বগুড়া: বগুড়া-৪ আসনের উপনির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে উচ্চ আদালতে যাচ্ছেন বহুল আলোচিত আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম।
বৃহস্পতিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বগুড়া জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে ওই আসনের ফলাফলের তালিকা সংগ্রহ করতে আসেন তিনি।
এ সময় হিরো আলম সাংবাদিকদের জানান, রোববার (০৫ ফেব্রুয়ারি) অথবা সোমবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) উচ্চ আদালতে এ বিষয়ে মামলা দায়ের করবেন, এজন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেছেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও ফলাফল সুষ্ঠু হয়নি। কারণ এমন কোনো কেন্দ্র নেই যেখান থেকে পাশের খবর পাইনি। কেন্দ্রে আমাদের যেসব এজন্ট ছিলো, এলাকার লোক ছিলো সবাই বলেছে আমি পাস করেছি। কিন্তু যখন রেজাল্ট হলো, তখন এসে আমি পাস করলাম না কেন? কিছু জায়গাতে আমাকে ২৭টা ভোট দেখানো হয়েছে। সেখানে মশাল প্রতীক প্রার্থীকে (বিজয়ী প্রার্থীকে) দেখানো হয়েছে ৫০০ ভোট ৷ কিছু জায়গায় আমাকে দেখানো হয়েছে ২০টি তাকে দেখাছে ৩০০টি, সবকিছু মিলে আমার সন্দেহ হইছে। এ কারণে এখানে এসেছিলাম কাগজপত্র তুলতে। এই কাগজ নিয়ে আমি হাইকোর্টে রিট করবো।
হাইকোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে হিরো আলম বলেন, নির্বাচন কমিশনের যারা আছেন তাদের ওপরে আমার কোনো আস্থাই নেই, প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাদের ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে গেছে। আমি দুইবার নির্বাচনে দাঁড়ালাম, দুই বারই তারা প্রার্থীতা বাতিল করলো। পরে আমি হাইকোর্ট থেকে রায় নিয়ে এলাম।
তিনি আরও বলেন, এলাকার সবাই বলছে আমাকে ভোট দিয়েছে; তাহলে আমার সেই ভোট গেলো কোথায়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যে মশালের কোনো নামগন্ধই ছিলো না, সেই মশাল কোত্থেকে ধাম করে চলে এলো? ভোটের রেজাল্ট ঘোষণার আগেই সেখানে এক আওয়ামী লীগের নেতা বলেছেন, চিন্তা ভাবনার কোনো কারণ নেই, মশাল পাস; খালি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বাকি। আমরা রেজাল্ট জানলামই না, উনি আগেই ডিক্লার দিয়ে দিলেন! নন্দীগ্রামে গণনা শেষই হয়নি, এরই মধ্যে দেখি বগুড়া থেকে ঘোষণা দিয়েছে মশাল মার্কা পাস! এরা কি করে জানলো যে মশাল আগে থেকেই পাস? তাহলে আগে থেকেই চক্রান্ত ছিলো।
হিরো আলম দাবি করেন, এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন আশাই করা যায় না; কারণ তারা আমার মতো লোকের সঙ্গে ভোট করতে ভয় পায়। ফেয়ার নির্বাচন করতে সামান্য এক হিরো আলমকে দেখে ভয় পায়! এতেই বোঝা যাচ্ছে কতোটা দুর্বল এরা। এই রকম নির্বাচনের পরিবেশ থাকলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাঁড়ানোর কোনো প্রশ্নই ওঠে না বলেও জানান হিরো আলম।
এদিকে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে একতারা প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ফল পাল্টে দেওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বৃহস্পতিবার সিইসি টেলিফোনে বগুড়া জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহমুদ হাসানকে এ নির্দেশ দেন।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সিইসি ফোন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। বগুড়া-৪ আসনে উপনির্বাচনে ১০ কেন্দ্রে ফলাফল পাল্টানোর অভিযোগ তুলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম গণমাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নজরে আসার পর তিনি ফোন করেন।
তিনি বলেন, নির্দেশ পাওয়ার পর নন্দীগ্রাম উপজেলার সব কয়টি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম মেশিনে প্রাপ্ত ফলাফল পুনর্যাচাই করা হয়েছে। ঘোষিত ফলাফলের সঙ্গে ইভিএম মেশিনে পড়া ভোটের হিসাব শতভাগ নির্ভুল আছে। প্রয়োজনে হিরো আলম কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল নিয়ে যাচাই করতে পারেন।
এর আগে বুধবার (০১ ফেব্রুয়ারি) উপনির্বাচনে জয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে হেরে গেছেন আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। সর্বশেষ ৮৩৪ ভোটের ব্যবধানে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের কাছে পরাজিত হন তিনি। রেজাউল করিম তানসেন মশাল প্রতীকে পেয়েছেন ২০ হাজার ৪০৫ ভোট আর হিরো আলম একতারা প্রতীকে পেয়েছেন ১৯ হাজার ৫৭১ ভোট। রাত সোয়া ৮টার দিকে বগুড়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন।
পরে ওই রাত রাত ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করে আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম জানান, তিনি এ ফলাফল মানেন না। ‘মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে, কিন্তু দেখানো হয়েছে আমি ভোট পাইনি। আমার এজেন্ট ভোট শেষে কাগজ চেয়েছে, তাদের কাগজ দেওয়া হয়নি। কোনো কোনো স্থানে দেখানো হয়েছে আমি মাত্র ২৮ ভোট পেয়েছি, কিন্তু ওখানকার মানুষজন বলছেন তারা আমাকে ভোট দিয়েছেন। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২৩
কেইউএ