ঢাকা: ঘটা করে বিদেশে গিয়ে প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সরবরাহের কার্যক্রম হাতে নেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে সে কার্যক্রমে কোনো অগ্রগতি নেই বললেই চলে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনার পেয়ে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৯ সালে এই উদ্যোগটি হাতে নেয়। ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনের ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে ইসি।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর সংযুক্ত আবর আমিরাতের প্রবাসীদের মাঝে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তার আগে একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থারত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রম শুরু করে নির্বাচন কমিশন। পরবর্তীতে সৌদি আবর, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপের প্রবাসীদের জন্যও কার্যক্রমটি হাতে নেওয়া হয়।
সেসময় ইসি কর্মকর্তারা বিভিন্ন দেশে সম্ভাবতা যাচাই করে এলে অনলাইনে কার্যক্রমটির ঘটা করে উদ্বোধন করা হয়। পরিকল্পনা ছিল প্রবাসীরা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে বসেই অনলাইনে ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করবেন। পরে সেগুলো নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্থায়ী ঠিকানার অধীন উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের মাধ্যমে তদন্ত সম্পন্ন করে এনআইডি সরবরাহ করবে। এক্ষেত্রে তদন্তে ইতিবাচক প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে আবেদন অনুমোদনের পর সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে এনআইডি সরবরাহ করা হবে।
জানা গেছে, তিন বছর পেরিয়ে গেলেও কার্যক্রমটির তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। কার্যক্রম শুরু হওয়া ছয়টি দেশ থেকে ভোটার হয়ে এনআইডি পেতে আবেদন করেছেন পাঁচ হাজার ১৩৮ জন। এদের মধ্যে চার হাজার ৬১০ জনের আবেদন এখন পর্যন্ত তদন্তই করেনি ইসি অর্থাৎ ৯০ শতাংশ আবেদনে জমছে ধুলোর স্তর।
তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে ৪৭৫ জনের, এর মধ্যে নানা কারণ দেখিয়ে ২০৩ প্রবাসীর আবেদন বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া তদন্তাধীন ৫৩ জনের আবেদন। অর্থাৎ তিন বছরে তদন্ত সম্পন্ন করে ২৭২ জনের আবেদন অনুমোদিত হয়েছে। তবে এনআইডি পেতে আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি দিতে তাদের আসতে হবে ইসিতে।
সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে সৌদি আরব থেকে। দেশটিতে বসবাসরত এক হাজার ৬২১ জন প্রবাসী অনলাইনে ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। এদের মধ্যে এক হাজার ৪৮১ জনের আবেদনের তদন্ত হয়নি। অনুমোদন হয়েছে ৯৫ জনের আবেদন।
সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আবেদন এসেছে এক হাজার ৩৭৫টি, এর মধ্যে তদন্ত হয়নি এক হাজার ২৫৪টির, আর অনুমোদন হয়েছে ৬৩ জনের আবেদন।
এক হাজার ২১৬টি আবেদন পড়েছে যুক্তরাজ্য থেকে, এর মধ্যে তদন্ত হয়নি এক ৮০টির, আর আবেদন অনুমোদন হয়েছে ৫১ জনের।
মালয়েশিয়া থেকে আবেদন করেছে ৪৮৭ জন, এদের মধ্যে ৩৯৩ জনের আবেদনের তদন্ত হয়নি, আর অনুমোদন হয়েছে ৪৪ জনের আবেদন।
সিঙ্গাপুর থেকে আবেদন করেছেন ৩৯১ জন, এদের মধ্যে ৩৫৯ জনের আবেদন পড়ে আছে টেবিলে, আর তদন্ত শেষে অনুমোদন পেয়েছে ১৬ জনের আবেদন।
এছাড়া মালদ্বীপ থেকে ৪৮ জন আবেদন করেছেন, ৪৩ জনের আবেদনে জমছে ধুলো, তদন্ত শেষে অনুমোদন পেয়েছে তিনজনের আবেদন।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসীদের সংশ্লিষ্ট দেশে গিয়ে স্মার্ট এনআইডি সরবরাহের উদ্যোগটি বেশ সাড়া জাগানো হলেও নানা কারণে এটি থমকে আছে। করোনার দুই বছর এটির অগ্রগতিতে যে বাধার সৃষ্টি হয়েছিল তা আর গতি পায়নি। এ কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য ১শ কোটি টাকার থোক বরাদ্দও রাখা হয়েছিল। প্রতিবছর বাজেটে এই বরাদ্দ হালনাগাদও করা হয়। তবে সেটি সে পর্যন্তই। বিষয়টি এখন আর কোনো আলোচনা সভার এজেন্ডাতেও থাকে না।
এ বিষয়ে ইসির আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং এক্সেস টু সার্ভিসেস-আইডিইএ (স্মার্ট এনআইডি) প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক স্কোয়াড্রন লিডার শাহরিয়ার আলম বলেন, এনআইডি পেতে হলে আঙুলের ছাপ, চোখের আইরিশ দিতে হবে। যেগুলো আমরা সংশ্লিষ্ট দেশে গিয়ে নিতে পারছি না। তাই আবেদনকারীকে সশরীরে এসেই এগুলো দিতে।
এছাড়া যারা আবেদন করছেন, তারা যথাযথ কাগজপত্র দিতে পারছেন না। কিংবা যেগুলো জমা দিচ্ছেন অনলাইনে, সেগুলোর আবার অনেক ক্ষেত্রে সত্যতাও মিলছে না। কাজেই এই সমস্যাগুলোর সমাধান না হলে কেবল আবেদন করলেই এনআইডি পাওয়া যাবে না।
এদিকে দূতাবাসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশে গিয়ে আঙুলের ছাপ নেওয়ার বিষয়ে বর্তমানে কোনো আলোচনা নেই। তবে এজন্য অর্থ বরাদ্দ চলতি বছরও রাখা আছে। কমিশন সিদ্ধান্ত দিলে যেকোনো সময় হয়তো শুরু হতে পারে।
প্রবাসে দুই কোটির মতো নাগরিক রয়েছে। এদের বিভিন্ন ধরনের সেবা সহজ করতে প্রবাসেই এনআইডি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইসি। এজন্য services.nidw.gov.bd লিংকে গিয়ে আবেদনের সুযোগ রাখা হয়েছিল।
আবেদনের সঙ্গে যেসব দলিলাদি সংযুক্ত করার কথা বলা হয়েছিল:
বৈধ পাসপোর্টের কপি, বিদেশি পাসপোর্টধারী হলে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদের কপি বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র; বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে শনাক্তকারী একজন প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকের পাসপোর্টের কপি; বাংলাদেশে বসবাসকারী রক্তের সম্পর্কের কোনো আত্মীয়ের নাম-মোবাইল নম্বর, এনআইডি নম্বরসহ অঙ্গীকারনামা, বাংলাদেশে কোথাও ভোটার হয়নি মর্মে লিখিত অঙ্গীকারনামা ও সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের প্রত্যয়নপত্র অনলাইনে জমা দিতে হয়। এসব দলিলাদির সবগুলো দাখিল করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না বলেও মনে করেন অনেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩
ইইউডি/এএটি