ঢাকা: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেছেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অনেক সুপারিশ এসেছে যা বাস্তবায়ন হলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা, স্বাধীনতা খর্ব হবে। আর তা হলে নির্বাচন কেমন হবে তা অতীতে আপনারা দেখেছেন।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি-আরএফইডি টক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, সংস্কার কমিশনের অনেক সৃপারিশ বাস্তবায়ন হলে ইসির ক্ষমতা খর্ব হবে। অনেক সুপারিশ এসেছে, যা বাস্তবায়ন হলে স্বাধীনতা খর্ব হবে।
তিনি বলেন, আমি আগেও বলেছি, আমাদের যারা রিফর্মস কমিশনে ছিলেন তারা অনেক বিজ্ঞলোক। তাদের সব সুপারিশ গ্রহণযোগ্য এটা বলতে পারছি না। কারণ জুতা পায়ে না দিলে বোঝা যায় না ব্যথাটা কোথায় পাওয়া যায়। আমরা যারা দায়িত্বে আছি, তারা জানেন কোনটা বাস্তায়নযোগ্য, কোনটা নয়। আমরা সারমর্ম রিভিউ করে দেখেছি।
সিইসি বলেন, ইসির দায়িত্ব হচ্ছে সংসদ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ভোটার নিবন্ধন ও সীমানা পুনর্নির্ধারণ। এখন তারা সুপারিশ করেছেন ভোটার তালিকা ও সীমানা নির্ধারণ আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এজন্য স্বাধীন কমিশনের কথা বলা হয়েছে। এখন ইসিওতো স্বাধীন। আরেকটার তো দরকার নেই। এছাড়া তিনি (প্রস্তাবিত পৃথক কমিশন) সীমানা নির্ধারণ করতে তো ভোটের সময়ও পার হয়ে যাবে। আমার নিয়ন্ত্রণে তো থাকবে না। তিনি তো স্বাধীন। তাই অন্য কোনো কর্তৃপক্ষকে দেওয়া যুক্তিযুক্ত মনে করি না।
তিনি আরও বলেন, এনআইডি কার্যক্রমকেও পরবর্তীতে আলাদা অধিদপ্তরের কাছে দিতে বলেছেন তারা। এখন আমি ভোটার করবো, তাহলে কি আমার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ভোটার নিবন্ধন অন্য কারো কাছে দিয়ে দেওয়া বা সীমানা নির্ধারণ অন্য কারো কাছে দিয়ে দেওয়া; এটা ইসির যে সাংবিধানিক দায়িত্ব দেওয়া আছে, সেই স্পিরিটের বিরুদ্ধে। সুতরাং এই ধরণের সুপারিশ আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না। তারা (রাজনৈতিক দল) যদি পরবর্তীতে সংবিধান সংশোধন করতে চায়, সেটা ভিন্ন বিষয়। তবে বর্তমান যে সংবিধান, সেটার অধীনে এটা গ্রহণযোগ্য না।
এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, উনারা আরেকটা সুপারিশ করেছেন, যে ইসি যদি ব্যর্থ হয়ে যায় পাঁচ বছর পরে, যখন আমি থাকবো না, পার্লামেন্টারি কমিটি তদন্ত করে রাষ্ট্রপতিকে সুপারিশ করা যাবে ব্যবস্থা নিতে। এখন আমি যদি স্থানীয় নির্বাচন করতে যাই, সেখানকার রাজনৈতিক কোনো নেতা যদি সেই কমিটিতে থাকে এবং নিজের পছন্দমত ভোটকেন্দ্র চায়, আমি না দিলে তো আমাকে পাঁচ বছর পর দেখে নেবে।
তিনি বলেন, দেশে তো আইন আছে। কেউ তো ঊর্ধ্বে নয়। বিদ্যমান আইনেই অনেক রাষ্ট্রপতির বিচার হয়েছে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে এই দায়িত্ব দেওয়ার দরকার নেই। এতে আমাদের স্বাধীনতা টোটালি খর্ব হবে। আমি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবো নাতো। আমি নিশ্চিয়তা দিচ্ছি, যে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে যেমন জাতীয় নির্বাচনে হবে, স্থানীয় নির্বাচন আমরা সমভাবে করতে পারবো না যদি আমাদের স্বাধীনতা না থাকে। আমরা কোনো সংসদীয় কমিটির ওপর নির্ভরশীর হতে চাই না। এই সুপারিশগুলো বাদ দিতে হবে।
সিইসি বলেন, বর্তমান সিস্টেমে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি। এখানে পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।
সংস্কার কমিশনের অনেক সুপারিশ নিজ উদ্যোগেই বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরো বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের সময়ে যত সেমিনার হবে, ট্রেনিং হবে, ওয়ার্কশপ হবে আমরা কোরো অনারিয়াম আমরা নেবো না। কেননা, এটা আমাদেরই তো দায়িত্ব। ভোট কর্মকর্তাদের সম্মানিও রিভিউ করা হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা এনআইডি ইসিতে হোম মিনিষ্ট্রি থেকে নিয়ে আসা। আমরা এটা খুব দ্রুত নিয়ে আসতে পেরেছি। আরো সুপারিশ সংস্কার কমিশনের আছে, পরবর্তীতে বিস্তারিত মতামত দিতে পারবো।
সিইসি বলেন, আইনি বাধা দ্রুত করতে হবে। দ্রুত আমাদের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তাহলে আমরা কাজ করতে পারবো।
নির্বাচন কমিশনের কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন- আরএফইডি'র সভাপতি একরামুল হক সায়েমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৫
ইইউডি/জেএইচ