ঢাকা: উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক ছাড়াও প্রার্থীদের প্রচারের সুযোগ দিতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধনেরও উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। কেননা, যারা দলীয় প্রার্থী তাদের প্রতীক আগে থেকেই জানা থাকে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সেটি থেকে বঞ্চিত হয়। অন্যদিকে, অনেকেই রাজনীতি না করলেও নির্বাচনে প্রার্থী হন। এক্ষেত্রে প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচার শুরু হলে নতুনদের পরিচিতি পেতেই অনেক সময় চলে যায়। এই বিষয়গুলো এড়াতে প্রতীক ছাড়াও যাতে প্রচার চালানো যায়, সে বিধান আনার কথা ভাবা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানার নেতৃত্বে গঠিত আইন সংশোধন কমিটির প্রস্তাব থেকে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় বিধি ৫ সংশোধন করার কথা ভাবা হচ্ছে। এতে বলা হয়েছে- প্রতীক বরাদ্দের আগে জনসংযোগ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার করা যাবে। তবে কোনো প্রার্থী পাঁচজনের অধিক সমর্থক বা আত্মীয় স্বজনকে সঙ্গে নিয়ে জনসংযোগ করতে পারবেন না। এছাড়া জনসংযোগে কোনোভাবেই পথসভা, মিছিল বা জনসভায় রূপান্তর করা যাবে না। এক্ষেত্রে জনসংযোগের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- জনসংযোগ অর্থ কোনো প্রার্থী কর্তৃক সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ, সাক্ষাত বা পরিচিত হওয়া কিংবা ভোটারদের মাঝে লিফলেটসহ নির্বাচনী প্রচারপত্র বিতরণকে বুঝাবে।
অন্যদিকে, বিধিমালায় ৫(ক) সংযোজন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো কোনো নির্বাচনে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারের বিধান আনার কথা ভাবা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রস্তাবে বলা হয়েছে- বিদ্যমান নির্বাচনী আইন ও আচরণ বিধিমালা প্রতিপালন সাপেক্ষে প্রার্থীরা কিংবা তাদের নির্বাচনী এজেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রচার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রার্থী কিংবা তার নির্বাচনী এজেন্টকে সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নাম, অ্যাকাউন্ট আইডি, ই-মেইল আইডিসহ সনাক্তকরণ তথ্যাদি রিটার্নিং অফিসারের কাছে দাখিল করতে হবে।
বিধিমালায় একগুচ্ছ বিষয় সংযোজন করার প্রস্তাব এসেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, জনসভা ও মিছিলের সুযোগ সৃষ্টি, প্রতি ইউনিয়নে একটি ও পৌরসভার প্রতি তিন ওয়ার্ডের জন্য একটি নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন, নির্বাচনী ক্যাম্পের আয়তন ৬০০ বর্গফুটে উন্নীত করা, পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি, একাধিক পদে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ না রাখা, ফলাফল গেজেট আকারের প্রকাশের ১৫ দিন পর্যন্ত ভোটের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যাহার না করা, নির্বাচনী মনিটরিং কমিটি গঠন ও কমিটির সুপারিশে বিধি ভঙ্গের অভিযোগ এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান, প্রার্থী আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র, নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বা পর্যবেক্ষক বা গণমাধ্যমকর্মীদের হুমকি-ভীতি প্রদর্শন বা বাধা দেওয়াকে অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা, ব্যালট পেপারের মুড়িতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার স্বাক্ষরযুক্ত করার বিধান ও ভোট বন্ধ করতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার হাতে ক্ষমতা দেওয়া।
আবার ভোটগ্রহণের আগে কোনো বৈধ প্রার্থীর মৃত্যু হলে অন্য প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধানের কথা বলা হয়েছে। তবে একজন প্রার্থী থাকলে নির্বাচনী কার্যক্রম বাতিল করে ফের কার্যক্রম নেওয়ার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। আর কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ভোটের ১০ দিন আগে মারা গেলে সেই দলকে অন্য এক প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ রাখার কথাও প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে।
সংসদ নির্বাচনের মতো ভোটের কোনো পর্যায়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন, বল প্রয়োগ বা কারসাজির কারণে নির্বাচনের ফলাফল পক্ষপাত দুষ্ট হয়েছে মর্মে কমিশনের কাছে প্রতীয়মান হলে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় ভোটগ্রহণ করার বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, বিধিমালায় কিছু কিছু জায়গায় অসংগতি আছে, কিছু অস্পষ্টতা আছে, সেগুলোর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছিল। তারা যে প্রস্তাব দেবে সবগুলোই যে গ্রহণ করব তাও নয়। এটা কমিশন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪
ইইউডি/এসআইএ