ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

খুলনায় মেয়রপ্রার্থী খালেক ও মধুর বাগযুদ্ধ তুঙ্গে!

মাহবুবুর রহমান মুন্না ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৮ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২৩
খুলনায় মেয়রপ্রার্থী খালেক ও মধুর বাগযুদ্ধ তুঙ্গে! তালুকদার আব্দুল খালেক ও মো. শফিকুল ইসলাম মধু।

খুলনা: খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা না থাকলেও দুই মেয়রপ্রার্থীর মধ্যে তুমুল বাগযুদ্ধ শুরু হয়েছে।

প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেককে নানাভাবে দুষছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মেয়রপ্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম মধু।



তার এ বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিচ্ছেন তালুকদার আব্দুল খালেক। একে অন্যকে ঘায়েল করতে প্রচার-প্রচারণায় নামলেই গণমাধ্যমের সামনে বাগযুদ্ধে জড়াচ্ছেন। এতে খালেকের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক তিতো হয়ে উঠছে।

জাপাপ্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম মধুর বিরুদ্ধে কালো টাকা দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ এনেছেন আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক। আর সরকার দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে পেশিশক্তি ব্যবহারের অভিযোগ জাপার প্রার্থীরা।

কেসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক শনিবার (৩ জুন) দিনের প্রচারণা শুরু করেন বানরগাতী বাজার এলাকা থেকে। আর জাপার মেয়রপ্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম মধু প্রচারণা চালান সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে। ভোটারদের মন জয়ে প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি একে অন্যের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তাদের।

প্রচার-প্রচারণার সময় খালেককে উদ্দেশ্য করে মধু বলেন, আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট শূন্য আমার টাকা নাই।  অনেক দলের লোক দেখছি, প্রতিটি ওয়ার্ডে ২০০-৩০০ লোক নির্বাচনী কাজ করছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যে টাকা বাজেট করে দিয়েছে তাতে করে এত লোক কাজ করানো সম্ভব না। তাহলে এ টাকার উৎস কোথায়, নাকি তারা আলাউদ্দিনের চেরাগ খুঁজে পেয়েছেন মনে হয়। কালো টাকার ছড়াছড়ি হচ্ছে খুলনা সিটিতে, এটার সঠিক তদন্ত করা উচিত। তালুকদারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তলব করার দাবি জানাচ্ছি।

আরেক প্রচারণায় মধু বলেন, খুলনা সিটির রাস্তার টেন্ডার তো অনেক আগের। ১৫ বছর তারা ক্ষমতায়। একটাও মিল কারখানা চালু করতে পারেননি।  মানুষগুলো কোথায় যাবে। তাদের কাছে জবাব চান মিল কারখানাগুলো বন্ধ হলো কেন? জনগণ ভোট দেবে। জনগণ যদি ভোট দিতে পারে তাহলে দুর্বলের কী আছে। জনগণ ভোট দিতে পারলে লাঙ্গল প্রতীকের জয় হবে। নৌকা এবার ডুববে।
  
মধু আরও বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, ২৫০ বেড হাসপাতাল, জাদুঘর আমরা করেছি। এবার খেলা হবে। সুযোগ যদি পাই। ১০ বছর মেয়র যিনি ছিলেন তিনি কী কাজ করছেন? যে করেই হোক নির্বাচনে খালেককে জিততে হবে বলে তিনি কালো টাকা ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ মধুর।

অপরদিকে প্রচার-প্রচারণার সময় মধুকে উদ্দেশ্য করে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, কেউ প্রমাণ করতে পারবে না কালো টাকার ছড়াছড়ি করছি। মধুর মতো প্রার্থীর পক্ষে এসব সম্ভব। এরশাদ সাহেব ৮/৯ বছর ক্ষমতায় ছিল। তারা কী করেছেন তারাই জানে। নগরবাসী বিবেচনা করবে ২০০৮ সালের পর আমি কী করেছি আর ২০১৮ সালের পর আমি কী কাজ করেছি। এটা তো দৃশ্যমান। এটা তো আমার পকেটে নিয়ে ঘোরার বিষয় নয়। কাজের জন্য মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে না। কাজ হয়েছে বলেই তো এটা হচ্ছে। একসঙ্গে খুলনার ইতিহাসে ২০০-২৫০ রোডের কাজ এর আগে হয়নি। শিল্প-কারখানা নিভে যায়নি। আবার চালু হবে। তা বিক্রি করা হয়নি। টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। যারা আবার চালু করতে পারবে তাদের দেওয়া হবে। সক্ষম শ্রমিকরা সেখানে কাজ পাবেন।

তিনি আরও বলেন, যারা দুর্বল চরিত্রে লোক তাদের লোকজন কম তারা এসব কথা বলে নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে চায়। এখনও ২০০-২৫০ রাস্তার কাজ চলছে। তা যদি তাদের চোখে না পরে তাহলে কী করার আছে।  

দুই মেয়রপ্রার্থীর বাগ-বিতণ্ডায় জড়ানোর প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) খুলনা জেলা সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা বাংলানিউজকে বলেন, কেসিসিতে এবার উৎসবমুখর নির্বাচন নেই। মাঠে কোন উত্তাপ নেই। যেটা আছে তা বাগ-বিতণ্ডা। মেয়রপ্রার্থী মধু ও খালেক মিডিয়ায় একে অন্যকে কিছু কটু কথা বলে মাঠ গরম রাখছে।   

জানা যায়, কেসিসি নির্বাচনের মেয়র পদে পাঁচজন প্রার্থী হয়েছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক (নৌকা), জাপার শফিকুল ইসলাম মধু (লাঙ্গল), ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আব্দুল আউয়াল (হাতপাখা), স্বতন্ত্রপ্রার্থী এসএম শফিকুর রহমান মুশফিক (দেয়াল  ঘড়ি) ও জাকের পার্টির এসএম সাব্বির হোসেন (গোলাপ ফুল) প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।

নির্বাচনে কেসিসি মেয়র পদের প্রার্থীদের মধ্যে শক্ত অবস্থান ও অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে আছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। বিগত সময়ে তালুকদার আবদুল খালেকের হাত দিয়ে খুলনায় বেশ উন্নয়ন হয়েছে। তারপরও বিএনপি নির্বাচনে প্রার্থী না দেওয়ায় ভোটারদের বড় একটা অংশের ভোট দিতে আসা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

কেসিসি নির্বাচনে তালুকদার আবদুল খালেকের বিপরীতে দলীয় প্রার্থী রয়েছে জাতীয়পার্টি, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাকের পার্টির। যদিও খুলনায় জাপার তেমন কোন জনসমর্থন নেই। এর ওপর আবার দলীয় বিভক্তি রয়েছে। অন্যদিকে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাকের পার্টির জনসমর্থন তুলনামূলক অনেক কম। বিগত নির্বাচনগুলোতে এসব দলের প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

এবারের সিটি নির্বাচনে ৩১টি ওয়ার্ডে ২৮৯টি কেন্দ্রে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন ও পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন। আগামী ১২ জুন দ্বিতীয় ধাপে কেসিসি ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে ২৮৯টি কেন্দ্র ও এক হাজার ৭৩২টি ভোটকক্ষের সামনে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০২৩
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।