ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

খুলনা সিটির ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা

মাহবুবুর রহমান মুন্না, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২১ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৮
খুলনা সিটির ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা ভোট নেওয়া শেষে চলছে গণনা/ছবি: মানজারুল ইসলাম

খুলনা: দুই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত ও কয়েকটিতে জালভোট দেওয়ার অভিযোগ ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচন। মঙ্গলবার (১৫ মে) সকাল ৮টা থেকে নগরপিতা নির্বাচনের লক্ষ্যে একটানা ভোটগ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

নগরীর ২৮৯টি কেন্দ্রে এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।  এখন চলছে গণনার কাজ।

গণনা শেষে যত দ্রুত সম্ভব ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচনী কর্মকর্তা।
 
সকালে নিজ নিজ কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক ও বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু।

কেসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত শফিকুর রহমান মুশফিক (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক (হাত পাখা) ও সিপিবি মনোনীত মো. মিজানুর রহমান বাবু (কাস্তে)।

এদিকে মোট ১৯টি ওয়ার্ডের ৪০টি কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দিয়ে নৌকায় জালভোট দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে বিএনপি।  

রিজভী বলেন, বিএনপি মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু জানিয়েছেন সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পুলিশের সহায়তায় ৪০টি ভোটকেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। সকাল ৮টায় ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচটি ভোটকেন্দ্রসহ নুরানিয়া মাদ্রাসাকেন্দ্রের এজেন্টদের তালিকা নিয়ে যাওয়ার সময় মনির নামে এক বিএনপিকর্মীকে মারধর করে সন্ত্রাসীরা। নজরুল নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে বিএনপি এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

খালিসপুর-১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি এজেন্ট লিলি এবং লিমা আক্তারকে মধ্য পালপাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এলাকায় মারধর করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। তাদের এজেন্ট কার্ড ছিঁড়ে ফেলা হয়, মোবাইল ফোনসেট ছিনিয়ে নিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়।

তিনি অভিযোগ করেন, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে এইচ আর এইচ প্রিন্স আগাখান উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে পুলিশের সহযোগিতায় আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সাধারণ ভোটারদের বের করে দিয়ে নৌকা মার্কায় সিল মেরেছে। ২২ নম্বর ওয়ার্ডে জেলা স্কুল ও নতুন বাজার চর কেন্দ্রে যেতে ভোটারদের ব্যাপকভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া ৪ নম্বর ওয়ার্ডে দেয়ানা উত্তরপাড়া কেন্দ্রে বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর হামলা এবং বিএনপি কর্মী মিশুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ৩০ নম্বর রুপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে ধানের শীষের সমর্থকদের মারধর করে বের করে দিয়েছে।

অন্যদিকে বিএনপির এ অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, ভরাডুবির আশঙ্কা থেকে বিএনপি এমন অপ্রচার চালাচ্ছে।

নির্বাচনের পরিস্থিতি জানাতে মঙ্গলবার (১৫ মে) দুপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

এসময় তিনি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, নয়া পল্টনের রিজভী সাহেব আছেন, সেখান বসে সকাল থেকেই তিনি অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ভোটগ্রহণের ব্যাপারে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলছেন। ভরাডুবির আশঙ্কা দেখে মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছে বিএনপি।

তিনি বলেন, খুলনায় ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট প্রয়োগ করছেন। গণমাধ্যমই তার বড় সাক্ষী। সর্বশেষ পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা আশাবাদী। দিন শেষে বিপুল ভোটে নৌকার প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেককে নির্বাচিত করবেন খুলনাবাসী।

দিনভর কয়েকটি কেন্দ্রে নানা কেন্দ্র দখল অনিয়ম, অভিযোগ, ব্যালট পেপারে জোরপূর্বক সিল মারার ঘটনা ঘটেছে। আবার সুষ্ঠ ভোটও হয়েছে অনেক কেন্দ্রে। খুলনা আ’লীগের মেয়র প্রার্থী বলেন, ভোট ভালো হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী বলেন, অন্তত ৪০টি কেন্দ্রে অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে।

জাল ভোটের অভিযোগে একটি কেন্দ্রে ভোট বাতিল, দুটি কেন্দ্র এবং এবং একটি বুথে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। এর বাইরে একটি কেন্দ্রের অদূরে বিএনপির নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়েছে।

২৪ নং ওয়ার্ডের সরকারি ইকবাল নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট বন্ধ করে দেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আনিসুর রহমান। নৌকা প্রতীকে সিল মারার ঘটনায় এছাড়া রূপসা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও রূপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও ভোট স্থগিত হয় ।

জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে চারটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে দুপুরে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের লবণচোরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৌকা মার্কায় সিল মারার অভিযোগে কেন্দ্রটিতে ভোট স্থগিত রাখা হয়েছে।

২২ নম্বর ওয়ার্ডের ফাতিমা উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি বুথে স্থগিত করা হয় ভোট। সেখানেও নৌকা মার্কায় সিল মারা হচ্ছিল ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী আব্দুল মালেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রেও জাল ভোট দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

কলেজিয়াট স্কুলে জাল ভোট দেওয়ার ঘটনার ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। অভিযোগ উঠেছে ২৫ নং ওয়ার্ডের এতিমখানা মোড়ের নূরানি মাদ্রাসায় ভোটারদের হাতে কালি দিয়ে নিজেরাই ভোট দিয়েছে সরকার দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউনুচ আলী বলেন, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ভোট সুষ্ঠু হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৮
এমআরএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।