ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

রাজনীতি-সংশ্লিষ্টদের ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে নিয়োগ নয়

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২৫
রাজনীতি-সংশ্লিষ্টদের ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে নিয়োগ নয়

ঢাকা: বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িতদের নিয়োগ দেওয়া যাবে না। একইসঙ্গে বয়স্ক, অদক্ষ এবং অপারদর্শীদেরও এ কার্যক্রমে নিয়োজিত না করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।



ভোটার তালিকা হালনাগাদে তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজারদের মাধ্যমে কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজার হিসেবে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষকরা নিয়োগ পেয়ে থাকেন।

ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখার কর্মকর্তারা জানান, আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু করা হবে। যাদের জন্ম ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে, এবার তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। সেজন্য নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ওই সিদ্ধান্ত দিয়েছে সংস্থাটি।

ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী এরইমধ্যে নিয়োগ সংক্রান্ত নির্দেশনাটি সব আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছেন।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভোটারযোগ্য ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ এবং সুপারভাইজারদের মাধ্যমে যাচাই কার্যক্রম ২০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সম্পন্ন করা হবে। এক্ষেত্রে ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি অথবা তার আগে যাদের জন্ম, তাদের এবং বিগত ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে যারা বাদ পড়েছেন, তাদের নিবন্ধনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হবে।  

এ কর্মসূচিতে ভোটার তালিকা থেকে মৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়া এবং আবাসস্থল পরিবর্তনের কারণে স্থানান্তরের কার্যক্রম চলবে। এ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য তথ্য সংগ্রহকারী, সুপারভাইজার, টিম লিডার, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, টেকনিক্যাল এক্সপার্ট বা সাপোর্ট, প্রুফ রিডার ও ডাটা এন্ট্রি হেলপার পদে নিয়োগ কার্যক্রম যথাসময়ে সম্পন্ন করা প্রয়োজন বলেও নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।

ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে গড়ে বিদ্যমান আড়াই হাজার ভোটারের জন্য একজন করে তথ্য সংগ্রহকারী এবং প্রতি পাঁচজন তথ্য সংগ্রহকারীর জন্য একজন করে সুপারভাইজার নিয়োজিত থাকবেন।  
তবে ভোটার এলাকার সঙ্গে সমন্বয় সাধন এবং ভৌগোলিক, প্রাকৃতিক, প্রশাসনিক, ভোটার এলাকার বিন্যাস ও অন্যান্য কারণে এই সংখ্যা কমতে বা বাড়তে পারে। বিশেষ করে ভোটার এলাকা অখণ্ড রাখার লক্ষ্যে এই সংখ্যা কম-বেশি হতে পারে।

ভোটার তালিকা বিধিমালা, ২০১২-এর বিধি ৪(৫) অনুযায়ী নির্ধারিত কর্মকর্তা বা কর্মচারী ও ব্যক্তিদের মধ্য থেকে তথ্য সংগ্রহকারী এবং সুপারভাইজার নিয়োগ করতে  হবে।

তথ্য সংগ্রহকারী নিয়োগ
সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী; সরকারি বা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত উচ্চ বিদ্যালয় বা মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক বা কর্মচারী; সরকারি বা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় বা মাদরাসার প্রধান শিক্ষক বা সহকারী প্রধান শিক্ষক বা সহকারী শিক্ষক বা কর্মচারী অথবা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বা সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন অফিস বা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ও সরকার অনুমোদিত কিন্ডারগার্টেন ও কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের মধ্য থেকে তথ্য সংগ্রহকারী নিয়োগ করতে হবে।

সুপারভাইজার নিয়োগ
সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা; সরকারি বা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত কলেজ বা সমপর্যায়ের মাদরাসার শিক্ষক ও কর্মকর্তা; সরকারি বা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় বা উচ্চ বিদ্যালয় বা মাদরাসার প্রধান শিক্ষক বা সহকারী প্রধান শিক্ষক বা সিনিয়র শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে সুপারভাইজার নিয়োগ করতে হবে।

তথ্য সংগ্রহকারী এবং সুপারভাইজার নিয়োগের বিধানে বর্ণিত ‘কর্মকর্তা; বলতে দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা এবং ‘কর্মচারী’ বলতে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী বোঝাবে।

নিয়োগের নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজারদের প্যানেল প্রস্তুত করার সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের কর্মদক্ষতা, কর্মক্ষমতা, সততা, সাহস ও নিরপেক্ষতার দিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।  

তাদের কর্মদক্ষতা, কর্মক্ষমতা, সততা, সাহস ও নিরপেক্ষতার ওপরই নির্ভুল ভোটার তালিকা অনেকাংশে নির্ভরশীল। তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজারদের প্যানেল প্রস্তুতের সময় যথাসম্ভব তাদের পদমর্যাদা, জ্যেষ্ঠতা, বেতন স্কেল ও মূল বেতন বিবেচনা করতে হবে।  

প্রয়োজনে প্যানেলে অন্তর্ভুক্তদের ব্যক্তিগত বিষয়াদি যেমন-তার শারীরিক, মানসিক অবস্থা, বয়স বা অন্য কোনো কর্মব্যস্ততা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে তালিকায় চিহ্নিত করে রাখতে হবে।

ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের সময়ে তথ্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিতদের মধ্য থেকে প্যানেলভুক্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন তথ্য সংগ্রহকারী যাচাই করে চূড়ান্ত নিয়োগ দিতে হবে। সুপারভাইজার নিয়োগের জন্য পূর্ব- অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং যোগ্য সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী ও সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।  
যদি প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল পাওয়া না যায়, তবে উল্লিখিত অন্যান্য পর্যায়ের কর্মকর্তা বা কর্মচারী ও শিক্ষকদের মধ্য থেকে তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজার নিয়োগ পাবেন।  

বয়স্ক, অদক্ষ, অপারদর্শী এবং রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তিদের কোনোক্রমেই তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না। দক্ষ, কর্মঠ ও স্থানীয় বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কর্মরতদের এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

এদিকে বাছাই কমিটির মাধ্যমে টিম লিডার, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, টেকনিক্যাল এক্সপার্ট বা সাপোর্ট, প্রুফ রিডার এবং ডাটা এন্ট্রি হেলপার নিয়োগের জন্য প্যানেল প্রস্তুতের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য নির্দেশনায় বলা হয়েছে। তবে কোনো জেলায় উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে একই কার্যক্রমের জন্য অন্য জেলার প্যানেল তালিকা থেকে এসব পদে নিয়োগ দেওয়া যাবে।

রেজিস্ট্রেশন টিম
প্রতি উপজেলায় কমপক্ষে একটি রেজিস্ট্রেশন টিম থাকবে। প্রতি টিমে চার-পাঁচজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, একজন টিম লিডার, দুইজন প্রুফ রিডার এবং একজন ডাটা এন্ট্রি হেলপার নিয়োগের ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে উপজেলার আয়তন এবং ভোটার সংখ্যা বেশি হলে সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন অফিসার প্রয়োজনে একাধিক রেজিস্ট্রেশন টিম গঠন করতে পারবেন। একজন অপারেটরকে প্রতিদিন গড়ে ৭০ জন ভোটারের ডাটা এন্ট্রি করতে হবে।

তথ্য সংগ্রহ শেষ হলে নিবন্ধনকেন্দ্রে নিবন্ধন (বায়োমেট্রিকসহ) সম্পন্ন করা হবে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে আগামী বছরের ২ মার্চ।

গতবারের নেওয়া তিন বছরের তথ্যের শেষ ধাপের হালনাগাদ কার্যক্রম চলমান। এতে ১৮ লাখের মতো ভোটার চলতি বছরের মার্চে যোগ হতে পারে। সবশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, দেশে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, ৪০ থেকে ৪৫ লাখ ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। তালিকায় দ্বৈত ভোটার যেন না থাকেন, মৃত ভোটার যেন বাদ দেওয়া যায় এবং নতুনদের অন্তর্ভুক্ত করে নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়নের জন্যই বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য হালনাগাদ করছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২৫
ইইউডি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।