সাভার (ঢাকা): দ্বিতীয় পর্বের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ঢাকার সাভারে সকাল থেকে চলছে ভোটগ্রহণ। ভোটকেন্দ্রে ভোটার না আসায় অলস সময় পার করছেন নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
কয়েকজন করে সমর্থক কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেখা গেলেও ভোটার খুঁজে পাওয়া যায়নি। দেখা যায়নি ভোটারদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার চিত্র। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় যথাযথ প্রচার প্রচারণাও ছিল না সাভার উপজেলা নির্বাচনে। ফলে অনেক ভোটার জানেই না ভোটের খবর।
মঙ্গলবার (২১ মে) সকাল ৮ থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সাভেরর নিউ কেমব্রিজ, সাভার সরকারি কলেজ, কোন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডেইরি ফার্ম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; আশুলিয়ার আমার স্কুল, হাজী জয়নুদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের কোনো লাইন দেখা যায়নি।
সকাল ১০টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত আশুলিয়ার আমার স্কুল ভোটকেন্দ্রে কোনো ভোটারই আসেননি, হাজী জয়নুদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে সকাল ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ভোট পড়েছে ২টি এবং সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সাভার বিপিএটিসি ভোটকেন্দ্রে ভোট পড়েছে মাত্র ১০টি।
এছাড়া আশুলিয়ার আলিয়া মাদ্রাসার মহিলা কেন্দ্রে তিন ঘণ্টায় অর্থাৎ সকাল ১১টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ২টি। পর্যবেক্ষণ করা সকল ভোটকেন্দ্রের অবস্থা সকাল ১১টা পর্যন্ত প্রাই একইরকম লক্ষ্য করা গেছে।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে সাভার উপজেলা নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন মঞ্জুরুল আলম রাজীব। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় আমেজ ছিল না নির্বাচনী মাঠে। ভাইস চেয়ারম্যানদের নির্বাচনী প্রচারণা তেমন না থাকায় ভোটাররা জানেন না নির্বাচনের খবর। প্রচার-প্রচারণা, পোস্টার, লিফলেট ও মাইকিং করে ভোট চাওয়ার চিরাচরিত নিয়ম তেমন ছিল না বললেই চলে। মহাসড়ক ও সড়কের পাশে জনসংযোগ করলেও বাড়ি বাড়ি যাননি কোনো ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী। আর এতেই নির্বাচনের আমেজ পৌঁছায়নি ভোটারের ঘরে ঘরে।
স্থানীয় ভোটার মুদি দোকানদার আলী বলেন, আজ যে নির্বাচন হচ্ছে, এটা ভুলেই গিয়েছিলাম। আপনি বললেন তাই মনে পড়ে গেল। এই নির্বাচনের খবর অনেকেই জানে না। আমার অনেক ক্রেতাও নির্বাচনের খবর জানে না।
এরপর দোকানটিতে বেশ কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। তানিয়া আক্তার নামের এক ক্রেতা বলেন, আমরা সারা দিন কারখানায় কাজ করি। কোনো প্রার্থী কারখানাতেও যায়নি, বাসাতেও আসেনি। কোথাও কোনো পোস্টারও দেখিনি। কবে নির্বাচন এটাও তো জানি না। আগের নির্বাচনে মাইকিং শুনেছিলাম, এবার তো তাও শুনলাম না।
পোশাকশ্রমিক সেন্টু মিয়া বলেন, আজ যে নির্বাচন হচ্ছে তা সকালে জেনেছি, আগে শুনিনি। প্রস্তুতি না থাকায় ভোট দিতে যাইনি। আর কোনো প্রার্থী তো আসেনি ভোট চাইতে। কাকে ভোট দেব, প্রার্থীদের চিনিও না ঠিকঠাক মতো। এমন নির্বাচন এই প্রথম দেখলাম। নির্বাচন মানে উৎসব। কিন্তু যাদের নিয়ে এই উৎসব তারাই জানে না ভোটের কথা।
কেন্দ্রগুলোর দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, প্রথম ২ ঘণ্টায় ভোটারদের কাছ থেকে তেমন সাড়া পাননি তারা। ভোটার সংখ্যা কম থাকায় অনেকটা অলস সময় পার করছেন কেন্দ্রগুলোর দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং এজেন্টসহ অন্যান্যরা।
ডেন্ডাবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং অফিসার ওসমান গণি বলেন, এই কেন্দ্রে সকাল ১০টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত ভোটারশূন্য রয়েছে। এই কেন্দ্রে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ২০৪৫। কিন্তু সোয়া দুই ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও কোনো ভোটারই আসেননি।
সাভার উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৯ লাখ ৯১৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৪ লাখ ৬২ হাজার ২১২ এবং নারী ভোটার ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৬৬৮। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ১৫ জন।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে সাভার উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভাইস চেয়াম্যান পদে প্রতিন্দ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন—ঢাকা জেলা উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দিন, আশুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি মোশাররফ খান ও ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইদুল ইসলাম।
সংরক্ষিত মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা উত্তর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইয়াসমিন আক্তার সুমী, ঢাকা জেলা উত্তর যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি মনিকা হাসান ও অধ্যক্ষ নাদিয়া নুর তনু। যদিও পিতা মারা যাওয়ার পর ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এদের মধ্যে কাউকেই জনসংযোগ করতে দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৬ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২৪
এমজেএফ