ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

মেয়র প্রার্থী নিয়ে কৌতূহল সিসিকে!

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৯ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৮
মেয়র প্রার্থী নিয়ে কৌতূহল সিসিকে! সিসিক নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা

সিলেট: সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটালো নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অবশেষে চূড়ান্ত হলো সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ভোটের দিন। অবশ্য নির্বাচনের মূল প্রক্রিয়া শুরু হবে আগামী ১৩ জুন, তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে।

তবে সিটি নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ হলেও মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি বড় দু’টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। যদিও সম্ভাব্য তালিকায়  ‘গ্রিন সিগন্যালে’ রয়েছেন একাধিক নেতা।

 

নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীতা নিয়ে কৌতূহলী বড় দুই দলের নেতাকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ। কে হচ্ছেন ‘নৌকার মাঝি’, ধানের শীষ ‘উঠছে কার হাতে’? কোন দল কাকে মনোনয়ন দেবে-এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পরই দলীয় প্রার্থীর চূড়ান্ত ঘোষণা আসার অপেক্ষায় রয়েছেন নেতাকর্মীরা। দুই দলের হেভিওয়েট দুই প্রার্থী ছাড়াও আছেন ডজনখানেক মেয়র প্রার্থী। ভোটের দিনক্ষণ জানার পরই উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা।  

চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নির্বাচনের উত্তাপ ছড়িয়েছে। তফসিলের আগে মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি কোনো দলই। প্রার্থী নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা থাকলেও নেতাকর্মীদের নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনার কমতি নেই।  

সিলেট সিটি করপোরেশন’র (সিসিক) যাত্রা শুরু করে ২০০১ সালের ৩১ জুলাই। তবে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৩ সালে। আর সবশেষ সিসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন।  

এবার চতুর্থবারের মতো সিসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সিটি মেয়র, ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নিয়ে ৩৭ সদস্যের সিটি পরিষদ।  

মনোনয়ন দৌড়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে সাবেক ও বর্তমান মেয়রকে। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে সামনে রেখে সিসিকের বর্তমান ও সাবেক দুই মেয়রই দলীয় হাইকমান্ড থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন এমন খবর একাধিকবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।  

তবে এ দুই নেতার দাবির সঙ্গে একমত নন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। প্রার্থীদের মতে, দু’জনই হারিয়েছেন তাদের জনপ্রিয়তা, তাই আগামী সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলেই নতুন মুখ দেখা যাবে।  
 
‘গ্রিন সিগন্যাল’র বিষয়টি প্রথম জানিয়েছিলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে হেরে সিলেট নগরভবনের প্রায় ১৮ বছরের টানা কর্তৃত্ব হারান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এই নেতা।  

গেলো বছরের জুলাই মাসে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভা শেষে কামরান ও রাজশাহীর সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠক শেষে নেত্রীর পক্ষ থেকে উভয়কেই সিটি নির্বাচনের জন্য ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেওয়া হয়েছে বলে জানান কামরান।  

এ নিয়ে নগরীতে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। তবে বিরূপ মন্তব্য আসে আওয়ামী লীগের অন্যান্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাছ থেকে। সর্বশেষ গত বছরের ২১ অক্টোবর সিলেটে সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচিতে এসে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ বিষয়টি বাতিল করে বলেন, মনোনয়নের মাঠ উম্মুক্ত। সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাকেই মেয়র পদে মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ।  

অন্যদিকে, সাবেক এ মেয়রের পথ অনুসরণ করেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও। সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হিসেবে দলীয় ‘গ্রীন সিগন্যাল’ পেয়েছেন বলে দীর্ঘদিন থেকে  দাবি করে আসছেন বর্তমান মেয়র আরিফ।  

গত বছরের ১৪ নভেম্বর আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানেই নেত্রী তাকে এমন নির্দেশনা দেন বলে দাবি করেন তিনি। তার এই দাবি মেনে নিতে পারেননি স্থানীয় বিএনপির নেতারাও।  

তাদের মতে, দলবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় আরিফুল হক বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। গ্রিন সিগন্যাল ফ্যাক্টর বাদ দিলে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের মেয়র পদে এবার সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা বেশ লম্বা।  

আওয়ামী লীগ থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ মনোনয়ন চাইছেন। সঙ্গে আছেন অর্থমন্ত্রীর প্রিয়ভাজন হিসেবে পরিচিত ত্রীড়া সংগঠক, বাফুফের সদস্য মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিম।  

এই ব্যবসায়ী এবং ক্রীড়া সংগঠকও এবার আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে মনোনয়ন চান। রয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদেরও নাম।

বিএনপির মনোনয়ন পাবার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ পদের দাবিদার বিএনপির মহানগর কমিটির সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমও।  

তারাও দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে নির্বাচন করতে তৎপর। এরইমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন সেলিম।  

এছাড়া গত নির্বাচনে মেয়র পদে জামায়াতের কোনো প্রার্থী না থাকলেও এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর আমির অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যদের নিয়ে সম্প্রতি তিনি নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন।  

জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী হিসেবে এককভাবে মাঠে রয়েছেন সাবেক পৌর কমিশনার আবদুস সামাদ নজরুল।  

এছাড়া বিএনপি থেকে বর্তমান প্যানেল মেয়র ও বিএনপি নেতা রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, যুবদল নেতা সালাহ উদ্দিন রিমন, খেলাফত মজলিসের আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রার্থী হিসেবে নিজেদের জানান দিয়েছেন। এখন প্রয়োজন কেবল দলের সিগন্যাল।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৮
এনইউ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।