ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

পাঁচ বছরে লাখ টাকাও আয় বাড়েনি এমপি মোকাব্বিরের!

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩
পাঁচ বছরে লাখ টাকাও আয় বাড়েনি এমপি মোকাব্বিরের!

সিলেট: পাঁচ বছরে বর্তমান সংসদ সদস্যদের অনেকে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ব্যতিক্রম কেবল সিলেট-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান।

ক্ষমতার পাঁচ বছরে সম্পদের ছিটেফোঁটাও বাড়েনি তার। আয়ও ছাড়ায়নি লাখের কোটা। তবে পেশা বদল হয়েছে। প্রবাসী ব্যবসায়ী থেকে হয়েছেন ‘রাজনীতিবিদ’।

নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত তার হলফনামায় এ তথ্য উঠে এসেছে।  

যদিও হলফনামায় সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী ভাতা উঠে আসেনি। অথচ বিগত দিনে এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্যদের রয়েছে বিপুল সম্পদ ও অর্থকড়ি। যা এবারে তাদের হলফনামাও উঠে এসেছে।       

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে প্রার্থী হয়ে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোকাব্বির খান।  

পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে আবারও প্রার্থী হয়েছেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতির দায়িত্বে থাকা মোকাব্বির খান।  

গত ৩ ডিসেম্বর মনোনয়ন বাছাইয়ে দলীয় প্রধানের স্বাক্ষর জটিলতায় তার মনোনয়ন বাতিল করেন রিটানিং কর্মকর্তা সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান। ভোটের মাঠে ফিরতে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন তিনি।  

অবশেষে সোমবার (১১ ডিসেম্বর) আপিল শুনানির দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পান মোকাব্বির খান।

হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছর সংসদে থাকলেও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাড়েনি তার। এবার নির্বাচনে হলফনামায় নিজের সম্পদ বিবরণীতে এই প্রার্থী নিজের এবং নির্ভরশীলদের কোনো আয় দেখাননি।   

পাঁচ বছরে অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ মাত্র এক লাখ টাকা দেখিয়েছেন হলফনামায়। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৬৯ হাজার ২২৮ টাকা, আসবাবপত্র দেখিয়েছেন ২ লাখ টাকার। আর স্থাবর সম্পদের মধ্যে যৌথ মালিকানায় প্রার্থীর অংশে ৪ বিঘা জমি এবং যৌথ মালিকানায় একটি বাড়ির মালিক তিনি। যা একাদশ সংসদ নির্বাচনে হলফনামায়ও এই সম্পদ উল্লেখ করেছিলেন।  

সে সময় পেশা বিদেশে ব্যবসা দেখালেও এবার পেশা দেখান রাজনীতি। সেই সঙ্গে অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছিলেন নিজ নামে নগদ এবং ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকা করে দেখান। আর আসবাবপত্র আগেও দুই লাখ টাকা দেখিয়েছিলেন, এবারো তা-ই আছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় বছরে আয়ের কোটা শূন্য দেখিয়েছিলেন। এবারও বছরে আয় শূণ্যের কোটায় রয়ে গেছে তার।

এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরীর বছরে আয় দেখান ৪ লাখ ৬১ হাজার ৯১৭ টাকা। অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন এক কোটি ৯০ লাখ ৭৮ হাজার ১৩৫ টাকার।  

এরমধ্যে স্বর্ণ ১০০ তোলা বিবাহকালীন অর্জনমূল্য দেখিয়েছিন ১ লাখ টাকা। আর স্থাবর সম্পদ দেখান ৩৫ লাখ ২৯ হাজার ৪৮ টাকার। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২২ দশমিক ৮২ একর চা বাগানের মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র ২৯ হাজার ২৯২ টাকা।

এই আসন থেকে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকে মহাজোটের প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হলেও মোকাব্বির খানের কাছে পরাজিত হন।

এবার হলফনামায় এনআই অ্যাক্টের ৪টি মামলার তথ্য দেন। এর ২টিতে খালাস এবং ২টি চলমান রয়েছে। পেশা দেখিয়েছেন দেশ ফিসারিজ অ্যান্ড অ্যাগ্রো। এইখাতে বছরে আয় ৯ লাখ ১০ হাজার ৫০০ টাকা, শেয়ারে ৪ লাখ টাকা, ভাইবোনদের রেমিটেন্স আসে ১৩ লাখ ৭৪ হাজার ২৬০ টাকা।

তিনি অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন ৬৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকার। তন্মধ্যে নগদ ৮ লাখ ও ব্যাংকে জমা এক লাখ ৪৩ হাজার টাকা, গাড়ির দাম দেখিয়েছেন ৫১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, স্বর্ণ, আসবাবপত্র ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী এক লাখ করে ৩ লাখ টাকার। তবে স্থাবর সম্পদের কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি তিনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনেও হলফনামায় ইয়াহইয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোনো মামলার তথ্য ছিল না। বছরে দেখিয়েছিলেন ব্যবসা ও সম্মানী ভাতা বাবদ ১২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছিলেন ৮৪ লাখ ৬৮ হাজার ৪৪৪ টাকা।  

এরমধ্যে নগদ টাকা ছিল ১৭ লাখ ৬৬ হাজার ৩৬৪ টাকা। ব্যাংকে ৪ হাজার ২৮২ টাকা, মোটরগাড়ির মূল্য দেখান ৬৩ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৮ টাকা, স্বর্ণ, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র এক লাখ করে ৩ লাখ টাকার।

এছাড়া দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবসা থেকে বছরে আয় দেখিয়েছিলেন ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে নগদ টাকার পরিমাণ ছিল এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। ওই সময়ও কোনো স্থাবর সম্পদ উল্লেখ করেননি এই প্রার্থী। দশম থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের পাঁ বছরেই তার অস্থাবর সম্পদ বাড়ে  ৮১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৪৪ টাকা।    

এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলতাফুর রহমান সুহেলের হলফনামায় বছরে আয় ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে নগদ ৩০ হাজার টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা ৫ লাখ টাকার, স্বর্ণ স্ত্রীর ৪ ভরি ৪ লাখ টাকা মূল্যের, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র ১ লাখ টাকার উল্লেখ করেন।

তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী  মো. আব্দুল মান্নান খান পেশা ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনি বছরে আয় দেখান ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আর অস্থাবর সম্পদ আছে নগদ ৫ লাখ টাকা, অন্যান্য ২ লাখ টাকা, অকৃষি ২ একর ১৫ লাখ টাকা মূল্য।

বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী সিলেট-২ মো. জহিরের ব্যবসা থেকে বছরে আয় ৬ লাখ ১৭ হাজার ৮৪৪ টাকা, পেশা থেকে ২৫ হাজার ৩৩৩ টাকা, অন্যান্য জমি বিক্রির টাকা দেখান ১৬ লাখ ৫৪ হাজার। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ আছে ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৯১৩ টাকা, স্বর্ণ ৬ লাখ টাকার, আসবাবপত্র ৪০ হাজার টাকার একং স্ত্রীর নামে ২ লাখ ৯৪ হাজার ১৯৫ টাকার স্বর্ণ ও ২ লাখ টাকার আসবাবপত্র দেখান।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩
এনইউ/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।