ঢাকা, বুধবার, ২৭ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

কোনো অনিয়ম হয়নি, হিরো আলমের অভিযোগ ভিত্তিহীন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৩
কোনো অনিয়ম হয়নি, হিরো আলমের অভিযোগ ভিত্তিহীন নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: সদ্য সমাপ্ত উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে হেরে যাওয়ায় আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের মধ্যে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রবণতা দেখতে পাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বৃহস্পতিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন।

আলোচিত ইউটিউবার হিরো আলম বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ আসনে স্বতন্ত্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। বগুড়া-৪ আসনে হেরে অল্প ভোটের ব্যবধানে। এরপর তিনি নির্বাচন কারচুপির অভিযোগ তোলেন।

রাশেদা সুলতানা বলেন, ভোটের আগের যে প্রক্রিয়াগুলো বা আচরণবিধি যে খুব একটা ভঙ্গ হয়েছে তা আমাদের কাছে মনে হয়নি। কোনো কিছু আমার নোটিশে আসলে সঙ্গে সঙ্গে আমি ডিসি-এসপিদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের দৃষ্টিতে দিয়েছি। কোনো প্রার্থী কিন্তু কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেনি। নির্বাচনের পূর্বের প্রস্তুতি ভালো ছিলো। আর ভোটের দিন ব্যাপক কি কোনো অনিয়মই হয়নি আমার দৃষ্টিতে। বিশেষ করে দেশের উত্তরের জেলাগুলোর নির্বাচনে বড় ধরনের কারচুপি, ভেতরে ভোট ডাকাতি বা এর ভোট ও দিয়েছে এ রকম কিছু হয়নি। আমার মনে হয় পুরো ভোটটা সন্তুষজনক হয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, পত্রিকায় যেটুকু দেখেছি হিরো আলম সাহেব তার একটু আপত্তি বা উনি একটু অসন্তুষ্ট হয়েছেন। গণমাধ্যমে আসার পর আমরা মূলত এটা নিয়েই সকাল থেকে আমলে নিয়ে রেকি করার চেষ্টা করেছি। বগুড়ার ডিসির সঙ্গে কথা বলা, জেলা নির্বাচন অফিসার, উপজেলা নির্বাচন অফিসার, ইউএনও সাহেবের প্রত্যেকের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। স্যার (সিইসি) নিজে কথা বলেছেন। ডিসি সাহেব আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে, রেজাল্ট হান্ড্রেড পারসেন্ট সঠিক।  

আর কোনো তদন্তে যাবেন কি-না জানতে চাইলে সাবেক এই জেলা জজ বলেন, না, আমরা সন্তুষ্ট। আমাদের কাছে যে রেজাল্ট শিট আছে, আমরা নিজেরাও একটু ক্যালকুলেট করে দেখলাম যে কোথাও কোনো ব্যত্যয় নেই। আমাদের দেশের কালচারটা কিন্তু এরকমই যে, একজন প্রার্থী যখন হেরে যায় তখন নানান ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রবণতা দেখা যায়। শুধু হিরো আলম সাহেব নয়, আমরা যতগুলো নির্বাচন করলাম সব জায়গাতেই এই ধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করেছি।

তিনি আরও বলেন, হিরো আলমের এজেন্টকে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল দেওয়া হয়নি। এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি যে, উনি নন্দিগ্রামে এজেন্ট দেননি। ডিসি সাহেবের সঙ্গে আমার যেটা কথা হয়েছে, তিনি আমাকে বলেছেন যে, ‘স্যার আমি নিজে কেন্দ্র ভিজিট করেছি অনেকগুলা। উনার কোনো এজেন্ট পাইনি। কাহালুতে উনার কিছু এজেন্ট ছিলো। সেখানে অন্য প্রার্থীদের এজেন্ট নাই বা রেজাল্ট দেওয়া হয়নি এমন কোনো অভিযোগ কিন্তু নাই। ’ 

‘উনি (হিরো আলম) হেরে গেছেন, উনার কষ্ট হয়েছে। কষ্ট নানানভাবে প্রকাশ করছেন। উনি এটা করতেই পারেন। একজন মানুষ বললেই তো আর সেটা হয়ে যায় না। প্রমাণ তো থাকতে হবে। ’ যোগ করেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা।  

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ওয়েবসাইটে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। এখনো সরকারিভাবে ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। আমরা যেটি পেয়েছি সেটি বেসরকারিভাবে। আসার পরে আমরা ওয়েবসাইটে দিয়ে দেবো।      

এই নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, অনেকেই মুখে বলে ঝড় তোলে কিন্তু প্রমাণ নিয়ে আমাদের কাছে আসে না। আমাদের কালে যত নির্বাচন হয়েছে তারা কেউ আদালতে গেছে বলে আমার তো জানা নেই। কুমিল্লা (কুমিল্লা সিটি করপোরেশন) নিয়ে এতো কথা হলো। কই উনারাতো আদালতে গেলেন না। উনি (হিরো আলম) বলেছেন যাবো, গেলে যাবেন। আমি তো অনেক কথাই মুখে বলতে পারি। তা প্রমাণ তো হতে হবে। অভিযোগ দেওয়া আর অভিযোগ প্রমাণ করা দুইটার মধ্যে কিন্তু অনেক ফারাক।  

ইভিএমের ভোটে রেজাল্ট দিতে দেরি হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের পর কিন্তু অনেক কাজ থাকে। চারটা, পাঁচটা রেজাল্ট শিট তৈরি করতে হয়। সবগুলো যখন কম্পাইল করতে যায় বা দিতে যায় বারে বারে কিন্তু তা চেক, ক্রস চেক করতে হয়। তা নাহলে হুট করে যদি একটা ভুল হয়ে যায়, ভুল হতেই পারে। এ জন্য মেলাতে সময় লেগে যায়। সবগুলো মিলিয়ে প্রস্তুত করতে সময় লেগে যায়। আর একটা জিনিস- আমি বলবো সব মানুষের এক ধরনের ক্যাপাসিটি থাকে না। নতুনদের কাজগুলো রপ্ত করতে সময় লাগে। সবাই হান্ড্রেড পারসেন্ট দ্রুত গতিতে কাজ করতে পারবে এটা আশা করা যায় না।  

সিসি ক্যামেরা না থাকার কারণে ভোট পর্যবেক্ষণে সমস্যা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন ডিরেক্ট একটা জিনিস আমি দেখতে পাচ্ছি। সেটা যে ধরনের আর ভায়া মাধ্যম হয়ে আসতে এটার যে অসুবিধা এটা তো থাকবেই। আমি স্বীকার করলেই কি আর না করলেই কি। এটা তো অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সিসি ক্যামেরা থাকলে অবশ্যই ভালো হয়। সিসি ক্যামেরা থাকলে আমরা নিজের চোখ দিয়ে দেখতে পাচ্ছি। সিসি ক্যামেরা হলে ভালো হয়। তাই যদি না হবে তা হলে সব মহল থেকে কেনো বলবেন যে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করেন। আমি মনে করি সিসি ক্যামেরা থাকলে আরও অনেক বেশি স্বচ্ছভাবে কাজ করা সহজ হয়। এটি বলতে কোনো দ্বিধা নেই।  

সামনের নির্বাচনগুলোতে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করবেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি নিয়ে আমি অনেকবার বলেছি। এটি নিয়ে নতুন করে কিছু বলতে চাই না।  

আগামী নির্বাচনের জন্য এটি নেতিবাচক বার্তা বহন করবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মনে হয় না। আমি সব সময় নিজের ভেতর যদি নেতিবাচকটা খুঁজে বের করি তাহলে কিন্তু আমার জন্য সবকিছু নেতিবাচক। আর আমি যদি পজেটিভ চিন্তা করি, তাহলে আমি কিন্তু নেতিবাচক কিছু দেখবো না। যারা আমাদের কাজ পছন্দ করবে না, তারা কোনোদিনই করবে না। যেগুলো নিয়ে অভিযোগ আছে সেগুলো আমরা অবশ্যই যাচাই বাছাই করবো। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে এটা মনে হচ্ছে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২৩
ইইউডি/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।