিং অফিসার তাকে, তার বিরুদ্ধে তার চাকরি বিধি অনুযায়ী শৃঙ্খলামূলক কার্যধারা গ্রহণ সাপেক্ষে, অনধিক দুই মাসের জন্য সাময়িকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্তের আদেশ দিতে পারবেন এবং ওই বরখাস্তের আদেশ তার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তার চাকরি বিধি অনুযায়ী প্রদত্ত হয়েছে বলে গণ্য হবে এবং তদনুযায়ী তা কার্যকর হবে৷

(৪) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অসদাচরণের জন্য কোনো নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক কার্যধারা গ্রহণের জন্য কোনো নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে কমিশন বা ক্ষেত্রমত রিটার্নিং অফিসার অনুরোধ করিলে ওই কর্তৃপক্ষ ওই অনুরোধ প্রাপ্তির এক মাসের মধ্যে ওই কার্যধারা গ্রহণ করবে এবং কমিশনকে অবহিত করিবে

৬। (২) কোনো ব্যক্তি ধারা ৫(৩) এর অধীন প্রদত্ত কোনো আদেশ পালন বা কার্যকর না করলে বা ধারা ৫(৪) এর বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি অনধিক ছয় মাস কারাদণ্ডে, বা অনধিক দুই হাজার টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন৷

গত ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণের পর সিইসি প্রথমে ৫০টি কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা ঘোষণা করেন। এরপর রিটার্নিং কর্মকর্তাও একটি কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেন। পরে ভোটগ্রহণের যৌক্তিকতা না থাকায় পুরো নির্বাচন বন্ধ করে দেয় ইসি। এরপর গঠিত তদন্ত কমিটি ৬৮৫ জনের শুনানি করে ব্যাপক অনিয়মের প্রমাণ পায় ওই ৫১ কেন্দ্রে। এছাড়া অবশিষ্ট কেন্দ্রগুলোর সিসি ক্যামেরার ফুটেজও খতিয়ে দেখে অনিয়ম পায় ইসি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০২২
ইইউডি/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।