ঢাকা, শনিবার, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

নির্যাতনের শিকার দেলোয়ার নির্বাচিত হচ্ছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২৪
নির্যাতনের শিকার দেলোয়ার নির্বাচিত হচ্ছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মো. দেলোয়ার হোসেন পাশা

নাটোর: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের পথে অপহরণ ও মারধরের শিকার নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সেই চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. দেলোয়ার হোসেন পাশা।  

অনেক জল্পনা-কল্পনা শেষে চেয়ারম্যান পদ থেকে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক মো. লুৎফুল হাবিব রুবেল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার বিষয়টি অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

তবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে দেলোয়ারকে। কেননা, সিংড়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন দুজন প্রার্থী। যাচাই-বাছাই শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা লুৎফুল হাবিব রুবেল ও দেলোয়ার হোসেনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন। ইতোমধ্যে লুৎফুল হাবিবের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। ফলে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে দেলোয়ার হোসেন এখন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে।

এমনই ইঙ্গিত প্রকাশ করে রোববার (২১ এপ্রিল) বিকেলে নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ বাংলানিউজকে জানান, এ বিষয়ে তিনি এখন কোনো মন্তব্য করতে চান না। বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত ইসি থেকে আসবে। তারপর এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন কার্যালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বা ঘোষণা দেবে। তবে যেহেতু দুজন প্রার্থীর মধ্যে লুৎফুল হাবিব রুবেল তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। সেই ক্ষেত্রে দেলোয়ার হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার কথা।

তিনি বলেন, ২১ এপ্রিল দুপুর দেড়টার দিকে প্রার্থী লুৎফুর হাবীব রুবেলের পক্ষে প্রত্যাহার পত্রটি জমা দিয়েছেন তার প্রতিনিধি সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান  মিনহাজ উদ্দিন। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে তা পাঠানো হয়েছে। এখন ইসির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।  

এদিকে সকালে এক ভিডিও বার্তায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন লুৎফুর হাবীব রুবেল। আর গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তার শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেলকে ফোনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এছাড়া গতকাল শনিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি বর্ধিত সভা থেকেও অভিযুক্ত প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীবকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন উপজেলা আওয়ামী লীগ। অন্যথায় তার পক্ষে আওয়ামী লীগের কেউ নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেবেন না সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়।

এছাড়াও উপজেলা পরিষদের নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন যে, কোনো মন্ত্রী, সংসদ সদস্যের আত্মীয়-স্বজন নির্বাচন করতে পারবেন না। তারই আলোকে এ ঘোষণার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং জুনাইদ আহমেদ পলকের নির্দেশনা অনুযায়ী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন অভিযুক্ত এবং দেশব্যাপী আলোচিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীব রবেল।

উল্লেখ্য, গত সোমবার (১৫ এপ্রিল) মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য দেলোয়ার হোসেন ব্যাংকে জামানতের টাকা জমা দেওয়ার জন্য বের হন। এ সময় তারা জরুরি প্রয়োজনে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে গেলে সেখান থেকে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাসে করে কয়েকজন দুর্বৃত্তরা আলাউদ্দিন মুন্সিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে দেলোয়ার হোসেন নির্বাচন অফিস থেকে নেমে এলে তাকেও একটি মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে নেয়। এ সময় তারা তাকে গাড়ির ভেতর বেদম মারধর করে।  

পরে বিকেলে দেলোয়ার হোসেনের বাড়ির সামনে (সিংড়া উপজেলার কলম ইউনিয়নের পারসাঐল গ্রাম) সামনে ফেলে দিয়ে চলে যায়। চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণের দুটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়। দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ করে যে গাড়িতে তোলা হয় সেটি তার প্রতিদ্বন্দ্বী লুৎফুল হাবীব রুবেলের। পরে আহত দেলোয়ার হোসেনের ভাই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেন। এমনকি গ্রেপ্তাররা এ ঘটনার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লুৎফুল হাবীব রুবেলের স্বপক্ষে সংশ্লিষ্টতার কথা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে স্বীকার করেন।

এছাড়া ইতোমধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণের কাজে ব্যবহৃত সেই কালো রঙের মাইক্রোবাসসহ মো. আতাউর রহমান (৪৫) নামে একজনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে মাইক্রোবাসের ভেতর থেকে দুটি চায়না চাপাতি, একটি চায়না টিপ চাকু, একটি বার্মিজ কাটার, দুটি দেশীয় রামদা, দুটি স্টিলের পাইপ, দুটি স্ট্যাম্প লাঠি, একটি চাপাতি, নির্বাচনের পোস্টার, হ্যান্ডবিল, ক্যালেন্ডার জব্দ করা হয়। পাশাপাশি ওই মাইক্রোবাসটি থেকে প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. লুৎফুল হাবিব রুবেলের অসংখ্য লিফলেট, স্টিকার লিফলেট, ক্যালেন্ডার সম্বলিত পোস্টার ছবিও জব্দ করা হয়।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টার দিকে নাটোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার (এসপি) তারিকুল ইসলাম এ তথ্য জানান।  

এর আগে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সিংড়া উপজেলার চকপুর গ্রামের নিজ বাড়ির গ্যারেজ থেকে ওই মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করা হয়।  

এনিয়ে সারা দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় আরও তুঙ্গে ওঠে। এছাড়া চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবীব রুবেল প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়। বিব্রত পরিস্থিতিতে পড়েন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। পরবর্তী সময়ে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ারকে দেখতে যান এবং চিকিৎসা খোঁজখবর নেন।

পাশাপাশি শ্যালক রুবেলকে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন পলক। একই সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কোনো মন্ত্রী, এমপি বা আওয়ামী লীগ নেতার আত্মীয়-স্বজন কেউ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। বস্তুত সেই কারণে কপাল পুড়ল প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবীব রুবেলের। এছাড়া তার বিরুদ্ধে এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।