ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

মেরামত না হলে অচল হওয়ার শঙ্কায় ইভিএম

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৫ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০২৩
মেরামত না হলে অচল হওয়ার শঙ্কায় ইভিএম সংগৃহীত ছবি

ঢাকা: হাজার হাজার কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) অচল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কেননা, ছোট-খাটো ত্রুটি সারার মতোও টাকা নেই প্রকল্পে।

 

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবহারের লক্ষ্যে ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার প্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়ার হয়েছিল। কিন্তু বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার কারণে সরকার সেই প্রস্তাব স্থগিত রেখেছে। পরবর্তীকালে হাতে থাকা ইভিএম দিয়ে ৭০টি আসনে ভোট করার জন্য মেরামত, সংরক্ষণ প্রভৃতির জন্য সাড়ে ১২০০ কোটি টাকার প্রস্তাব দিলে, সরকার সেটিও নাকচ করে দেয়। ফলশ্রুতি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এই ইভিএমের ব্যবহারের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসে কমিশন। বর্তমানে হাতে থাকা দেড় লাখ ইভিএম দিয়ে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ভোটগ্রহণ করছে ইসি।  

হাতে থাকা ইভিএমগুলোর মধ্যে ৪০ হাজার মেশিন ইতোমধ্যে ব্যবহার অনুপযোগী হয়েছে পড়েছে। অবশিষ্ট ১ লাখ ১০ হাজারের ইভিএমের মধ্যে অধিকাংশগুলোতে রয়েছে নানা ধরনের ত্রুটি। কিন্তু নেই নতুন কোনো প্রকল্পের অর্থের যোগান। ফলশ্রুতি হাজার হাজার কোটি টাকার ইভিএম অচল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) কাছ থেকে ‘উন্নতমানের ইভিএম তৈরি করে নেওয়া হয়। এতে ইভিএম প্রতি ব্যয় হয় ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকার মতো। কন্ট্রোল ও ব্যালট ইউনিট মিলে একটি সেট, যা একটি ইভিএম হিসেবে ধরা হয়। এক্ষেত্রে প্রায় প্রতিটি সেটেই কোনো না কোনো সমস্যা রয়েছে। এগুলো সারাতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে সেগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়বে।

সম্প্রতি নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এতে ইভিএম প্রকল্পের পরিচালকও এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বর্তমানে ইভিএম মেশিন যথাযথ সংরক্ষণ, ছোট-খাটো মেরামতের জন্য ব্যয় ব্যতিরেকে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। তার প্রস্তাবে সায় দেন কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান।  

পরবর্তীসময়ে তিনি প্রকল্প পরিচালককে বিষয়টি কমিশনে উত্থাপনের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন উপস্থাপনের নির্দেশ দেন। এক্ষেত্রে ইভিএমের ভবিষ্যৎ ব্যবহার, সংরক্ষণ ও রক্ষণা-বেক্ষণসহ সার্বিক বিষয় প্রস্তাবে উল্লেখ করার জন্য বলেন।

এক-এগার সময়কার এটিএম শাসমুল হুদার কমিশন নির্বাচন ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ছোঁয়া দিতে ইভিএম প্রচলন করেন। সে সময় বুয়েট থেকে মেশিনগুলো তৈরি করে নেওয়া হয়। দাম পড়ে ১২ হাজার টাকার মতো। স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ভালোভাবেই ব্যবহার করা হচ্ছিল এই মেশিন।

পরবর্তীকালে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সময় রাজশাহী সিটি নির্বাচনে (আরসিসি) একটি মেশিন বিকল হয়ে পড়লে, পুনরায় সেই নির্বাচন করতে হয়। ২০১৫ সালে বিকল ওই মেশিনটি ঠিক করতে কোনো কূলকিনারা না পেয়ে অবশেষে ইভিএমগুলো নষ্ট করে নতুন করে ‘উন্নতমানের ইভিএম’ তৈরি সিদ্ধান্ত নেয় রকিব কমিশন।

এরপর কেএম নূরুল হুদার কমিশন দায়িত্বে এসে সেই সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করে বিএমটিএফের কাছে দেড় লাখ ইভিএম কেনে। হাতে নেওয়া হয় ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প। কিন্তু সেই প্রকল্পে ইভিএম সংরক্ষেণ কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, গোডাউনে রাখতে হয় মেশিনগুলো। আর এ কারণেই বেশিরভাগ মেশিন নষ্ট হয়েছে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ২২২৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০২৩
ইইউডি/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।