ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

অপমানিত হয়েছি: মাহবুব তালুকদার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৮
অপমানিত হয়েছি: মাহবুব তালুকদার সভা বর্জনের পর সংবাদ সম্মেলন করেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। ছবি-বাংলানিউজ

ঢাকা: নিজের 'ব্যক্তিগত' পর্যালোচনার বিষয় ৩৬তম কমিশন সভার এজেন্ডায় অন্তর্ভূক্ত না হওয়ায় 'অপমানিত' হয়েছেন। যে কারণে সকাল ১১টায় বৈঠকে অংশ নেওয়ার ১০ মিনিটের মাথায় নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে তা বর্জন করেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

সোমবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে নির্বাচন ভবনে তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তিনমাসব্যাপী রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, নারী নেত্রী, গণমাধ্যম, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সংলাপ করে নির্বাচন কমিশন। যে সংলাপ ছিল একতরফা সংলাপ।

যেখানে কমিশন কেবল তাদের বক্তব্য শুনেছে। সংলাপে কোনো বক্তব্য দেয়নি কমিশন। সংলাপে উঠে আসা বিষয়গুলো নিয়ে কমিশনে আর কোনো আলাচনা হয়নি। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি পর্যালোচনা করে কেবল কমিশনে আলোচনা করতে চেয়েছিলাম।

তিনি বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশীদারমূলক ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে কতিপয় প্রস্তাবনা'-শিরোনামে আমি যা আলোচনা করতে চেয়েছিলাম, আমাকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সভায় তা উপস্থাপন করতে দেওয়া হয়নি। অথচ গত ৮ অক্টোবর ইসি সচিবালয় থেকে ইউওনোটের মাধ্যমে আমাকে আজকের সভায় তা উপস্থাপনার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু বৈঠকে আমাকে আমার প্রস্তাবনা উপস্থাপন করতে না দেওয়ায় আমি অপমানিত হয়েছি।

বাক প্রকাশের স্বাধীনতা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধান প্রদত্ত আমার মৌলিক অধিকার। নির্বাচন কমিশন কোনোভাবেই আমার এ অধিকার খর্ব করতে পারে না। এ অবস্থায় অনুন্যোপায় হয়ে আমি নির্বাচন কমিশনের এ রকম সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছি এবং এর প্রতিবাদস্বরূপ নির্বাচন কমিশনের সভা বর্জন করেছি, যোগ করেন মাহবুব।

নির্বাচনী দায়িত্বে সেনাবাহিনীর কার্যপরিধি নির্ধারণ, সবার জন্য সমান ‍সুযোগ রেখে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন, ভোটে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা, ইসির সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সরকারের সঙ্গে সংলাপ নিয়ে বক্তব্য দিতে চেয়েছিলেন মাহবুব তালুকদার।

সেনা মোতায়েনের বিষয়ে মাহবুব তালুকদার তার প্রস্তাবনায় বলেন, আগের নির্বাচনগুলোতে সেনাবাহিনীর মূল্যায়ন করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কীভাবে তাদের ব্যবহার করা যায়, তা ঠিক করতে হবে।  

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বিষয়ে বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে নির্বাচনে অনিয়মের পথ বন্ধ হয়। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ না হলে তা গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশকে সমর্থন করে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশন দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে আলোচনা করতে পারে।

নির্বাচনে নিরপেক্ষতা বিষয়ে তিনি প্রস্তাবনায় উল্লেখ করেন, নির্বাচনে নিরপেক্ষতা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ওপর নির্ভর করে। নির্বাচনের সময় সংসদ সদস্যদের নিষ্ক্রিয় রাখা নির্বাচন কমিশনের একার ওপর নির্ভর করে না। এতে সরকারের সহযোগিতা দরকার হয়।

ইসির সক্ষমতা বৃদ্ধি বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের যথেষ্ট ক্ষমতা আছে। কিন্তু ক্ষমতা প্রয়োগে সীমাদ্ধতাও আছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে, রাজনৈতিক বাস্তবতায় কমিশন ক্ষমতা প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ওপর খুব একটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে না। ক্ষমতা প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কীভাবে আরও নিয়ন্ত্রণাধীন করা যায়, তা দেখা উচিত।

সরকারের সঙ্গে সংলাপ বিষয়ে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার নির্বাচন কমিশনের বড় অংশীজন। সংলাপে দেখা যায়, কিছু বিষয় রাজনৈতিক বা সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। এসব বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সংলাপ আবশ্যক।

গত ৩০ আগস্ট নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারের বিরোধিতা করে প্রথমবারের মতো কমিশন সভা বর্জন করেছিলেন মাহবুব তালুকদার।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৮
ইইউডি/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।