ঢাকা: জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগ নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে নিতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সিদ্ধান্ত ও আইনটি ছিল অসাংবিধানিক। তাই এনআইডি কার্যক্রম ইসির অধীনেই রাখার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রোববার (১২ জানুয়ারি) নির্বাচন ভবনে দ্বিতীয় কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
তিনি বলেন, আজ দ্বিতীয় কমিশন সভা ছিল। এতে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ও বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হযেছে। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০১০ রহিত করে ২০২৩ সালে একটি আইন করা হয়। যদিও এটা কার্যকর হয়নি। গত কমিশনের সময় এ আইনটি বাতিলের জন্য একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর একটি ডিও (আধা সরকারি পত্র) লেটার দেওয়া হয়। আমরা আলোচনার পর সিদ্ধান্ত আকারে সরকারের সঙ্গে পত্রালাপে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
দ্বিতীয় বিষয় যেটা আলোচনা হয়েছে, বিশেষ এলাকায় (চট্টগ্রাম অঞ্চল) ভোটার নিবন্ধনের জন্য ফরম-২ এর ব্যবহার নিয়ে। মাঠ পর্যায় থেকে আমাদের কাছে কিছু ফিডব্যাক এসেছিল যে এ ফরম পূরণ করতে গিয়ে সাধারণ নাগরিকরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। তাই এটা সহজীকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট উপ-কমিটিতে পাঠিয়ে সহজিকরণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একটি সিদ্ধান্ত হচ্ছে ক ক্যাটাগরির যারা ছিল, তারা মোটামুটি নিশ্চিত যে বাংলাদেশি। তাই রিকোয়ারমেন্ট উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাকি ক্যাটাগরিগুলো আছে সেগুলোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কমিটির মাধ্যমে আমাদের কাছে প্রস্তাবনা আসবে। আপনারা জানেন, ৫৬টি উপজেলা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত, যেখানে রোহিঙ্গা এবং বিদেশি নাগরিকদের প্রতারণামূলকভাবে ভোটার তালিকায় ঢুকে যাওয়ার প্রবণতা ঠেকাতে এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটা চলমান থাকবে।
তৃতীয় বিষয় যা আলোচনা হয়েছে সেটি ছিল জনবল ব্যবস্থাপনা। এতে আমরা যা আলোচনা করেছি তা হলো ইভিএম প্রকল্পটি গত জুন মাসে শেষ হলেও এখনও পর্যন্ত পুরোপুরিভাবে টেক ওভার করা হয়নি। প্রশিক্ষণ বাকি ছিল। শেষ এ সপ্তাহে হয়েছে। এ অবস্থায় ইভিএম ব্যবহার কতটুকু হবে না হবে সে ব্যাপারে আমরা জানি না। এ ব্যাপারে সংস্কার কমিশনের মাধ্যমেও কিছু প্রস্তাব আসতে পারে। সে আসুক না কেন, বর্তমান যে মেশিনগুলো আছে, সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ, দায়-দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা জরুরিভিত্তিতে দায়-দায়িত্ব বুঝে নেবো। ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত হবে এটা ব্যবহার হবে কি হবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনের এ মুখপাত্র বলেন, এনআইডি ইসির অধীনে থাকুক এটা নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা কোনো অ্যানালইসিসে যাচ্ছি না। আমাদের কাছে যেটা মনে হয়েছে এনআইডি নিয়ে যাওয়া এটা ইসিকে সাংবিধানিক সক্ষমতা যেটা দেওয়া আছে, তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
তিনি আরও বলেন, সাংঘর্ষিক এজন্য যে সংবিধান বলে দিয়েছে যে ভোটার তালিকা প্রস্তুত, নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। আপনারা জানেন, ২০০৭ সাল থেকে নির্বাচন কমিশন নিজে এটা ডেভেলপ করেছে। এ ডাটাবেজ থেকে ভোটার তালিকা ও এনআইডি হয়। শুধুমাত্র এনআইডি প্রিন্ট করার জন্য আরেকখানে যাওয়াটা আমরা যৌক্তিক মনে করি না।
সানাউল্লাহ বলেন, আমরা মনে করি আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে জনবল তৈরি করেছি। সক্ষমতা তৈরি হয়েছে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত। সুতরাং এটার ডুপ্লিকেশন হবে যদি এনআইডি নিয়ে যাওয়া হয়। তাই এটা নিয়ে যাওয়া সঙ্গত হবে না। নির্বাচন কমিশন প্রাইমারি ডাটার ভিত্তিতে ভোটার তালিকা তৈরি করবে। আমরা ডাটা কারো কাছে হস্তান্তর করতে পারবো না। যেহেতু সেন্ট্রালি একটা ডাটা সেন্টার আছে। তাই এটার ডুপ্লিকেশনের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২৫
ইইউডি/আরবি