ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

বিসিসি নির্বাচন: প্রচারণা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত যা ছিল আলোচনায়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২৩
বিসিসি নির্বাচন: প্রচারণা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত যা ছিল আলোচনায়

বরিশাল: বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে প্রচার-প্রচারণা পর্যন্ত সর্বত্রই ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।

শুরুতেই বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের ঘোষিত একক প্রার্থী ও সিটি করপোরেশন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়ায় ঝড় উঠতে থাকে স্থানীয় রাজনীতির মাঠে।

সেসঙ্গে চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহকে (খোকন সেরনিয়াবাত) মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় গোমড়ামুখী হয়ে যান ভাতিজা সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারীরা। তারপরও নানান জল্পনা-কল্পনার মাঝে ভাতিজাবিহীন বরিশালের রাজনীতির মাঠকে চাঙ্গা করে বড় ভাই আলহাজ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সঙ্গে বুকে বুক মিলিয়ে নির্বাচনের মাঠে প্রচারণায় সরব ছিলেন খোকন সেরিনয়াবাত।  

যদিও সাদিক অনুসারীরা প্রথমে তার কর্মী-সমর্থকদের কিছুটা কোণঠাসা করার চেষ্টা করে। তবে নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মারধরের ঘটনায় মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ও বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়কের ১২ কর্মীসহ কারাবরণ নিবৃত করেছে পরিস্থিতিতে। আর শেষ দিকে এসে আমে দুধে মিলে যাওয়ার মতো স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের জোটবদ্ধ হয়ে প্রচারণার মাঠে দেখা গেছে।

এদিকে মেয়র পদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়াটা ছিল আলোচনার বাইরে। দলের শীর্ষ ওই নেতার মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর খোকন অনুসারীরা সাদিক ও তার পরিবারকে দোষারোপ করতে শুরু করেন। শুরু হয়ে যায়, কয়েকমুখী বাগ্‌যুদ্ধ। যা শেষ পর্যন্ত আদালতে গিয়ে গড়িয়েছে।  আবার ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক ভাইরাল ইস্যু তৈরি হলেও খুব সুন্দরভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছেন।

এছাড়াও প্রার্থী হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সরকার, নির্বাচন, বিরোধী দল ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে সরাসরি প্রকাশ্য মন্তব্য করে আলোচনায় ছিলেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। যদিও তার সহধর্মিণী ইসমত আরা স্বামীর জন্য ভোট চাইতে নেমে ভিন্ন এক আলোড়ন সৃষ্টি করেন, তবে তার আগেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর স্ত্রী লুনা আব্দুল্লাহ স্বামীর জন্য ভোট চাইতে মাঠে নামেন। এমনকি নারী ভোটার সংখ্যা সমান হওয়ায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ২৩ শত নারী কর্মী-সমর্থক বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে ভোট চাইতে মাঠে নামেন। তাদের বিরুদ্ধে ধর্মকে ব্যবহার করার অভিযোগ ওঠে একাধিকবার। যদিও এগুলো অপপ্রচার বলে দাবি করেন প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম।

অপরদিকে দল নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হওয়ায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়ে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ছিলেন কামরুল হাসান রুপন। দলীয় পদ না থাকলেও সাবেক ছাত্রদল নেতা হওয়ায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা এবং বহিষ্কারের পরও বিএনপির ভোট নিজের পক্ষে চাওয়ার বিষয়টিও ছিল আলোচনায়। সবশেষ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলিকিস জাহান শিরিনের ভোট চাওয়ার বিষয়ে কথা বলে স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়ান রুপন।

এছাড়া সাংবাদিকতা পেশা থেকে মেয়রপ্রার্থী হয়েই আলোচনার সৃষ্টি করেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. আসাদুজ্জামান। পুরো নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীর বিরুদ্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ, খোলা আকাশের নিচে ১৭ দফা ইশতেহার ঘোষণা ছিল তার আলোচিত বিষয়। বাকি দুই মেয়রপ্রার্থীর মধ্য থেকে তেমন কোনো বিষয় গণমাধ্যম বা স্থানীয়ভাবে তেমন একটা আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলতে পারেনি।

এদিকে সদ্য বিলুপ্ত হওয়ার মহানগর ছাত্রলীগ কমিটির আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্নার নগরের দুই নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়া নিয়েই নতুন আলোচনার সৃষ্টি হয়। বাছাইয়ে মনোনয়ন বাতিল, উচ্চ আদালতে বহাল আবার আপিলে প্রচারণা শেষের মাত্র কয়েকদিন আগে বাতিল হওয়ার বিষয়টিও নগরে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সেই সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা হয়ে নৌকার প্রচারণায় বাধা ও কারাবরণেও আলোচনার সৃষ্টি হয়। নির্বাচনের আগে জামিন পাওয়া ও তা আবার বাতিল হওয়ার বিষয়টিও ছিল আলোচনায়। যদিও আগে থেকে মান্নার বড়ভাই মুন্না হাওলাদারও নিজের প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়ে মাঠে ছিলেন। তবে মনোনয়ন বাতিল হওয়ার আগ পর্যন্ত মান্নার প্রচারণাই চালিয়েছেন মুন্না।

এদিকে নগরের ১১ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডেও একই পরিবারের দুইজন (দুই সহোদর) করে প্রতিদ্বন্দ্বীরা মাঠে রয়েছেন। উভয় ওয়ার্ডে এক ভাইকে অপর ভাই সমর্থন জানিয়ে প্রচারণার মাঠে নিষ্ক্রিয়  ছিলেন। যদিও সাধারণ ও সংরক্ষিত মিলিয়ে নগরের তিনটি ওয়ার্ডের স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন ও দেবর-ভাবি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠে রয়েছেন। এসব ঘটনার বাহিরে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা বিভিন্ন ধরনের ছোটো-খাটো অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় ভাইরাল হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে প্রচারণার মাঠে। তবে সব থেকে বেশি আলোচনার সৃষ্টি করেছে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শরীফ মো. আনিছুর রহমানের (আনিছ শরীফ) বক্তব্য। যেখানে তিনি নিজ দলের শীর্ষ নেতাদের মাধ্যমে হাতপাখার প্রার্থীর সঙ্গে অর্থনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ তোলেন। যা নিয়ে আদালত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাও দায়ের হয়।  এছাড়া বোরকা পড়ে রাতের আধারে ধর্মগ্রন্থ নিয়ে ভোট চাওয়ার একটি ভিডিও এবং সর্বশেষ জাতীয় পার্টির প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মহসিন উল ইসলাম হাবুলের সঙ্গে বস্তির নারী ভোটারদের বাগ-বিতাণ্ডার ভিডিও প্রচারণার মাঠকে আলোচিত রেখেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বাইরে নগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটারদের অর্থ বিতরণ ঠেকাতে কাউন্সিলর জাকির হোসেন ভুলু কর্মীদের রাত জেগে পাহারা দেওয়া, দুই নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট এ কে এম মুরতজা আবেদীন ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মারুফ হোসেন জিয়াকে প্রচারণায় প্রতিপক্ষের বাধা, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শাকিল হোসেন পলাশকে মারধর করা এবং বিভিন্ন ওয়ার্ড ও কলোনিতে ক্ষমতাসীন প্রার্থীদের অর্থ বিতরণের প্রমাণবিহীন অভিযোগগুলো কথার ঝড় তুলেছে। সেসঙ্গে সাধারণ ওয়ার্ডে ১১৫ পুরুষ প্রার্থীর সমান তালে তিন নারী প্রার্থীর প্রচারণাও ছিল পজিটিভ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।  

এসব আলোচনা ছাপিয়ে আগাম সব প্রস্তুতি নেওয়াতে, ভোট উৎসব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির। পাশাপাশি তিনি ভোট দিতে ভোটারদের কেন্দ্রে আসার জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২৩
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।