ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

বাগেরহাট -২ (বাগেরহাট সদর ও কচুয়া) আসন

তন্ময়ে ভরসা আ.লীগের, বিএনপিতে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী

এস.এস শোহান, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২৩
তন্ময়ে ভরসা আ.লীগের, বিএনপিতে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী শেখ তন্ময়, এটিএম আকরাম হোসেন তালিম, এম এ সালাম, খান মনিরুল ইসলাম, ফকির তারিকুল ইসলাম ও হাজরা শহিদুল ইসলাম বাবলু (বাঁ থেকে)

বাগেরহাট: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরব হয়ে উঠেছে বাগেরহাটের রাজনৈতিক অঙ্গন। প্রধান বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি ছোট ছোট দলগুলো নির্বাচনকেন্দ্রিক জনসভা ও ঘরোয়া সভা করছে।

 

অবস্থানগত কারণে বাগেরহাটের চারটি আসনই যেকোনো দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে বাগেরহাট সদর ও কচুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত বাগেরহাট-২ আসন সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।  

কারণ, স্বাধীনতার পরে বিভিন্ন জাতীয় নির্বাচন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এই আসনে থেকে যে দল নির্বাচিত হয়েছে, তারাই সরকার গঠন করেছে। এছাড়া জেলা সদর হওয়ায় দুই দলই মরিয়া থাকে এই আসনে জয়লাভ করার জন্য।  

আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ধারণা, এবারও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা তার ভাতিজা শেখ তন্ময়কে এই আসন থেকে মনোনয়ন দেবেন। এদিকে জেলা বিএনপির মধ্যে গ্রুপিং থাকায় এই আসনে দলীয় প্রার্থী নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে।  

নির্বাচনের অল্প সময় থাকলেও, বাগেরহাট বিএনপি চলছে আহ্বায়ক কমিটিতে। শুধু তাই নয়, প্রকাশ্যে রয়েছে দলীয় কোন্দল।  

বিভিন্ন সময় বর্তমান আহ্বায়ক এটিএম আকরাম হোসেন তালিম ও সাবেক সভাপতিকে পৃথক পৃথকভাবে দলীয় কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। তবে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দাবি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ধানের শিষ প্রতীক জয়লাভ করবে।

এই আসনটিতে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এখন পর্যন্ত জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালাম, বিএনপি নেতা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার আসামি খান মনিরুল ইসলাম মনি, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এটিএম আকরাম হোসেন তালিম, সদস্য ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এবং জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফকির তালিকুল ইসলামের  নাম শোনা যাচ্ছে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী বলছেন, এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এমএএইচ সেলিম ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বাগেরহাটে প্রচুর উন্নয়ন কাজ করেছেন। যদি দলীয় অবস্থা অনুকূলে থাকে তাহলে তিনি নিজেই নির্বাচন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে উন্নয়নের স্বার্থে বাগেরহাট-২ আসনের ভোটাররা এমএএইচ সেলিমকেই ভোট দিবেন।

অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকেও প্রার্থী দেওয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে মাওলানা মো. সাইফুল্লাহ ও মাওলানা মো. ওমর ফারুক আলোচনায় রয়েছেন।  

দল এককভাবে নির্বাচন করলে এ আসনে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক হাজরা শহিদুল ইসলাম বাবলু প্রার্থী হবেন বলে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।

বিএনপির নেতাকর্মীদের মতো বাগেরহাটের সাধারণ ভোটারদের ধারণা, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে না হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে না নির্বাচন।

শরিফুল ইসলাম নামের এক ভোটার বলেন, ভোট মানেই উৎসব। কিন্তু গেল দুটি নির্বাচনে বাগেরহাটে উৎসবের কোনো ছিটেফোঁটাও ছিল না। ২০১৪ সালে তো নির্বাচনই হয়নি। ২০১৮ সালে হয়েছিল তাও নির্বাচনের মতো নয়।

মো. ইমরান মোল্লা নামের এক ব্যক্তি বলেন, একটা সময় ছিল নির্বাচন এলে নেতাকর্মীরা বাড়িতে বাড়িতে আসতেন। এমপি প্রার্থীরা ইউনিয়নে ইউনিয়নে ও গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ডে সভা করতেন। জনগণের সাথে দেখা করতেন। অনেক প্রতিশ্রুতি দিতেন, এখন তো আর ভোট লাগে না, প্রার্থী হলেই নির্বাচিত হওয়া যায়, তাই আমাদের মত ভোটারদের তেমন মূল্য নেই।

আওয়ামী লীগ কর্মী মোস্তাক শেখ বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই এই এলাকার উন্নয়ন হয়। শেখ তন্ময় আমাদের এমপি, আগামীতেও আমরা শেখ তন্ময়কে চাই।

যুবদল কর্মী সাইফুল ইসলাম বলেন, যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, বাগেরহাট-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হতে পারবে না। বিএনপির প্রার্থীকেই ভোটাররা বেছে নেবে।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক যুবদলের এক নেতা বলেন, ফকির তারিকুল ইসলাম কর্মীবান্ধব নেতা। তাকে মনোনয়ন দিলে কর্মীরা আন্তরিকভাবে কাজ করবেন।  

বাগেরহাট জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক হাজরা শহিদুল ইসলাম বাবলু বলেন, দেশের তিনশ’ আসনেই জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে প্রার্থী দেওয়া হবে। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে যদি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হয়, সেক্ষেত্রে বাগেরহাট-২ আসন থেকে আমি নিজেই প্রার্থী হব। আশা করি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে।

বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালাম বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে না হলে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। তবে আমাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেমে নেই। বাগেরহাটে দলীয় নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে কাজ চলছে। উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপি ও সকল অঙ্গসংগঠনের কমিটি পুনর্গঠন করা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের নামে দেওয়া গায়েবি মামলার বিষয়ে দল থেকে আইনি সহযোগিতা করা হচ্ছে। এছাড়াও কেন্দ্র ঘোষিত সকল কর্মসূচি সফলভাবে পালন করা হচ্ছে। যদি দল নির্বাচনে যায় সেক্ষেত্রে বিএনপির চেয়ারপার্সনের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষ আমরা কাজ করব। বিজয় আমাদেরই হবে।

বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময় বলেন, জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। আগামীতেও আমাদের সঙ্গে থাকবে। বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে তাহলেও নির্বাচন হবে, আর না আসলেও নির্বাচন হবে। আমরা যথারীতি সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন করব।

বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ভুঁইয়া হেমায়েত উদ্দিন বলেন, আশা করি বর্তমান সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়কেই বাগেরহাট-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন দেবেন প্রধানমন্ত্রী। দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয় জনগণ তাই-ই চায়।  

এর পরেও দলের সভাপতি যাকেই মনোনয়ন দেয় বাগেরহাট  জেলা আ.লীগ তার পক্ষেই কাজ করবে বলে জানান তিনি।

বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক প্রকৌশলী এটিএম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, আমরা এখন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। ২০১৮ সালে দল যাদের মনোনয়ন দিয়েছিল, বাগেরহাট-২ আসনের প্রার্থী প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার থাকবে।

সর্বোপরি দল যাদেরকে মনোনয়ন দেবে বাগেরহাট জেলা বিএনপি তাদের জন্য কাজ করবে বলে জানান তিনি।

নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে, বাগেরহাট ২ আসনে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৮ জন ভোটার রয়েছেন। এরমধ্যে ১ লাখ ৫৯ হাজার ১৯২ জন পুরুষ এবং ১ লাখ ৬ হাজার ৩৬৪ জন নারী ভোটার রয়েছেন।

খানজাহানের পুণ্যভূমি এই আসনটি জাতীয় নির্বাচনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে ধারণা সাধারণ মানুষের। সে হিসেবে বরাবরই প্রধান দুই দলের হেভিওয়েট প্রার্থী থাকেন।

গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটিতে ১৯৯১ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত দুই বার বিএনপি এবং চারবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিবারই দলগুলোর হেভিওয়েট প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে থাকেন এখান থেকে। ১৯৯১ সালে এই আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী এএসএম মোস্তাফিজুর রহমান নির্বাচিত হন। পরে তিনি বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীও হয়েছিলেন।  

১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী মীর সাখাওয়াত আলী দারু এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। ২০০১ সালে শেখ হেলাল উদ্দিনকে হারিয়ে তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ এইচ সেলিম এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এম এ এইচ সেলিম বিএনপির অন্যতম প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ছিলেন। ২০০৬ সালের পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে আর প্রকাশ্য রাজনীতিতে দেখা যায়নি তাকে।  

পরে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে এম এ এইচ সেলিমের আপন ছোট ভাই এমএ সালাম নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে এমএ সালামকে হারিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি অ্যাডভোকেট মীর শওকত আলী বাদশা বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।  

২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় অ্যাডভোকেট. মীর শওকত আলী বাদশা আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।  

সর্বশেষ ২০১৮ সালে জেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি এমএ সালামকে হারিয়ে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও শেখ হেলাল উদ্দিন এমপির ছেলে শেখ তন্ময় এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

বাংলাদেশ  সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।