বরিশাল: শেষ মুহূর্তে এসে কৌশল পাল্টে নির্বাচনী প্রচারণার মাঠ সরগরম করছেন প্রার্থীরা। বিশেষ করে গোটা নগরবাসীর দৃষ্টিতে থাকা মেয়র প্রার্থীরা প্রচারণার মাঠে ব্যাপক সরব।
আর প্রচারণার হিসাব কষলে মাঠে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর সাথে প্রায় সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। আবার এই দুই দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কোনো বিষয় দৃশ্যমান না হওয়াকেও ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও প্রচারণার শেষদিকে এসে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বহিঃপ্রকাশের উত্তাপের কিছুটা প্রভাব হাতপাখাকে অস্বস্তিতে ফেলেছে।
অপরদিকে দল থেকে বহিষ্কার আদেশের পর যেন অনেকটাই স্বাচ্ছন্দে প্রচারণার মাঠে রয়েছেন বিএনপি পরিবারের সন্তান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন। ভোটাররা বলছেন, কোনো পদে না থাকলেও রুপনকে বহিষ্কার আদেশ দেওয়াটা অনেকটা ছায়া প্রার্থীর ঘোষণা দেওয়ার মতো।
নগরের বাসিন্দা ও ভোটার জাকারিয়া খান বলেন, যে স্কুলের ছাত্রই আমি না, সেই স্কুল থেকে যদি টিসি দেওয়া হয় তাহলে বিষয়টি কেমন দাঁড়ায়। সাবেক ছাত্রদল নেতা রুপনের ক্ষেত্রেও এমনটাই সাধারণ নাগরিক হিসেবে ধারণা করছি।
তিনি বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে যখন বরিশাল মহানগরের নেতারা চাউর করেছে রুপন তাদের কেউ না, সেখানে বিএনপির বহিষ্কার আদেশের মধ্য দিয়ে রুপনের বিষয়ে কী জানান দেওয়া হলো? সাধারণ নাগরিক হিসেবে চিন্তা করলে বলতে হয়, রুপন যে বিএনপির ছিল সেটার সীকৃতিই বহিষ্কারের আদেশ। আর এই হিসেবে যারা বিএনপির সমর্থক তারা তো অন্যদের ভোট দেওয়ার থেকে রুপনকে ভোট দেওয়াটা শ্রেয় মনে করতে পারেন।
দেশের ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ দেশ স্বাধীনের পর বরিশালের স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো দেখেছেন এমন একজন বরিশালের বানারীপাড়া ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক (অবসরপ্রাপ্ত) সহকারী অধ্যাপক নগরের বাসিন্দা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নজরুল হক নীলু। তিনি বলেন, নির্বাচনে গেলেই যে বিএনপি তাদের নেতাকর্মীদের বহিষ্কার করছে, বরিশালের ক্ষেত্রে তাদের এই কঠোরতার বিষয়টির একটি ফোকাস দিছে। এটা তাদের রাজনৈতিক স্ট্যান্ড।
তিনি বলেন, আমার ধারণা বিএনপির কোনো নেতারা ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। তারা যে বয়কট করেছেন, এটার একটা রাজনীতি ও ফলাফল রয়েছে।
এটা বোঝা যাবে কীভাবে সেই প্রশ্ন তুলে নজরুল হক নীলু বলেন, যদি কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম থাকে তাহলে বুঝতে হবে বিএনপির ভোটাররা কেন্দ্রে যায়নি। আর ভোটার যত কম হবে, তাতে ভোটে না গিয়েও বিএনপির বিজয় আছে। তারা বলতে পারবে আমার ভোটে যাইনি বিধায় ভোটার উপস্থিতি কম।
তিনি বলেন, তবে কিছু লোক আছে যারা কোনো পদ-পদবিতে নেই, শুধু সমর্থন করে বা বিএনপির শুধুই ভোটার তারা কিন্তু ধানের শীষে ভোট দেবে। তাদের ভোট নিয়ে কিছুটা টানাটানি ঘটবে। এক্ষেত্রে সেখান থেকে কিছু ভোট রুপনও পাবে, আবার এরমধ্যে যারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেই না তারা হাতপাখা ও জাতীয় পার্টিতে দিতে পারে। তবে এই ভোটের কিছু অংশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কাস্ট করানোর চেষ্টাও রয়েছে।
এছাড়া রুপনের বাবা প্রয়াত আহসান হাবিব কামালের সারা বরিশালেই কিছু সমর্থক রয়েছে। কারণ তিনি সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও নির্বাচিত মেয়র ছিলেন। এ ক্ষেত্রে আহসান হাবিব কামাল ভাইয়ের ভোটগুলোও রুপন পেতে পারে। তবে রুপন যে বিএনপির ছায়াপ্রার্থী এটা আমার মনে হয় না।
এদিকে সিটির সাবেক মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণ আওয়ামী লীগে যোগে দিয়ে জাতীয় পার্টির লোকদেরও সেখানে টান মেরে নিয়ে গেছেন বলে জানিয়ে নীলু বলেন, বরিশালের জাতীয় পার্টির ভোট কমে গেছে। তবে তাপস ব্যক্তি হিসেবে ভালো ছেলে বলে মত তার। আর হাতপাখাকে সিলেক্টিভ একটা সেকশন ভোট দেবে, এর বাইরে তাদের ভোট পাওয়াটা কষ্টকর হবে বলেও মত তার।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে খোকন সেরনিয়াবাতের কোনো কালিমা নেই, এটাই তার প্লাস পয়েন্ট হিসেবে দেখছেন জানিয়ে নীলু বলেন, তার জন্য আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে নামেনি, এটাই তার চিন্তার বিষয়। আর ভোটের দিন সকালেই বোঝা যাবে ঐক্যের বাইরে আওয়ামী লীগের কোনো অবস্থান ছিল কিনা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথেই নির্বাচনে ভোটযুদ্ধ হবে বলে মনে করেন সিনিয়র সাংবাদিক আনিছুর রহমান স্বপন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, নয়তো জাতীয় পার্টি হবে। তবে মূল শহরের ভেতরটাতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী তাপসের অবস্থানটা ভালো, যা নেই ইসলামী আন্দোলনের। যদিও বর্ধিত এলাকায় ইসলামী আন্দোলনের ভোট রয়েছে। এদিকে সাদামাটা স্বভাবের তাপসের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট শিক্ষক নেতা মহসিন উল ইসলাম হাবুলের জনপ্রিয়তাও কাজে লাগছে তাপসের ক্ষেত্রে। এটা বড় ফ্যাক্ট হয়ে দাঁড়াতে পারে, যার সুবিধা ভোটের দিনও পাবেন তাপস। সেক্ষেত্র ভোটে তাপসই ক্ষমতাসীনদের সাথে লড়াই করবেন বলে মত তার।
তিনি বলেন, এর বাইরে রুপন বিএনপি পরিবারের সদস্য হলেও তিনি তার বাবার অবস্থানে আসেননি এখনও। তবে তার বাবার কিছু ভোট তিনি পাবেন। আর তাকে বহিষ্কার করাটা বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল, তবে সেটা রুপন যাতে দলে আর ফিরতে না পারে সেরকম রাজনীতির ইঙ্গিত বলেই মনে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০২৩
এমএস/এমজেএফ