ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

স্মার্ট এনআইডিকে ড্রাইভিং লাইসেন্স-ট্রাভেল ডকুমেন্ট হিসেবে ব্যবহার চায় ইসি

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪
স্মার্ট এনআইডিকে ড্রাইভিং লাইসেন্স-ট্রাভেল ডকুমেন্ট হিসেবে ব্যবহার চায় ইসি

ঢাকা: উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা স্মার্ট এনআইডি কার্ডকে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ট্রাভেল ডকুমেন্ট হিসেবে ব্যবহারের প্রচলন করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এছাড়াও নাগরিকের তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ই-কেওয়াইসি (ইলেকট্রনিক নো ইয়োর কাস্টমার) সিস্টেম ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়ার কথাও ভাবছে সংস্থাটি।

সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর এনআইডি ব্যবস্থাপনায় এমন সংস্কারের পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতোমধ্যে সংস্থাটির সচিব শফিউল আজিম এ সংস্কারের প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদে পাঠিয়েছেন।

এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে ১৮০টির বেশি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের এনআইডি ডাটা সেন্টারের ডাটা কানেক্টিভিটির মাধ্যমে জাতীয় তথ্য ভাণ্ডার হতে তথ্য যাচাই সেবা গ্রহণ করছে। এ ধরনের যাচাই সেবা গ্রহণের জন্য জাতীয় তথ্য ভাণ্ডারে কানেক্ট না হয়ে অফলাইনে স্মার্ট কার্ডের চিপসে রক্ষিত তথ্য রিড করে এবং একই সঙ্গে স্মার্ট কার্ড বহনকারী নাগরিকের ফিংগারপ্রিন্ট ম্যাচ করে নাগরিককে যাচাই করা যেতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি/বেসরকারি যেসব প্রতিষ্ঠানে নাগরিকদের সেবা দিতে সেবা গ্রহীতার তথ্য পূরণের প্রয়োজন হয় সেসব প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক নো ইয়োর কাস্টমার এর প্রচলন করা যেতে পারে।

সরকারি অফিসে স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হলে স্মার্ট কার্ডে তাদের তথ্য সংরক্ষণ করা ও স্মার্ট কার্ডকে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ট্রাভেল ডকুমেন্টস হিসেবে ব্যবহার করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য এনআইডি মহাপরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ধরনের সেবার প্রচলন করতে হলে সব নাগরিককে স্মার্ট এনআইডি কার্ড সরবরাহ করতে হবে। আর ইসির সার্ভার থেকে তথ্য যাচাই করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ই-কেওয়াইসি সিস্টেমে আসতে হবে।

২০১৬ সালের ২ অক্টোবর স্মার্ট এনআইডি কার্ড বিতরণ উদ্বোধন করে ইসি। এর আগে তৎকালীন এনআইডি মহাপরিচালক সংবাদ সম্মেলন করে ওই বছরের আগস্টে বলেছিলেন, স্মার্ট এনআইডি কার্ডে তিন স্তরে মোট ২৫টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথম স্তরের বৈশিষ্ট্যগুলো খালি চোখে দেখা যাবে। দ্বিতীয় স্তরেরগুলো দেখতে হলে যন্ত্র লাগবে। আর তৃতীয় স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য দেখতে ল্যাবরেটরিতে ফরেনসিক পরীক্ষা লাগবে।

এই কার্ডে মিলবে ২২ ধরনের সেবা। সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে- আয়কর শনাক্তকরণ নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট, চাকরির আবেদন, সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়, ব্যাংক হিসাব খোলা ও ঋণ প্রাপ্তি, সরকারি ভাতা উত্তোলন, ভর্তুকি, সাহায্য ও সহায়তা প্রাপ্তি ইত্যাদি। আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, বিমানবন্দরে আগমন-বহির্গমন সুবিধা, শেয়ার আবেদন ও বিও অ্যাকাউন্ট খোলা, ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন, বিবাহ-তালাক রেজিস্ট্রেশন, পরিষেবার সংযোগ, ই-টিকিটিং, সিকিউরড ওয়েব লগ ইন ও নির্ভুল তথ্য সঠিকভাবে সংযোগ ইত্যাদি সেবা। তবে এসব এখনো এ কার্ডের মধ্যে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

২০১৭ সালে তৎকালীন আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল স্মার্টাকার্ডকে কেন্দ্র করে নাগরিক সেবা দেওয়ার কী পরিকল্পনা করছেন। তিনি বাংলানিউজকে দেওয়ার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমাদের একটা সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইরাল স্ট্যাস্টিসটিক্স (সিআরভিএস) আছে। আমাদের স্মার্টকার্ডকে কেন্দ্র করে হেলথ রেকর্ড থেকে শুরু করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, নিরাপত্তা; এই ধরনের বেশ কিছু মানে... সার্ভিস ইনোভেশনের কাজ চলছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে আমাদের একটা চুক্তি হয়েছে, এজন্য আরও এক বছর লাগবে। তারপর আমরা বলতে পারবো যে, স্মার্টকার্ড ভিত্তিক কি কি সেবা আমরা জনগণের জন্য তৈরি করতে পারবো। ’

‘এখন গবেষণার কাজ চলছে। ৫২টা মন্ত্রণালয় ১২০টা সংস্থা আছে, তাদের সঙ্গে নিয়মিত ডায়ালগ হচ্ছে। রিকোয়ারমেন্টগুলো তৈরি করা হচ্ছে। এতে আমাদের একটা ন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচার তৈরি হয়েছে। একটা গাইড লাইন আছে, যে ইন্টারঅ্যাপারিবিলিটি কীভাবে নিশ্চিত হবে। যখন স্মার্টকার্ড থাকবে সবার হাতে, ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট, ধরুন পাসপোর্টের অ্যাকাউন্ট কিংবা ইটিআইএন এগুলো প্রত্যেকটাই কিন্তু একটা আরেকটার সঙ্গে ইন্টারঅ্যাপারেবল হবে। তো এ ইন্টারঅ্যাপারেবিলিটি যখন নিশ্চিত করা হবে, যখন এ স্ট্রাকচারটা গড়ে উঠবে, প্ল্যাটফরমটা; তখন কিন্তু আমরা একটা স্মার্টকার্ড থেকে একশ রকমের সুযোগ-সুবিধা পাবো শুধুমাত্র ভেরিফাই করলেই হবে। তাই এইটা নিয়েই এখন কাজ চলছে ১২০টা সংস্থার সঙ্গে। হয়তো এক বছর পরে আমরা কতগুলো সার্ভিস, কতগুলো সলিউশন নিয়ে আসতে পারবো সেটা হয়তো জানাতে পারবো। ’

পরবর্তীতে সেই উদ্যোগও আর এগোয়নি বলে জানা গেছে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারে পতনের পর বিভিন্ন দপ্তরের মতো ইসির সংস্কার নিয়ে আলোচনা হলে বর্তমান সচিব এনআইডি সেবায় সংস্কার আনার জন্য নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে ইসি সচিব শফিউল আজিম বলেন, আমরা একটা পরিকল্পনা মন্ত্রিপরিষদে পাঠিয়েছি। বিভিন্ন সংস্কারের কথা ভাবা হচ্ছে। আপনারা বাস্তবায়ন হলে অচিরেই জানতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪
ইইউডি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।